সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের অভিপ্রায়ে ‘নতুন ফসল কাটার দিন’ আমেরিকায় ১৬২১ সালে শুরু হওয়া দিবসটি সময়ের পরিক্রমায় ‘ধন্যবাদজ্ঞাপন দিবস’ তে পরিণত হয়। বর্তমানে তা নভেম্বরের শেষ বৃহস্পতিবার নির্ধারিত হয়েছে। দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ‘ধন্যবাদজ্ঞাপন দিবস’ উপলক্ষে প্রবাসীরাও মেতেছিলেন টার্কিভোজনে। পারিবারিক, সামাজিক এবং ঘটা করে ব্যাপক আয়োজনেও দিবসটি উদযাপিত হয় প্রবাসীদের উদ্যোগেও।
আমেরিকায় পেশাজীবী সাংবাদিকদের সমন্বয়ে গঠিত ‘আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব’র উদ্যোগে এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারে বড় ধরনের ৪টি টার্কি কাটা হয়। পরস্পরকে ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা, সর্বোপরি পরম করুণাময়ের শুকরিয়া আদায়ের পর গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এ পর্বের শুভ সূচনা ঘটান কমিউনিটি লিডার মোহাম্মদ এন মজুমদার। সাথে ছিলেন সম্মানিত অতিথি হিসেবে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) নূর এলাহি মিনা, বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব:) মঞ্জুর আহমেদ, কণ্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায় এবং শহীদ হাসান, মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বারি, মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার চুন্নু, মুক্তিযোদ্ধা মিজান চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা সানাউল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা এম এ আওয়াল, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হোসেন এবং মূসা আহমেদ।
অতিথির মধ্যে আরও ছিলেন ডেমক্র্যাটিক পার্টির তৃণমূলের সংগঠক ফাহাদ সোলায়মান এবং ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার। বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলমহাস্ট, উডসাইড, ইস্ট এলমহার্স্ট এলাকা থেকে স্টেট এ্যাসেম্বলীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ জয় চৌধুরী এসেছিলেন সকলের আশীর্বাদ নিতে।
এ সময় সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, সেক্রেটারি শহীদুল ইসলাম এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট আকবর হায়দার কিরণ। ঘটা করে টার্কি কর্তনের আগে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগানিয়া সঙ্গীত পরিবেশন করেন কণ্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায় এবং শহীদ হাসান ছাড়াও প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী শাহ মাহবুব। গানে গানে পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্যদিয়ে ‘ধন্যবাদজ্ঞাপন দিবস’ মহিমান্বিত হয়ে উঠে গোটা কমিউনিটিতে। ক্লাবের কর্মকর্তাগণের মধ্যে আরও ছিলেন কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবুল কাশেম, যুগ্ম সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ, সাংগঠনিক সম্পাদক কানু দত্ত, প্রচার সম্পাদক শাহ ফারুক, নির্বাহী সদস্য শিব্বির আহমেদ, তপন চৌধুরী, নির্বাচন কমিশনার জাহেদ শরিফ প্রমুখ।
যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট হারুন ভূইয়া, কোষাধ্যক্ষ আলিম খান, প্রচার সম্পাদক শুভরায়, নারী পত্রিকার সম্পাদক পপি চৌধুরী, কমিউনিটি এ্যাক্টিভিস্ট মিনহাজ আহমেদ সাম্মু, নেক্সট ড্রিম এলএলসি’র সিইও খালেদ মাহমুদ, কেয়ার৩৬৫ এর মার্কেটিং ম্যানেজার নিলুফা শিরিন, জামালপুর জেলা সমিতির সাবেক সেক্রেটারি শাহীন খান, বাংলাদেশ সোসাইটির নেতা জিলানী, বাংলা চ্যানেল টিভির সিইও শাহ জে চৌধুরী, জেবিবিএর সেক্রেটারি কামরুজ্জামান কামরুল, বিজনেস এসোসিয়েশনের নেতা বিল্লাল চৌধুরীসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার প্রবাসীরা ছিলেন এ অনুষ্ঠানে।
এ দিবসের চেতনায় বাফেলোতে কন্স্যুলার সার্ভিস দেয় নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কন্স্যুলেট। ছুটির দিনটিকে প্রবাসীদের সেবায় কাজে লাগাতে পৌনে চারশত মাইল পথ মাড়িয়ে নিউইয়র্ক সিটি থেকে কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা ছুটে যান বাফেলোতে। বাংলাদেশিদের নতুন বসতি গড়ে উঠেছে এই বাফেলোতে। বর্তমানে হাজার দশেক প্রবাসী সেখানে বাস করছেন। পাসপোর্ট নবায়ন, এনভিআর, পাওয়ার অব এ্যাটর্নি প্রদানসহ বহুবিধ সার্ভিস প্রবাসীদের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্যে মাঝেমধ্যেই কন্সাল জেনারেলকে ভ্রাম্যমাণ কন্স্যুলার ক্যাম্প করতে হচ্ছে দূরবর্তী স্থানে। কন্সাল জেনারেল বলেন, প্রবাসীদের সান্নিধ্যে সেবা প্রদানের মধ্যেও ভিন্ন একটি তৃপ্তিবোধ করছি। ‘ধন্যবাদজ্ঞাপন দিবস’র চেতনায় আমি এ কাজে খুবই আনন্দ পাচ্ছি।
উল্লেখ্য, এ কন্স্যুলার সার্ভিসে প্রথমদিনই ২৫০ জনকে সেবা দেয়া হয়। কাউন্সিলর চৌধুরী পারভিন এবং ফার্স্ট সেক্রেটারি শামীম হোসেন ছিলেন কনসাল জেনারেলের সাথে। এ ক্যাম্প পরিচালনায় সহায়তা দেন বাফেলো সোসাইটির কর্মকর্তারা।
এদিকে, নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসে অস্বচ্ছল লোকজনের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয় কমিউনিটি লিডার মোহাম্মদ এন মজুমদারের নেতৃত্বাধীন মজুমদার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে। এলাকার কমিউনিটি বোর্ডের ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার উইলিয়াম রিভারা, খ্যাতনামা এটর্নি এইচ ব্রুস ফিশার, কমিউনিটি এ্যাক্টিভিস্ট ড. সারাহ, ড. নাহিদ খান, এ ইসলাম মামুন, আবুল খায়ের আকন্দ, নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মোজাফ্ফর হোসেনসহ মজুমদার ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরাও ছিলেন সেখানে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা