মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শানিত করার দীপ্ত অঙ্গীকারের মধ্যে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা বরণ করে নিল ইংরেজি নববর্ষ ২০১৬। যুক্তরাষ্ট্রে বর্ষবরণের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানটি হয় নিউইয়র্ক সিটির টাইমস স্কোয়ারে। ৬ হাজার গোয়েন্দাসহ ১২ সহস্রাধিক পুলিশের কঠোর নজরদারির মধ্যে ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয়ে নতুন বছরের প্রথম প্রহর অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় ১০ লক্ষাধিক আমেরিকানের উল্লাসের মধ্য দিয়ে নতুন বছরের সূচক ১১৮৭৫ পাউন্ডের ক্রিস্টাল বল পতন ঘটিয়ে নববর্ষকে স্বাগত জানানো হয়। গত ১১১ বছর ধরেই টাইমস স্কোয়ারে এ উৎসব হয়ে আসছে। অন্যান্য বছরের মত এবারও বিপলসংখ্যক বাংলাদেশি ছিলেন বর্ষবরণের এ মহোৎসবে। অনেকের হাতে ছিল লাল-সবুজের পতাকা।
বর্ষবরনের এই মহাউৎসব থেকে বাদ যায়নি ওয়াশিংটন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও। ওয়াশিংটনের অদুরে ভার্জিনিয়ারি স্প্রিংফিল্ডস্থ হলিডে ইন এক্সপ্রেস বলরুমে সাংস্কৃতিক সংগঠন ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামেলির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বর্ষবরনের সবচাইতে বড় উৎসব। সন্ধ্যা হতেই নানা রঙে নানা সাজে বৃহত্তর ওয়াশিংটন প্রবাসী বাংলাদেশীরা সপরিবারে হাজির হতে থাকেন বর্ষবরনের এই মহা উৎসবে। নাচ গান খাওয়া দাওয়া আর ডিজে মিউজিকের তালেতালে ওয়াশিংটন প্রবাসীরা বরণ করে নেয় ইংরেজী নববর্ষ ২০১৬।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের মাঝে সান্ধ্যকালীন নাস্তা পরিবেশন করা হয়। সন্ধ্যা ৯ ঘটিকার সময় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে উৎপল বড়–য়া, কালাচাঁদ সরকার, সীমা খান, দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে আকীব ও তার দল, কবিতা আবৃতি করে ফাহমিদা হোসাইন, জোকত শোনান ভয়েস অব আমেরিকার বিশিষ্ট সাংবাদিক আনিস আহমেদ এবং ব্যান্ড সঙ্গীত পরিবেশন করে শিশির ও তার দল এবং বাউল গান পরিবেশ করেন মেট্র বাউল। এছাড়া অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদেরকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় মজার গেম শো।
অনুষ্ঠানে বিশেষ আকর্ষন হিসাবে সঙ্গীত পরিবেশন করে চ্যানেল আই সেরাকন্ঠ শিল্প বৃষ্টি। বৃষ্টির গানের তালেতালে অনুষ্ঠানে আগত দর্শকরা নেচে গেয়ে আনন্দ করেন। রাত ঠিক বারোটায় নিউইয়র্ক টাইম স্কয়ারের বলড্রপের সাথেসাথে অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা একে অন্যকে আলিঙ্গনের মাধ্যমে ২০১৬ সালকে বরণ করে নেয়। এর পর শুরু হয় ডিজে। ডিজে মিউজিকের তালে তালে অতিথিরা নতুন বছরকে স্বাত জানায়। অনুষ্ঠান চলে রাত ২ ঘটিকা পর্যন্ত।
ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামেলি আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সহযোগীতা করেন আনিস খান, ইনাম হক, মোস্তফা হোসাইন মুকুল, তমাল ঠাকুর, নাইম আহমেদ, করিম সালাউদ্দীন। এছাড়া অনুষ্ঠানের গ্রান্ড স্পন্সর হিসাবে সহযোগিতা করে ডাটা গ্রুপ। অনুষ্ঠানের শব্দ নিয়ন্ত্রনে ছিলেন শিশির, লাইট নিয়ন্ত্রনে ছিলেন প্রান্তীক, কীবোর্ডে সৌমি এবং তবলায় সঙ্গত করেন আশীষ বড়–য়া। অনুষ্ঠান শেষে ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামেলির আবু রুমি ও আকতার হোসাইন আগামী বছর আবারো বর্ষরন উৎসব পালনের ঘোষনা দেন। এছাড়া ওয়াশিংটনের বিভিন্ন স্থানে এবং ঘরোয়া ভাঊের প্রবাসীরা বর্ষবরন উৎসব পালন করেন।
এদিকে নিউইয়র্কের টাইম স্কয়াওে এবারের ক্রিস্টাল বল ছিল একেবারেই আলাদা। ২৬৮৮ স্পার্কিং ক্রিস্টাল বলের সাথে নতুন ২৮৮টি ওয়াটারফোর্ড ক্রিস্টাল ট্রাইএঙ্গেল প্যানেল স্থাপন করা হয় এই বলের ঔজ্জ্বল্য আরো তীব্র করার জন্যে। এরফলে বিশাল জনগোষ্ঠির সকলের দৃষ্টিতেই সমভাবে ধরা পড়ে বলের সৌন্দর্য-লীলা। এবারের ডিজাইনকে সকলে ‘অলৌকিক এক উদ্ভাবন’ হিসেবে অভিহিত করছেন।
আয়োজকরা দাবি করেন, টাইমস স্কোয়ারে ১০ লক্ষাধিক উপস্থিত হওয়ার পাশাপাশি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে সারাবিশ্বের বিলিয়নেরও অধিক মানুষ চোখ ধাধানো এই অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। ১২ ফুট ব্যাসার্ধের এই দৃষ্টিনন্দন বলের ওজন ছিল ১১৮৭৫ পাউন্ড। ওজনের ক্ষেত্রেও অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এটি এমনভাবে তৈরী করা হয়েছে যে, যে কোন ধরনের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াতেও তার আলোক-বিচ্ছুরণে সমস্যা হতো না এবং ৬০ সেকেন্ডে তা ৭০ ফুট ওপর থেকে মাটিতে নিচে অর্থাৎ স্টেজে নামে। ৩/৮ ইঞ্চি পুরো এবং ৪.৭৫ ইঞ্চি থেকে ৫.৭৫ ইঞ্চি দীর্ঘ একেকটি ক্রিস্টালের ওজন ছিল ৬.৮ পাউন্ড করে। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে বোতাম টিপে বল পতনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অধ্যায়ের সূচনা ঘটান এবং গণনার মধ্য দিয়ে ঠিক ১২টায় ৩৬৬ দিনের নতুন বছর (লিপ ইয়ার)-কে আলিঙ্গন করেন সকলে।
বিডি-প্রতিদিন/ ০২ জানুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা