২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের ওপর হামলার ঘটনা ৬৭ ভাগ বেড়েছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে সন্ত্রাসী হামলার পর এটি হচ্ছে সর্বাধিক সংখ্যক হেইট ক্রাইম। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে সামগ্রিক হেইট ক্রাইম বেড়েছে সাত ভাগ। বর্ণবাদী বিদ্বেষে ১৮ ব্যক্তির প্রাণ গেছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৩ নারী। সোমবার এফবিআই এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। আমেরিকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী ১৫ হাজার সংস্থা হেইট ক্রাইমের এসব তথ্য সংগ্রহে কাজ করেছে।
এফবিআই জানায়, গত বছর পুলিশের কাছে হেইট ক্রাইমের মোট ৫৮৫০টি রিপোর্ট হয়েছে। ২০১৪ সালে এ ধরনের অভিযোগ ছিল ৫৪৭৯টি। এর ৫৭ ভাগ ছিল বর্ণ, গোত্র অথবা জাতিগত বিদ্বেষের। আফ্রিকান-আমেরিকানদের ওপর হামলার হার ছিল ৫৩ ভাগ। অশ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে হামলার হার ছিল ১৯ ভাগ। সবচেয়ে বেশি ধর্মীয় ও বর্ণ বিদ্বেষমূলক হামলার ঘটনা ঘটেছে ক্যালিফোর্নিয়ায়, ৮৩৭টি। দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে নিউইয়র্ক, ৫০০টি। তৃতীয় স্থানে ওহাইয়ো, ৪১৭টি।
এফবিআইয়ের তথ্য অনুয়ায়ী, ২০১৪ সালে সারা আমেরিকায় মুসলমানের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল ১৫৪টি। গত বছর তা বেড়ে ২৫৭ হয়েছে। এসব হামলায় হতাহত হয়েছেন ৩০০ জনের বেশি।
মুসলিম আমেরিকানদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স’ এর মুখপাত্র ইব্রাহিম হুপার বলেছেন, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কর্তৃক ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে আক্রমণাত্মক বক্তব্য-বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর মুসলিম আমেরিকানদের ওপর আক্রমণের ঘটনা চরমে উঠে। এর বাইরেও কিছু ঘটনা রয়েছে, যেগুলো হয়তো এফবিআই কিংবা অন্য কোন কর্তৃপক্ষের গোচরে আনা হয়নি।
৮ নভেম্বর নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয়ের পর বেশ কয়েকবার হামলার ঘটনা ঘটেছে মুসলমানদের ওপর। নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সের এক বাংলাদেশি কলেজ-ছাত্রী ফারিহা নিজাম (১৯) হিজাব পরে বাসে যাবার সময় এক শ্বেতাঙ্গ দম্পতির আক্রমণের শিকার হন। ওরা তাকে হিজাব খুলে ফেলতে নির্দেশ দেন। চিৎকার করে গালমন্দ করেন। এ ঘটনা মূলধারার মিডিয়াতেও এসেছে। এধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ফ্লোরিডা, টেক্সাস, ভার্জিনিয়া, শিকাগো, লস অ্যাঞ্জেলেস, ফিলাডেলফিয়া প্রভৃতি স্থানে ঘটেছে গত ৪/৫ দিনে।
সাউথ এশিয়ান ফান্ড ফর এডুকেশন, স্কলারশিপ এ্যান্ড ট্রেনিং নামক একটি অলাভজনক সংস্থার প্রধান মাজেদা উদ্দিন বলেন, ফারিহা নিজামসহ অন্য মুসলমানদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে হবে সমস্বরে। ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের আগেই যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তার কতটা অবনতি ঘটবে ২০ জানুয়ারির পর, সেটি ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে। এক্ষুণি যদি সকলে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারি, তাহলে আরো ভয়ংকর পরিস্থিতির শিকার হতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/১৫ নভেম্বর, ২০১৬/ফারজানা