বাংলাদেশের জামালপুর জেলা সদরে জন্মগ্রহণকারী রশিদ মালিক এবং শৈশব ও যৌবন কাটান রাজধানী ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে। যুক্তরাষ্ট্রে আসেন ১৯৭৯ সালে। বাবা আবদুল ওয়াদুদ মালিক ছিলেন একজন আইনজীবী। আর মা মমতাজ মালিক রাজধানীর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর নিয়েছেন। সেই রশিদ মালিক লড়ছেন মার্কিন কংগ্রেসে। মনোনয়ন পেয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে। ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশি অধ্যুষিত আটলান্টা সংলগ্ন কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-৭ এর ব্যালটে তার নাম থাকবে। জয়ী হতে পারলে মার্কিন কংগ্রেসে তিনি হবেন প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান। আর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিসেবে হবেন দ্বিতীয়। প্রথমজন ছিলেন মিশিগানের কংগ্রেসম্যান হেনসেন ক্লার্ক। বিয়ানিবাজারের সন্তান মোজাফফর আলী হাসিমের পুত্র হেনসেন ক্লোর্কের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১১-২০১৩ সাল পর্যন্ত এক টার্ম দায়িত্ব পালন করেছেন মিশিগানের কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট ১৩ থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেসম্যান হিসেবে।
কঠোর পরিশ্রমী এবং নীরব সমাজকর্মী ড. রশিদ মালিক এর আগেও জর্জিয়া অঙ্গরাজ্য সিনেটে একই এলাকা থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন পেয়েছিলেন ২০১০ সালের নির্বাচনে। কিন্তু জয়ী হতে পারেননি। মূলধারার রাজনীতির গতি-প্রকৃতির আলোকে তিনি অত্যন্ত প্রত্যয়ী বিধায় এবার আরো উচ্চতর পদে প্রার্থী হয়েছেন অভিবাসী সমাজের অকুণ্ঠ সমর্থন প্রত্যাশা করছেন। তারই আলোকে ১ নভেম্বর মঙ্গলবার এসেছিলেন নিউইয়র্কে। রশিদ মালিকের নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহের এ অনুষ্ঠান হয় জ্যাকসন হাইটসের নান্দুস পার্টি হলে। বিশিষ্টজনেরা এতে অংশ নিয়ে রশিদ মালিককে জয়ী করতে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাংলাদেশি-আমেরিকানদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।
‘রশীদ মালিক আবির্ভূত হয়েছেন বাংলাদেশিদের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষার প্রতীক হিসেবে। অভিবাসী সমাজের মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্যই ড. মালিকের বিজয় জরুরী’-এ অভিমত পোষণ করেন ওই অনুষ্ঠানের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ও পিপল এন টেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিফ।
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও ই-লার্নিং এডুকেশনের উদ্ভাবক ড. বদরুল হুদা খান এ সময় বলেন, ‘ভাগ্য গড়ার এই দেশে এসে আমরা সকলেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে চলেছি। রশিদ মালিক তাদের থেকে একটু ভিন্ন। নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়েই থেমে থাকেননি। আটলান্টায় একটি ভোকেশনাল কলেজ স্থাপন করেছেন এবং ইতিমধ্যেই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে মার্কিন মুল্লুকে। রশিদ মালিক তার সেবামূলক কর্মকাণ্ডকে আরও বিস্তৃত করার অভিপ্রায়েই কংগ্রেসে লড়ছেন। বাংলাদেশি তথা অভিবাসী সমাজের কণ্ঠস্বর হিসেবে ক্যাপিটল হিলে রশিদ মালিকের মত একজন পরিশ্রমী মানুষের ভীষণ প্রয়োজন।’
তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানের আয়োজকদের অন্যতম হাসানুজ্জামান হাসান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনটি হচ্ছে ইতিহাস সৃষ্টির অন্যতম একটি অধ্যায়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম একজন নারীকে জয়ী করার মধ্য দিয়ে আমরা এ ইতিহাসের অংশ হতে যাচ্ছি। সেই সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠার সময়েই রশিদ মালিক আবির্ভূত হয়েছেন বাঙালিদের জন্য মার্কিন মুল্লুকে আরেকটি ইতিহাস রচনার অভিপ্রায়ে। এ সুযোগ আমাদের কাজে লাগিয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে তার বিজয় ত্বরান্বিত করতে হবে।
ডেমোক্রেটিক পার্টির সংগঠক ও ইউএস সুপ্রিম কোর্টের এটর্র্নী মঈন চৌধুরী বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পদে হিলারি ক্লিনটনকে ভোটদানের সময় অবশ্যই বাংলাদেশিদের পরীক্ষিত বন্ধু কংগ্রেসম্যানদেরকেও ভোট দিতে হবে। আর আটলান্টার সপ্তম কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট থেকে আমাদের সমর্থিত ড. রশিদ মালিককেও বিজয়ী করতে প্রবাসীদের একযোগে কাজ করতে হবে। কংগ্রেসে নিজেদের একজন থাকলে অনেক সুবিধা আদায় করা সম্ভব-যা প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের কল্যাণেও আসবে।’
সারা আমেরিকায় দক্ষিণ এশিয়ান-আমেরিকান শ্রমিকদের সমন্বয়ে গঠিত ‘এলায়েন্স অব সাউথ এশিয়াম-আমেরিকান লেবার’ তথা ‘এসাল’র প্রধান মাফ মিসবাহ বলেন, ‘আটলান্টায় বসবাসরত বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশিয়ানরা বড় একটি সুযোগ পেয়েছেন কংগ্রেসের অংশ হবার। আশা করি তারা তা হাতছাড়া করবেন না। প্রেসিডেন্ট পদে হিলারিকে ভোটদানের সময় অবশ্যই তারা যেন কংগ্রেসম্যান পদে রশিদ মালিককেও ভোট দেন।’ এটি সময়ের দাবি। রশিদ মালিক এবার কংগ্রেসম্যান হিসেবে জয়ী হতে পারলে পরবর্তী নির্বাচনে আরো অনেকেই উৎসাহিত হবেন।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আটলান্টা থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধা ও কম্যুনিটি লিডার আলী হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছি। অন্য সকল এলাকার বাংলাদেশিদের নৈতিক সমর্থন পেলে তার প্রভাব পড়বে ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে।’
বিডি-প্রতিদিন/০৩ নভেম্বর, ২০১৬/মাহবুব