উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশি-আমেরিকান ব্যবসায়ীগণের সর্ববৃহৎ সংগঠন ‘জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস এসোসিয়েশন অব এনওয়াই’(জেবিবিএ)র নির্বাচন ৯ জানুয়ারি নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে অনুষ্ঠিত হবে। ৪২০ ভোটারের নির্বাচনে মেশিনে ভোটগ্রহণ করা হবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। ১৫ আসনে লড়ছেন সরাসরি দুই প্যানেলের ৩০ প্রার্থী।
এক প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন গিয়াস আহমেদ এবং তারেক হাসান খান। অপর প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাহবুবুর রহমান টুকু এবং মুনির হোসেন। অর্থাৎ ব্যবসায়ীগণের এই সংস্থার নেতৃত্ব পেতে এবারই প্রতিযোগিতামূলকভাবে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন অনেকে। নাম সর্বস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বও রয়েছে সে তালিকায়। তবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ এ ভূইয়া জানিয়েছেন, আমরা ব্যবসার লাইসেন্স, ব্যাঙ্ক একাউন্ট এবং অফিস পরিদর্শন করেই তালিকাটি চূড়ান্ত করেছি।
এদিকে, সভাপতি পদে দুই প্রার্থী অঙ্গিকার করছেন জ্যাকসন হাইটসকে আবর্জনা মুক্ত এবং পার্কিং ঝামেলা মুক্ত করতে। ব্যবসায়ী এবং ক্রেতা সাধারণের স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তারা কার্পণ্য করবেন না বলে পৃথকভাবে এ সংবাদদাতাকে বলেছেন।
এক প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মূলধারার রাজনীতিক এবং বিএনপি নেতা গিয়াস আহমেদ বলেন, ৭৩ ও ৭৪ স্ট্রিটসহ আশপাশে গার্বেজ ক্যান নেই। এটা বড় একটি সমস্যা। জেবিবিএর পোশাকসহ অন্তত: একজন ক্লিনার নিয়োগ করবো। সপ্তাহে অন্তত: একদিন ক্যান অপসারণের ব্যবস্থা করবো। জেবিবিএর পোশাকে অন্তত: দু’জন নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগ করবো। নিউইয়র্ক পুলিশের সাথে সমন্বয় ঘটিয়ে তারা কাজ করতে পারবেন এমন পদক্ষেপ নেব। জেবিবিএর সদস্যদের গ্রেফতারের আগে অবশ্যই জেবিবিএকে ইনফরম করতে হবে। অহেতুক কাউকে হয়রানি/হেনস্তা করতে দেব না।
গিয়াস উল্লেখ করেন, গত সপ্তাহে মামুলি কারণে এক ক্রেতার সাথে ব্যবসায়ীর ঝগড়ার জের হিসেবে এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জানামাত্র আমি ১১৫ পুলিশ প্রেসিঙ্কটে গিয়ে কমান্ডিং অফিসারের সাথে কথা বলেছি। ভবিষ্যতে তারা কোন ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের পূর্বাহ্নে জেবিবিএকে ইনফরম করবেন বলে অঙ্গিকার করেছেন। এজন্য আমরা বিজয়ী হলে স্থায়ী একটি অফিস নেব জেবিবিএর জন্য।
গিয়াস বলেন, কংগ্রেসম্যান, স্টেট এবং সিটি প্রশাসনের সাথে বিদ্যমান সম্পর্ককে কাজে লাগাবো জেবিবিএর স্বার্থে। ফেডারেল, স্টেট ও সিটিতে অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে জেবিবিএর মত সংগঠনের জন্যে, আমি জয়ী হলে সে অর্থ এনে জেবিবিএকে শক্তিশালী একটি সংস্থায় পরিণত করতে দ্বিধা করবো না। সভাপতি প্রার্থী গিয়াস আহমেদ আরো বললেন, জেবিবিএর কোন সদস্য মারা গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ১০ হাজার ডলার প্রদান করা হবে মৃত ব্যক্তির সৎকারের জন্যে। এরপর মরহুমের পরিবারের প্রয়োজন হলে অর্থ সহায়তার স্থায়ী একটি ব্যবস্থা করবো।
জেবিবিএর বিদায়ী কমিটির সেক্রেটারি এবং আসন্ন নির্বাচনে ‘টুকু-মুনির’ প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা মাহবুবুর রহমান টুকু বলেন, দিন যত যাচ্ছে কমিউনিটি তত সমৃদ্ধ হচ্ছে এবং আশপাশের স্টেট থেকেও অনেক ক্রেতা আসছেন জ্যাকসন হাইটসে পছন্দের পণ্য-সামগ্রি ক্রয়ের জন্যে। এই বিরাটসংখ্যক ক্রেতা প্রতিনিয়ত পার্কিং সমস্যায় পড়েন। এটি বহুদিনের। তার স্থায়ী সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ নেব। ফ্রি পার্কিং এবং সর্বোচ্চ দু’ঘণ্টার স্থলে ৫ ঘণ্টার পার্কিং মিটারের ব্যবস্থা করবো। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। ইতিপূর্বে জেবিবিএর সাংগঠনিক সম্পাদক এবং যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারি টুকু আরো উল্লেখ করেন, ব্যবসায়ী এবং ক্রেতা সাধারণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
জোরদারকল্পে স্থানীয় পুলিশ প্রেসিঙ্কটে যোগাযোগ রয়েছে। নতুন দায়িত্ব পেলে আরো জোরদার করবো সেই যোগাযোগ। টহল পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়ে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা এ এলাকা নিরাপদ রাখতে সাধ্যমত চেষ্টা করবো। কোন ক্রেতাই যেন নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগেন। একইসাথে জেবিবিএর নিজস্ব সিকিউরিটি টিম করা হবে, যারা টহল পুলিশের সমন্বয়ে অতন্দ্র প্রহরির ভূমিকা পালন করবেন।
বাংলাদেশী ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানসমূহের সম্মুখস্ত সড়কে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ হয়ে পড়ে। এহেন নাজুক অবস্থার অবসান ঘটিয়ে ক্লিন-সিটির পরিপূরক এলাকায় পরিণত করবেন বলে উল্লেখ করেন টুকু। তিনি বলেন, ব্যবসায়ী এবং ক্রেতা সাধারণের বহু পুরনো একটি দাবি রয়েছে মসজিদ নির্মাণের। বিজয়ী হতে পারলে স্থায়ী একটি মসজিদের ব্যবস্থা করবো অগ্রাধিকারভিত্তিতে। টুকুর বিশ্বাস ‘জেবিবিএকে কল্যাণমুখী সংগঠনে পরিণত করার স্বার্থেই আমার প্যানেলকে জয়ী করবেন ভোটাররা।’
২৬ ডিসেম্বর প্রার্থীগণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশন। এ কমিশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান হচ্ছেন মোতাম্মদ এ ভূইয়া। তার সাথে কমিশনার হিসেবে রয়েছেন জাফর মিতা, আবু হেলেন, বেলায়েত হোসেন।
উল্লেখ্য, প্রধান নির্বাচন কমিশনার আলাউদ্দিন ভুলু ব্যক্তিগত কারণে বাংলাদেশে যাওয়ায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ এ ভূইয়া। নির্বাচন কমিশন প্রদত্ত প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন ‘মোহাম্মদ গিয়াস -তারেক প্যানেলে’ সভাপতি গিয়াস আহমেদ, সহ -সভাপতি মোল্লা এম এ মাসুদ, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাসান জিলানী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তারেক এইচ খান, সহ সাধারন সম্পাদক এমডি মফিজুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক তারিকুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ এস এম আবুল হাসান, অফিস সেক্রেটারি এমডি জি রহমান (আকাশ রহমান), কালচারাল সেক্রেটারী জাফর উল্লাহ মিলন, পাবলিসিটি সেক্রেটারিঃ বেলাল আহমদ এবং নির্বাহী সদস্য রকি আলিয়ান, বর্নালী হাসান এমডি, খালেদ আকতার, আব্দুল আলিম এবং এস কিউ আলম।
অপরদিকে ‘টুকু -মুনির প্যানেল’র সভাপতি এমডি মাহবুবুর রহমান টুকু, সহ সভাপতি মোহাম্মদ সোলায়মান আলী, সহ সভাপতিঃ সুলতান আহমেদ, সাধারন সম্পাদক মুনির হাসান, সহ সাধারণ সম্পাদক এমডি এল ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক এমডি দেলওয়ার হোসেইন, কোষাধ্যক্ষ এমডি এস হোসেন, দপ্তর সম্পাদক রাম কে সাহা (অপু), প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ শাহিন ভূঁইয়া, কালচারাল সম্পাদক শেখ এইচ আলী এবং নির্বাহী সদস্য পদে শামীম মনির, নজরুল আই মিয়া, জহিরুল ইসলাম জয়, মাসুদ আহমেদ এবং আব্দুল হাই।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন