ফেডারেল ক্রিমিনাল হিসেবে ৪০ মাস জেল খাটা এবং দুই মিলিয়ন ডলারের জরিমানা প্রদানকারি মো. আলমগীরকে নিউইয়র্কে টাউন হল মিটিংয়ের মঞ্চে বসানোয় কঠোর সমালোচনা হচ্ছে। গত শনিবার (২৬ জানুয়ারি) এ মিটিং হয়েছে নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকায় একটি পার্টি হলে।
ঢাকায় ‘এনআরবি ইঞ্জিনিয়ার কনভেনশন’র প্রস্তুতি আলোকে এ মিটিংয়ের মঞ্চে কেন ঐ ‘ফেডারেল ক্রিমিনাল’কে বসানো হয়েছিল-সে প্রশ্নও তুলেছেন সুধীজনরা। কারণ, অভিযুক্ত ব্যক্তি ইঞ্জিনিয়ার নন। কেবলমাত্র বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততাকে পুঁজি করে মঞ্চে বসে তিনি পুনরায় প্রবাসীদের সাথে প্রতারণার ফন্দি এঁটেছেন বলেও গুঞ্জন উঠেছে কমিউনিটিতে।
তিন শতাধিক প্রবাসীর কাছে থেকে প্রতারণামূলকভাবে বেশ কয়েক মিলিয়ন হাতিয়ে নেয়ার মামলাতে মোহাম্মদ আলমগীর নামক ব্যক্তিটি ২০০৪ সালের ২৩ এপ্রিল দোষ স্বীকার করেন। এরপর জেল-জরিমানা করেছিলেন ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত ফেডারেল কোর্ট। যুক্তরাষ্ট্র বিচার বিভাগ এবং এফবিআইয়ের আর্কাইভে সার্চ দিলেই ভেসে উঠে মোহাম্মদ আলমগীরের অপকর্মের সব তথ্য।
উল্লেখ্য, মার্কিন এটর্নী ছিলেন তিনি। পেশাগত অসদাচরণ, প্রতারণা, ধাপ্পাবাজির জন্য তার এটর্নীশিপের সার্টিফিকেটও কেড়ে নিয়েছে মার্কিন সরকার।
টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে বসবাসকারী আজাদুল হক এনআরবি কনভেনশনের উদ্যোক্তা। তার সাথে হোস্ট কমিটিতে এমন কয়েকজনকে রাখা হয়েছে যারা ইঞ্জিনিয়ার নন এবং প্রবাস ও বাংলাদেশে তারা নানাভাবে বিতর্কিত। আজাদুল হক কয়েক বছর আগে নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনুসের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছেন আমেরিকা ও বাংলাদেশে। উত্তর আমেরিকায় প্রবাসীদের মিলনমেলা হিসেবে পরিচিত ‘ফোবানা’র সেক্রেটারি থাকাকালে ২০১৪ সালে টেক্সাস ও বাংলাদেশে ড. মুহম্মদ ইউনূসের কর্মকান্ডের প্রবক্তা হিসেবে বেশ কটি ইভেন্টের আয়োজন করেন। যদিও এগুলোর সাথে ফোবানা নির্বাহী কমিটির কোন সম্পর্ক ছিল না। সেই একই আজাদুল হক অতি সম্প্রতি ‘এনআরবি কনভেনশন’র ঘোষণা দিয়েছেন। এর হোস্ট কমিটির আহবায়ক হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করলেও সদস্য সচিবসহ অন্য কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। কো-হোস্ট হিসেবে ‘বিটুবি’ (ব্রিজ টু বাংলাদেশ) নামক একটি সংগঠনের তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রবাসের অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশি-আমেরিকানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়াররা বাংলাদেশের কল্যাণে কিছু করতে আগ্রহী-এমন প্রত্যয়ে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ঢাকায় একটি অভিজাত হোটেলে ঐ সম্মেলন আহবান করা হয়েছে। সম্মেলনের হোস্ট কমিটির এই টাউন হল মিটিংয়ের মঞ্চে আরো ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা।
ফেডারেল ক্রিমিনালকে কথিত ঐ সম্মেলনের হোস্ট কমিটিতে (বিটুবি) রাখার তথ্য আগে জানলে এই দুই কূটনীতিকের একজনও সেখানে উপস্থিত হতেন না বলে জানা গেছে। আরো অভিযোগ উঠেছে, এনআরবি কনভেনশনের হোস্ট সংগঠন ‘বিটুবি’ (ব্রিজ টু বাংলাদেশ) কমিটিতে আরো কয়েকজন রয়েছেন যারা কখনো কমিউনিটির কল্যাণমূলক কোন কাজে অবদান রেখেছেন বলে কেউ জানেন না। ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেও তাদেরকে কেউ চেনেন না। তাই, ঘটা করে ঢাকায় সম্মেলন ডাকা এবং সেখানে বাংলাদেশের খ্যাতনামা কিছু ব্যক্তিকে জড়িত করার ঘটনায় নানা গুঞ্জন নিউইয়র্কসহ সমগ্র কমিউনিটিতে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল