ঘোষণা করা হয়েছে সৌদি আরবের ২০১৭ সালের জাতীয় বাজেট। এতে ঘাটতি কমলেও প্রবাসীদের জন্য রয়েছে দুঃসংবাদ। ২০১৭ সালের বাজেটে ৩ বছর মেয়াদী দুই ধরনের মাসিক ফি আরোপ করা হয়েছে।
বর্তমানে একজন বিদেশি নাগরিকের ইকামা (রেসিডেন্ট পারমিট) নবায়ন করতে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানকে বার্ষিক প্রায় ৩৬০০রিয়াল ২০২০সালে সেটার পরিমাণ দাঁড়াবে ১০,৫০০রিয়াল। আর এই পরিস্থিতিতে কোম্পানীর খরচ বাচাতে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করে দিতে পারে।
২০১৭ সালের জুলাই থেকে মাসিক সর্বনিন্ম ১০০রিয়াল থেকে শুরু হয়ে ২০২০সাল এর পরিমাণ দাঁড়াবে সর্বোচ্চ ৮০০রিয়াল যা বার্ষিক বাংলাদেশি টাকায় ২ লাখের মতো। সৌদি আরবে এতোদিন পরিবার নিয়ে বসবাসকারীদের কোন ফি না থাকলেও ২০১৭সালের জুলাই মাস থেকে তাদেরকে প্রত্যেক সদস্যের মাথাপিছু মাসিক ফি দিতে হবে ১০০রিয়াল। আর এই ফি ক্রমান্নয়ে ২০১৮সালে ২০০রিয়াল, ২০১৯সালে ৩০০রিয়াল এবং ২০২০সালে ৪০০রিয়াল।
এদিকে প্রবাসী শ্রমিকদের বিপরীতে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানকে বর্তমানে মাসিক ২০০রিয়াল করে ফি দিতে হয় যেটা ২০২০সালে বেড়ে দাঁড়াবে ৮০০রিয়ালে।
প্রবাসীদের উপর আরোপ করা নতুন ফি নেয়া শুরু হবে ২০১৮সালের জানুয়ারী মাস থেকে। যেসব কোম্পানীতে কর্মরত বিদেশী শ্রমিকের সংখ্যা, কর্মরত সৌদি নাগরিকের সমান বা সৌদি নাগরিকের চেয়ে কম সেসব কোম্পানী ২০১৮ সালের জানুয়ারী মাস থেকে থেকে প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য ৩০০রিয়াল করে ফি দিতে হবে। যেসব কোম্পানীতে কর্মরত বিদেশী শ্রমিকের সংখ্যা সৌদি নাগরিকের চেয়ে বেশি, সেক্ষেত্রে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে মাসে প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য ৪০০রিয়াল করে ফি দিতে হবে।
যেসব কোম্পানীতে কর্মরত বিদেশী শ্রমিকের সংখ্যা, কর্মরত সৌদি নাগরিকের সমান বা সৌদি নাগরিকের চেয়ে কম ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য ৫০০ রিয়াল করে ফি দিতে হবে।
যেসব কোম্পানীতে কর্মরত বিদেশী শ্রমিকের সংখ্যা সৌদি নাগরিকের চেয়ে বেশি, সেক্ষেত্রে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে মাসে প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য ৬০০ রিয়াল করে ফি দিতে হবে।
যেসব কোম্পানীতে কর্মরত বিদেশী শ্রমিকের সংখ্যা, কর্মরত সৌদি নাগরিকের সমান বা সৌদি নাগরিকের চেয়ে কম ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য ৭০০ রিয়াল করে ফি দিতে হবে। যেসব কোম্পানীতে কর্মরত বিদেশী শ্রমিকের সংখ্যা সৌদি নাগরিকের চেয়ে বেশি,সেক্ষেত্রে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে মাসে প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য ৮০০ রিয়াল করে ফি দিতে হবে।
২০২০ সাল নাগাদ বাজেট ঘাটতি শুন্যের কোঠায় নিয়ে আসার জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি সরকার। আগামী বছর থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকেও আরো বেশি পরিমাণে ফি নেয়া হবে। দেশটিতে বিদেশী শ্রমিক নিয়োগ নিরুৎসাহিত করে সৌদি নাগরিকদের নিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য এই পদ্ধতি বেছে নেয়া হয়েছে।
তবে সৌদি অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-জাদান বলেছেন, গৃহকর্মে সাহায্যকারী শ্রমিক যেমন ড্রাইভার এবং ক্লিনাররা এই ফি থেকে মুক্ত থাকবেন। এই ফি শুধুমাত্র বাণিজ্যিক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। সৌদি নাগরিক বা সৌদি আরবে কর্মরত বিদেশীদের উপর কর আরোপের কথা নাকচ করে দিয়েছেন সৌদি অর্থমন্ত্রী।
টেলিকমসহ কিছু কিছু সেক্টরে প্রবাসীদের কাজ করার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর নতুন করে এই ফি নির্ধারণের ফলে ২০২০ সাল নাগাদ সৌদি আরবে প্রবাসীদের কাজের ক্ষেত্র একেবারে সংকুচিত হয়ে পড়বে।
যেসব প্রবাসী তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে রাখেন তারা বেকায়দায় পড়ে যাচ্ছেন। আবার প্রবাসী শ্রমিকের হিসাবে নিয়োগদাতা কোম্পানীর উপর ফি আরোপ করায় কোম্পানীগুলোও বিদেশী শ্রমিকদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। এর ফলে আগামী ৩ বছর পর গৃহকর্মী বা পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছাড়া অন্য কোন খাতে প্রবাসীদের কাজের সুযোগ আশঙ্কাজনকহারে কমে যাবে। এমন অবস্থায় সৌদি আরব প্রবাসীদের জন্য পছন্দের গন্তব্য নাও থাকতে পারে।