‘আমার সোনার বাংলা’ বাজবে অথবা সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হবে আর কারো চোখে জল আসবে না, তাই কি হয় না কি! আর তা যদি হয় দূর প্রবাসের একটি ছোট্ট শহরে, অন্টারিওর লন্ডন শহরের ততোধিক ছোট্ট একটি বাঙালি জনগোষ্ঠির উদ্যোগে। কি আবেগ, কি গভীর ভালোবাসা, হাহাকার আর আনন্দ নিয়ে মানুষগুলো দেশকে মনে করতে পারে পরম মমতায়!
পেছনে জ্বলজ্বল করতে থাকা বাংলাদেশের পতাকা, স্মৃতিসৌধের ছবি তার সামনে প্রবাসের ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাগুলো, যাদের জন্ম আর বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের বাইরে তারাও কোন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় আবেগ আর লাজুকতায় মঞ্চে উঠে উচ্চারণ করেছে বাঙলা কবিতা, গান, আর বাজিয়েছে পিয়ানো। বাংলাদেশ তাদেরও দেশ, তাদের শেকড়। হ্যাঁ, শুদ্ধতম উচ্চারণ হয়তো হয়নি, সুর হয়তো সুরে লাগেনি শতভাগ, কিন্তু শুদ্ধতম আবেগ আর ভালোবাসা ছিলো নি:সন্দেহে! চোখে জলের রেখা টেনে এনে এনে বড়রা সমবেতকণ্ঠে গেয়েছেন দেশের গান। দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য, হৃদয়ের আকুতি নিবেদনের জন্য আর কি অর্ঘ্য নিবেদিত হতে পারতো তুষারে ছাওয়া হাজার হাজার মাইল দূরের এই এক চিলতে জনপদে বিজয়ের এই দিনে!
গত ১৬ ডিসেম্বর ৫৯ বেরিডেল, লন্ডন-অন্টারিওতে এই প্রথমবারের মতো উদযাপিত হলো বিজয় দিবস। মাইনাস বিশ ডিগ্রী তাপমাত্রা আর তুষার ঝড়ের রাতে চল্লিশ জন বাঙালি একত্র হয়েছিলেন আনন্দ আর অশ্রু ভাগাভাগি করে নিতে। বিস্ময় নিয়ে লক্ষ্য করেছি, প্রবাসে বেড়ে ওঠা শিশু-কিশোর-কিশোরীরা কোন হ্যামিলনের বাঁশির টানে কে জানে, পুরো আয়োজনেই একগ্রতা নিয়ে অংশগ্রহণ করেছে। বড়দের এই গভীর শ্রদ্ধার জায়গাটিকে তারা সম্মান করেছে, নিজেরা অংশগ্রহণ করে তাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেছে, লাল সবুজের সাজে নিজেকে সাজিয়েছে। বাংলাদেশ বিষয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উচ্চারণ করেছে, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বরের ইতিহাসটুকু ইন্টারনেট ঘেঁটে উদ্ধার করে তৈরি হয়েই অনুষ্ঠানে এসেছে। এটা কি গর্ব করার বিষয় নয়!
বাংলাদেশ বিষয়ক কুইজ দিয়ে শুরু হওয়া এ আয়োজনের সমাপ্তি পর্বে ছিলো সমবেত দেশাত্মবোধক গান - 'জন্ম আমার ধন্য হল মাগো', 'ও আমার দেশের মাটি', 'ধন ধান্য পুষ্প ভরা' এবং সবশেষে জাতীয় সঙ্গীত 'আমার সোনার বাংলা' পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় লন্ডন শহরে প্রথমবারের মতো আয়োজিত বিজয় দিবসের আয়োজন।
কাজী আফজাল আহমেদ কপিল-এর সামগ্রিক তত্তাবধানে অনুষ্ঠানে ছোটদের মধ্যে অংশ নেন তাহসান, রোদেলা, সাবিন, তাসফিন, অরিত্র, নাভিদ, স্পন্দন, জুহাইনা, ফারহান, মৃদুলা, নেহা। ছোটদের এই পর্বটি উপস্থাপন করেছে অরিত্র কাজী। তানিয়া রুবাইয়াতের উপস্থাপনায় বড়দের পর্বে অংশ নিয়েছেন শফিউর রহমান, কাজী রায়হান উদ্দিন, সালেহা ইসলাম, কাজী আফজাল আহমেদ কপিল, ইশরাত লতা, পারভীন আক্তার পুনা, তানিয়া রুবাইয়াত।
মধ্যরাত পর্যন্ত দেশপ্রেম আর আবেগে ভাসতে ভাসতে লন্ডন অন্টারিওর প্রবাসী বাংলাদেশিরা এভাবেই সূচনা করেছে বিজয় দিবস উদযাপনের।
বিডি প্রতিদিন/২২ ডিসেম্বর ২০১৬/হিমেল