মার্কিন প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেসম্যানসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য প্রতিনিধিগণের সাথে সুর মিলিয়ে বিশ্বে সেরা পুলিশ বাহিনী তথা নিউইয়র্ক পুলিশের উপ-প্রধানও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বের প্রশংসা করলেন।
পুলিশের উপ-প্রধান চার্লস স্কোল প্রবাসীদের এক সমাবেশে বললেন, ‘শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যতম সফল নারী নেত্রী। তিনি নারী ক্ষমতায়নের প্রতিব’। তার মত বিশ্বনেতার গতিশীল নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।’ উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত নিউইয়র্ক পুলিশের এই অফিসার একইসাথে ব্রুকলীন সাউথ পেট্রল ব্রুরোর নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বও পালন করছেন।
২৫ জানুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কন্স্যুলেট ভবনের মিলনায়তনে ‘সাহসী ও বিচক্ষণতাপূর্ণ কাজে সারা আমেরিকায় আলোড়ন সৃষ্টিকারি’ বাংলাদেশি-আমেরিকান এক পুলিশ অফিসারকে সংবর্ধনা জ্ঞাপনের এই সমাবেশে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কমিশনার জেমস ও নীলের পক্ষে বক্তব্যকালে চার্লস স্কোল আরো বলেন, ‘৩৬ বছর বয়স্ক সাঈদ আলী দায়িত্ব পালনে যে অসীম সাহসিকতার স্বাক্ষর রেখেছেন, তার এই সিটির পুলিশ বাহিনীর ইমেজকে অনেক মহিমান্বিত করেছে। একইসাথে, এই সিটিকে সার্বিকভাবে শ্রেষ্ঠ একটি সিটিতে পরিণত করতে বাংলাদেশিদের কর্মনিষ্ঠারও প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। সাঈদ আলী হচ্ছেন নিউইয়র্ক পুলিশের হিরো।’ এ অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক পুলিশে ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত প্রথম বাংলাদেশি অফিসার খন্দকার আব্দুল্লাহ্কেও বাংলাদেশ কন্স্যুলেট থেকে সম্মান জানানো হয়। এই ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহকে নিউইয়র্ক পুলিশের রাইজিং স্টার হিসেবে অভিহিত করে উপ-প্রধান স্কোল বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ক্যাপ্টেন হিসেবে প্রথম বাংলাদেশি হলেও কর্মগুণে তিনি একটি নিউইয়র্ক পুলিশের নেতৃত্ব গ্রহণেও সক্ষম হবেন। কারণ, এ দেশে কর্মনিষ্ঠার মর্যাদা সব সময় দেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বড়দিনের প্রাক্কালে তথা ২২ ডিসেম্বর রাতে নিউইয়র্ক সিটির পাতাল ট্রেনের ইস্ট ব্রডওয়ে স্টেশনে এক যুবতীর শ্লীলতাহানীর চেষ্টা চালাচ্ছিল ৫ দুর্বৃত্ত। টহল পুলিশ হিসেবে সাঈদ আলী সোচ্চার হন নেশাগ্রস্ত ওই ৫ যুবককে এহেন দুষ্কর্ম থেকে নিবৃত্ত করতে। পাল্টা সাঈদের ওপরই ঝাপিয়ে পড়ার চেষ্টা করে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় সাঈদ পিস্তল ব্যবহার না করে হাতে থাকা লাঠি দিয়ে ওদের দমাতে চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ওদেরকে লাথি দিয়ে স্টেশনের মেঝেতে ফেলে দেন। আর এ দৃশ্য সেলফোনে এক যাত্রী ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করলে সারা আমেরিকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো সাঈদ আলীর প্রশংসাকালে তার জন্মগ্রহণকারি দেশের নাম উল্লেখ করলে ঘটনাটির ব্যাপ্তি ব্যাপক আকার ধারণ করে। একজন মুসলিম অফিসার হিসেবে সাঈদ আলী ৫ দুর্বৃত্ত কর্তৃক আক্রান্ত হওয়া সত্বেও পিস্তল ব্যবহার করেননি আত্মরক্ষার্থেও। এ বিষয়টি সর্বস্তরে প্রশংসিত হয়। নিউইয়র্ক পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে বিশেষ সম্মান জানানো হয়েছে। ফেসবুকে পোস্ট করা ঐ সংক্ষিপ্ত ভিডিও ফুটেজটি ৫২ লাখ আমেরিকান দেখেছেন।
বাংলাদেশের এই অভিবাসীকে সম্মান জানানোর এ অনুষ্ঠানের মঞ্চে অদম্য বাংলাদেশ লেখা পোস্টারে ছিল শেখ হাসিনার অভিবাদনের একটি ছবি। সেই ছবি দেখিয়েই উপ-প্রধান চার্লস স্কোল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এসব অভিমত পোষণ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। রাষ্ট্রদূত মোমেন এ সময় বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাঙালিসহ সারাবিশ্বের সকল প্রবাসী বাঙালি সম্প্রদায়ের বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্ম ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ এবং সাঈদ আলীর সাফল্যে অনুপ্রাণীত হবে। তারা উভয়ে মেধা ও জ্ঞানের সৌকর্ষে উজ্জীবিত হয়ে বহির্বিশ্বে স্ব স্ব দেশ ও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।’ নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্র্রের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেশন এবং প্রশাসনে অনেক বাংলাদেশী বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করছেন।
অনুষ্ঠানের আয়োজক কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে দুই পুলিশ অফিসারকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘কন্স্যুলেটের এই মিলনায়তনে প্রতিদিন শতশত প্রবাসীসহ ভিনদেশীকে আমরা কন্স্যুলার সেবা দিয়ে থাকি। আজ এই ঘরেই এমন সফল দু’জন বাংলাদেশি আমেরিকানকে আমরা সম্মান জানালাম যারা শুধু আমেরিকারই নয় বাংলাদেশের জন্যেও সমান গর্বের। যদি আজ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বেঁচে থাকতেন, বাংলাদেশের অদম্য অগ্রযাত্রার পাশাপাশি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রবাসীদের এমন অব্যাহত সাফল্য দেখে নিশ্চয় মুগ্ধ হতেন।’
কন্সাল জেনারেল বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষভাবে মেধাবি বাঙালিদের সম্মান জানানোর এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশি অফিসারদের সংগঠন ‘বাংলাদেশি-আমেরিকান পুলিশ এসোসিয়েশন’ তথা বাপার সভাপতি সুজাত খান এবং সেক্রেটারি হুমায়ূন কবীরও ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন