তেল, গ্যাসসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ায় বাইডেন প্রশাসনের ওপর বিরক্ত আমেরিকার স্থানীয় জনগণ। একটি বেসরকারি হিসেবে দেখা গেছে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গতবছরের তুলনায় এবছর শুধু অক্টোবর মাসেই ব্যয় বেড়েছে ১৬ শতাংশ। মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি দৈনন্দিন অর্থ ব্যয়ের এ অবস্থাকে অর্থনীতিবিদরা নানাভাবে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করছেন।
এদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধিতে বিরক্ত হলেও আমেরিকার নাগরিকরা সৌখিন সামগ্রী ক্রয় করছেন আগের মতোই। বরং ক্ষেত্র বিশেষ ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী বিক্রি বেড়েছে। অক্টোবর মাসে আগের মাসের তুলনায় বিক্রি বেড়েছে ১.৭%। গতকাল মঙ্গলবার এই তথ্য প্রকাশ করেছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
যদিও ওয়ালমার্ট এবং হোম ডিপো-সহ বড় বড় চেইন স্টোর মূল্যবৃদ্ধির ফায়দা পাচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এ দু’টি সংস্থা চলতি বছরের তৃতীয় কোয়ার্টারে আগের চেয়ে অধিক লাভবান হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর পথে এ অবস্থাকে অনেকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। আসন্ন থ্যাঙ্কসগীভিং উইকেন্ড উপলক্ষে খাদ্য-সামগ্রী, গ্যাস এবং অন্যান্য নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে সর্বত্র।
কলাম্বিয়া বিজনেস স্কুলের খুচরা বিক্রি সম্পর্কিত বিভাগের পরিচালক মার্ক গ্রীণ বলেছেন, নানাবিধ কারণে আমেরিকানরাও মূল্যবৃদ্ধিকে অবজ্ঞার সুযোগ পাচ্ছে না। কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে গত বছরের প্রায় পুরো সময়ই করোনার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ সারাবিশ্ব লকডাউনে থাকায় মানুষের অর্থ-খরচের সুযোগ একেবারেই সংকুচিত হয়ে পড়েছিল। অর্থাৎ কিছুটা হলেও সঞ্চয় বেড়েছে। তাই এখন মূল্যবৃদ্ধিকে কেউই তেমন আমলে নিতে চাচ্ছেন না। বন্দিত্ব থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ক্ষেত্রে অনেকেই অর্থ ব্যয়ে দ্বিধা করছেন না।
দৈনন্দিন ব্যয়-নির্বাহের ওপর মনিটরিংয়ে নিয়োজিত একটি সংস্থা বলেছে, গত অক্টোবর মাসে আমেরিকানরা তেল, গ্যাস, খাদ্য-সামগ্রী এবং সৌখিন দ্রব্য ক্রয়ে মোট ব্যয় করেছে ৬৩৮.২ বিলিয়ন ডলার। যা আগের বছরের একই মাসের চেয়ে তা ১৬% বেড়েছে। মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি দৈনন্দিন অর্থ ব্যয়ের এ অবস্থাকে অর্থনীতিবিদরা নানাভাবে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করেছেন। পুরো বছর লকডাউনে থাকার পর অনেকেই চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিট পাচ্ছেন-এ বিষয়টিও মূল্যবৃদ্ধিকে গা সওয়া করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
কারণ, নিয়মিতভাবে চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিটের অর্থ সরাসরি অভিভাবকের একাউন্টে জমার ব্যবস্থা করেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। অর্থনীতিবিদরা উল্লেখ করেছেন, করোনা মহামারির ক্ষত কাটতে সময় লাগবে। এজন্যে এখনও অনেকেই স্থায়ী জিনিষপত্র ক্রয়ের চেয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। অনেকে রেস্টুরেন্টের চেয়ে বাসায় রান্না করে খাওয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বাড়তি খরচ পুষিয়ে নিতে। ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী বিক্রি সেপ্টেম্বরের চেয়ে অক্টোবরে বেড়েছে ৩.৮%।
অপরদিকে স্পোর্টিং গুডস, মিউজিক্যাল সামগ্রী এবং বই-পুস্তক ক্রয়ের প্রবণতা বেড়েছে মাত্র ১.৫%। রেস্টুরেন্ট এবং বারে ব্যয়ের হার একই অবস্থায় রয়েছে। ক্রেতা সাধারণ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন বলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জরিপে প্রকাশ পেয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর