২৮ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার। লন্ডনের আকাশে মেঘের ঘনঘটা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির সন্ধ্যায় ব্রিটেনে বাংলা কবিতা আবৃত্তি আর গানের যুগলবন্দী! সেই সাথে ধোয়া উঠা চা আর চানাচুর! আর সেই কবি জুয়েল রাজ আর গানের শিল্পী জ্যোতি দেব টুম্পা যখন বাস্তব জীবনের যুগলবন্দি হিসেবে পরিচিতি পান তখন উপস্থিত সবাই একটু নড়েচডেই বসেন। আড্ডায় আড্ডায় মুগ্ধ হয়ে শোনেন কবিতা, আলোচনা আর গানের পরিবেশনা।
লন্ডনে হাস্ক ক্রিয়েটিভ স্পেইসে অনুষ্ঠিত হলো, কবি, সাংবাদিক জুয়েল রাজ এর প্রকাশিত গ্রন্থ, দূরের দূরবীন, ভুল চিঠির ডাকবাক্স ও বিশুদ্ধ হাহাকার গ্রন্থ তিনটির আবৃত্তি, পাঠ ও আড্ডা।
গ্রন্থগুলো নিয়ে আলোচনা করেন কবি শামীম আজাদ, কবি ময়নূর রহমান বাবুল, সাংবাদিক সাঈম চৌধুরী, ও ব্রিটেনে সফররত লেখক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অপূর্ব শর্মা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন আবৃত্তি শিল্পী মুনিরা পারভীন।
জুয়েল রাজ এর কবিতা আবৃত্তি করেন লন্ডনের আবৃত্তি শিল্পী মহুয়া চৌধুরী, সমোভা বিশ্বাস, সাবরিনা খান এনি, জিয়াউর রহমান সাকলাইন, শতরুপা চৌধুরী ও মুনিরা পারভীন। অনুষ্ঠানে জুয়েল রাজের লেখা ও সুর করা গান পরিবেশন করেন কবি পত্নী জ্যোতি দেব টুম্পা।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, জুয়েল রাজ সাংবাদিক এবং কলাম লেখক হিসেবেই সর্বজনীন পরিচিত। কিন্তু নীরবে নিভৃতে তিনি কাব্যচর্চা করে যাচ্ছেন। যা অনেকেরই জানা ছিল না। আজকের এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ভিন্ন এক জুয়েল রাজকে আমরা জানতে পারলাম।
কবি ময়নূর রহমান বলেন, জুয়েল রাজের কবিতার সাথে আমার পরিচয় ছিল না, ব্রিটেনের একজন তুখোড় সাংবাদিক হিসেবেই আমি জানি, যিনি খুঁড়ে খুঁড়ে অনেক তথ্য আমাদের সামনে হাজির করেন। কিন্তু তিনি যে কাব্যচর্চায় সমান পারদর্শী সেটি আমকে বিমোহিত করেছে। কবিতার ব্যাকারণ নয়, কবি যা বলতে চান, সেই বিষয়টি পাঠকের হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছানো খুব কঠিন, জুয়েল রাজের কবিতা সেই জায়গায় সফল। কারণ খুব সহজ সাবলীলভাবে তিনি কবিতা রচনা করেছেন, যা খুব সহজেই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন বলে আমি মনে করি।
জনমত পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সাঈম চৌধুরী বলেন, জুয়েল রাজ জনমত পত্রিকার নিয়মিত লেখক। নতুন প্রজন্মের একজন কলামিস্ট হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। অনেক পাঠকই তাঁর কলামের অপেক্ষায় থাকেন। তাঁর লেখা পড়লেই বুঝা যায় এটি জুয়েল রাজের কলাম, এক্ষেত্রে জুয়েল রাজ সফল বলা যায়। তাই তাঁর বিশ্বাস এবং মনন সম্পর্কে আমি ভালোই ওয়াকিবহাল। তিনি যা ধারণ করেন সেটাই লিখেন। কোন আপোষ কিংবা গোঁজামিল দেয়ার চেষ্টা করেন না।
বিলেতে সফররত, সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, অপূর্ব শর্মা বলেন, জুয়েল রাজের কলম মুক্তিযুদ্ধ এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের মূল নীতির সাথে কখনো আপোষ করে না। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার। তিনি নিজেকে এই ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ বলতে নারাজ। তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি প্রতিনিধিত্ব করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
কবি শামীম আজাদ বলেন, জুয়েল রাজ, রাজনীতি সচেতন, প্রতিবাদী সৃজনশীল তরুণ হিসেবে সব সময়ই আমার বিশেষ পছন্দের মানুষ, ব্রিটেনের সাহিত্য সংস্কৃতির সাথে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক। কিন্তু কবি হিসেবে যখন জুয়েল রাজকে আমি পাই, সে এক অন্য তরুণ, এক প্রেমিক কবিকে আবিষ্কার করি। আমি তার তিনটি বইয়ের নাম দিয়েছি প্রেম, দ্রোহ এবং বিশ্বাস। তার কলাম কিংবা কবিতায় বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত বিশ্বাসের জায়গাটিতে সে অনড়।
ব্যতিক্রম এই আয়োজনে যোগ দিয়েছিলেন ড. সেলিম জাহাম, জনমত সম্পাদক নবাব উদ্দীন, সাংবাদিক গবেষক ফারুক আহামেদ, সাংবাদিক মাহাবুব রহমান, কবি গোলাম কবির, সাংবাদিক রহমত আলী, সাংবাদিক বিশ্বদীপ দাস, আ স ম মাসুম, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সুভাষ দাশ, নার্গিস কবির, রেজাউল করিম মৃধা,আব্দুল হান্নানসহ বিলেতের অনেক কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব