প্রিয় মানুষটিকে কাছে পেয়ে পুরো দ্বীপ নেচে উঠলো। প্রাণে প্রাণ মিলিয়ে বরণ করা হলো সন্দ্বীপের সার্বিক উন্নয়নে নিরন্তরভাবে কর্মরত নিউইয়র্ক প্রবাসী আব্দুল কাদের মিয়াকে। দীর্ঘ দু’বছর পর নতুন বছরের উষালগ্নে চট্টগ্রাম হয়ে সন্দ্বীপে পদার্পণের পরই বুধবার (১ জানুয়ারি) দুই শতাধিক মোটরসাইকেলের বহর কাদের মিয়াকে স্বাগত জানিয়ে নিজ এলাকায় নিয়ে যায়। এ সময় রাস্তার দু’পাশে মানুষের কৌতুহলী দৃষ্টি অভিভূত করে সমাজসেবক, রাজনীতিক কাদের মিয়াকে।
দীর্ঘদিন যাবত সপরিবারে নিউইয়র্কে বাস করলেও কষ্টার্জিত অর্থের বড় একটি অংশ ব্যয় করছেন সন্দ্বীপের গরিব-মেহনতি-দুস্থ মানুষদের জন্যে। মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদানের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নেও তহবিল দিয়েছেন। গরিব পরিবারের সন্তানদের বিয়েও খরচও বহন করেন কাদের মিয়া।
কল্যাণমূলক এসব কাজের জন্য ২০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ‘আব্দুল কাদের মিয়া ফাউন্ডেশন’র ব্যানারে সন্দ্বীপে একদল মানুষ রয়েছেন যারা নিষ্ঠার সাথে সবকিছু সম্পাদন করেন। বার্ষিক গড়ে ১৫ হাজারের অধিক মানুষ নগদ অর্থ, রোজার সময়ে ইফতারি পণ্য, স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীরা পোশাক ইত্যাদি পেয়ে আসছেন এই ফাউন্ডেশন থেকে। তারই প্রতিদানের স্পষ্ট প্রকাশ ঘটলো কাদের মিয়ার সন্দ্বীপে উপস্থিতির পরই তার বাড়িতে হাজার হাজার নারী-পুরুষের সমাগম থেকে। সকলেই কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানাতে জড়ো হয়েছিলেন।
সন্দ্বীপ সফরের পর ৩ জানুয়ারি নিউইয়র্কে ফেরার পরদিন শনিবার (৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় কাদের মিয়া গণমাধ্যম কর্মীদের মুখোমুখী হন।
কাদের মিয়া ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের অন্যতম সহ-সভাপতি কাদের মিয়া বলেন, ঢাকায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে যোগদানের পর চট্টগ্রাম হয়ে সন্দ্বীপে যাই। সন্দ্বীপের মাটি স্পর্শ করার সময়েই দৃশ্যমান হলো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমগ্র জনপদে উন্নয়নের ছোঁয়া। সকলকেই প্রফুল্ল হাস্যরসে দেখার পাশাপাশি পথ চলতে দু’পাশে দেখলাম পাকা বাড়ি। গ্রাম থেকে গ্রাম সর্বত্র পাকা বাড়ি। যা কল্পনারও অতীত। বিভিন্ন বয়সী মানুষের মধ্যেই শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের প্রশংসা।
কাদের মিয়া বলেন, ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ এবং ফেরার সময়ে ন্যূনতম ঝক্কি-ঝামেলা দেখিনি। সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় দু’সপ্তাহের এ সফরের সময় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও কোনো গড়মিল পরিলক্ষিত হয়নি। এসবই আমাকে অভিভূত করেছে। এই স্বপ্ন নিয়েই তো প্রবাসীরা দিনাতিপাত করছিলেন।
কাছে পেয়ে দলমত-নির্বিশেষে সকলেই আশির্বাদ করেন, অনেকেই কাদের মিয়ার সাফল্য অব্যাহত রাখতে পরম করুণাময়ের কাছে দয়া প্রার্থনা করেন। সমবেত দুস্থদের মাঝে নিজ হাতে কিছু অর্থ বিতরণও করেছেন কাদের মিয়া। এরপর সন্দ্বীপ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে আট হাজারেরও অধিক মানুষের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আলহাজ আইয়ুব সওদাগরের সভাপতিত্বে এ সময় মঞ্চে ছিলেন সন্দ্বীপ পৌরসভার মেয়র জাফরউল্লাহ টিটু, প্রবাসী হাজী জাফরউল্লাহ, হাজী আব্দুল বাতেন, হাজী শফিকুল আলম প্রমুখ।
সেই সভার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন কাদের মিয়া বলেছেন, ‘আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আপনাদের কাছে থেকে যে ভালবাসা, স্নেহ পেলাম সেটি পরম পাওয়া। এর মধ্যদিয়েই সামনের দিনগুলোতেও আমার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সেবামূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘জাতিরজনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। তার এই চলার পথকে সুগম করতে আমার মত কাদের মিয়া সামান্য চেষ্টা করছি। এভাবে প্রতিটি প্রবাসী এবং বিত্তশালীরা যদি নিজ নিজ এলাকার জন্যে কাজ করেন তাহলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা রচনার প্রয়াস স্বল্প সময়েই বাস্তবায়িত হবে।’
‘আমেরিকায় প্রবাসীরা আজ ঐক্যবদ্ধ শেখ হাসিনার উন্নয়ন-অভিযাত্রায়। সন্দ্বীপের ঐতিহ্য আলোকে আপনারাও ঐক্যবদ্ধ থাকুন, তাহলে গোটা বাংলাদেশের ন্যায় এই দ্বীপের সামগ্রিক উন্নয়ন কেউই ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না’-উল্লেখ করেন কাদের মিয়া।
গণমাধ্যম কর্মীদের সন্দ্বীপ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনাকালে তার পাশে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার চুন্নু, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মোস্তফা কামাল পাশা মানিক প্রমুখ।
নিউইয়র্কে নির্মাণ ব্যবসায়ী কাদের মিয়া আরও বলেন, এলাকাবাসীর এমন আচরণে আমি অভিভূত এবং পরম করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন সেবামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাকিটা জীবন অব্যাহত রাখার সামর্থ্য দেন।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম