বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিসহ ৮ লক্ষাধিক অভিবাসী নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচনে ভোটাধিকার পেলেন। নন-সিটিজেনরা যুক্তরাষ্ট্রের কোন পর্যায়ের (ভারমন্ট এবং ম্যারিল্যান্ড স্টেটের কয়েকটি সিটি বাদে) নির্বাচনে ভোটাকিার পান না। নিউইয়র্ক সিটির গ্রীণকার্ডধারী, ওয়ার্ক পারমিটধারী, ড্রিমার তথা ড্যাকা কর্মসূচির অন্তর্ভূক্তদের জন্যে শুধুমাত্র সিটি কাউন্সিলে ভোটাধিকারের এই বিল পাশ হলো। অর্থাৎ তারা ফেডারেল অথবা স্টেট পার্লামেন্টের ভোটে শরিক হতে পারবেন না। সিটি কাউন্সিলে ভোটাধিকার পাওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে নীতি-নির্দ্ধারণে নন-সিটিজেনরাও মতামত প্রকাশের অধিকার পেলেন। আর এজন্যে দীর্ঘ আন্দোলনে শুরু থেকেই সক্রিয় ভূমিকা পালনকারি ‘ড্রাম’র (দেশীজ রাইজিং আপ এ্যান্ড মুভিং) সংগঠকরাও উৎফুল্ল।
বিশ্বের রাজধানী খ্যাত এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে ঐতিহাসিক এই বিলটি পাশ হলো ৯ ডিসেম্বর ৩৩-১৪ ভোটে। ডেমক্র্যাটিক পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় এ বিলটি আগেও পাশ হয়েছিল। তবে সিটি মেয়র (ডেমক্র্যাট) সাপোর্ট না দেয়ায় তা আইনে পরিণত হতে পারেনি। এবাওে অবশ্য মেয়র সম্মতি দিয়েছেন। সিটি কাউন্সিলের স্পিকারের সম্মতি থাকায় ৩০ দিনের মধ্যে সিটি মেয়র যদি স্বাক্ষর না-ও দেন তাহলে তা আপনা-আপনি আইনে পরিণত হবে। অভিবাসী সমাজের স্বার্থে কর্মরত ৩৫ সংগঠনের এক দশকেরও অধিক সময়ের লাগাতার তদ্বির-দেন-দরবার আর গণস্বাক্ষর অভিযানের এই ফসলকে বরণ করতে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় সিটি হলের সামনে জড়ো হন অনেকে। সিটি কাউন্সিলম্যানরাও এ উৎসবে কথা বলেছেন। এই বিধির সুবিধা পাবেন গ্রীণকার্ডধারী, ওয়ার্ক পারমিটধারী, ড্রিমার এবং টিপিএস কর্মসূচির অধীনে থাকা প্রাপ্ত বয়স্ক ৮ লক্ষাধিক নন-সিটিজেন। ৩০ দিন আগে থেকে যারা এই সিটিতে বাস করছেন তারাই সামনের সিটি নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রদানে সক্ষম হবেন। এই বিধি হওয়ায় কতজন বাংলাদেশি ভোটাধিকার পাবেন তার সঠিক তথ্য এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানালেন আন্দোলনের শুরু থেকে সোচ্চার কাজী ফৌজিয়া। অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত ‘দেশীজ রাইজিং আপ এ্যান্ড মুভিং’ (ড্রাম) এর প্রধান সংগঠক কাজী ফৌজিয়া বললেন, আমি নিজেও গ্রীণকার্ডধারী। সকল নির্বাচনে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছি, অভিবাসীগণের কল্যাণে বদ্ধ পরিকর প্রার্থীগণকে ব্যালট যুদ্ধে বিজয়ের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছি। কিন্তু সিটিজেনশিপ না থাকায় নিজে ব্যালট পাইনি। এখন সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটলো।
এক সময় যুক্তরাষ্ট্রে ভোটাধিকার পেতে অনেক রক্ত ঝরিয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গরা, নারী সম্প্রদায়ের কর্মীরা। সে আন্দোলনের সাফল্যের পথ বেয়েই নিউইয়র্ক সিটির নন-সিটিজেনদের ভোটাধিকার আদায় করা সম্ভব হলো-বলেন বাংলাদেশি অভিবাসী কাজী ফৌজিয়া। তিনি বলেন, এ আন্দোলনের সূচনা ঘটে ২০১১ সালে, জ্যাকসন হাইটস এলাকার সিটি কাউন্সিলম্যান ডেনিয়েল ড্রোম ছিলেন নেতৃত্বে। সে সময় আমরা সিটির অধিবাসী হয়েও নীতি-নির্ধারণে কেন অংশ নিতে পারবো না, নাগরিক অধিকার পুরোপুরি ভোগ করতে হলে সিটি মেয়রসহ সকল পর্যায়ে প্রতিনিধি নির্বাচনে ভূমিকা রাখা জরুরী ইত্যাদি প্রসঙ্গে জনমত সংগঠিত করার সপ্তাহব্যাপি ক্যাম্পেইন করেছি। রাস্তায়, দোকানে ঘুরেছি এবং স্বাক্ষরও সংগ্রহ করেছি নন-সিটিজেনদের আওয়াজ জোরালো করতে। এর জের ধরে ২০১৩ সালে কাউন্সিলম্যান ড্রোম সিটি কাউন্সিলে বিল উত্থাপন করেছিলেন। এর দু’বছর পর ‘আই ভোট নিউইয়র্ক’ শীর্ষক আরেকটি বিল উঠেছিল। এরপর ২০১৭ সালে তা পাশ হলেও সিটি মেয়রের অনুমোদন পায়নি। সর্বশেষ ১৮৬৭ নম্বরের এই বিলটি ‘আওয়ার সিটি আওয়ার ভোট’ শিরোনামে পাশ হওয়ায় সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো আপত্তি দেবেন না বলে জানিয়েছেন। এরফলে সামনে সিটি মেয়র, পাবলিক এডভোকেট, সিটি কম্পট্রোলার এবং কাউন্সিলম্যান সহ সিটির নয়া আইনের জন্যে প্রয়োজনীয় ভোটে অংশ নিতে সক্ষম হবেন অন্তত: ৩০ দিন আগে থেকে এই সিটির বাসিন্দারা।
এ প্রসঙ্গে কাজী ফৌজিয়া জানান, ৩৫টি সংগঠন আন্দোলনে ছিলাম। এটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্যেও বড় ধরনের একটি বিজয় বলে মনে করছি। কারণ, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারিদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ হাজার জন রয়েছেন নিউইয়র্ক সিটিতে। এরা ওয়ার্ক পারমিট পেয়েছেন অর্থাৎ তারাও ভোটাধিকার পেলেন। এর বাইরে অনেকেই আছেন গ্রীণকার্ডধারী অথবা নানা প্রোগ্রামে ওয়ার্ক পারমিটধারী। সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি এখনও তবে সিটি মেয়রের অভিবাসন সম্পর্কিত দফতরের ধারণা, ৮ লাখ ৮ হাজার অভিবাসীর শীর্ষে রয়েছে ডমিনিকান-১৩০০০, চায়নিজ-১১৭৫০০। তৃতীয় শীর্ষে রয়েছি আমরা বাংলাদেশিরা। সে আলোকে আমাদেরও বড় একটি বিজয় অর্জিত হলো সেটি যেমন একটি দিক, আরেকদিকে নন-সিটিজেনদের ভোটাধিকার পাবার পথ-পরিক্রমার ইতিহাসেরও অংশ হয়ে থাকবো আমরা।
উল্লেখ্য, এই ঐতিহাসিক বিলটি লিখেছেন ম্যানহাটানের কাউন্সিলম্যান ইয়াডেনিস রডরিগুয়েজ। বিজয় সমাবেশে তিনি সহযোগী সকল কাউন্সিলম্যানের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন