গরীব ও উন্নয়নশীল বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৭০% কে করোনার টিকা বিনামূল্যে প্রদানের উচ্চাভিলাসী মার্কিন পরিকল্পনাটি মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই মহতি পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন টিকা আবিষ্কৃত হবার পরই। ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএস এইড)’র মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত টিকা ক্রয় করে গত কয়েক মাসে কোটি কোটি টিকা সরাসরি অথবা কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে বিতরণ করা হয়েছে। এখাতে বরাদ্দকৃত ১.৯ বিলিয়ন ডলার ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। অথচ পরিকল্পনা অনুযায়ী বিশ্বের অনেক প্রান্তেই টিকা প্রেরণ করা সম্ভব হয়নি।
হোয়াইট হাউজ এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের সংশ্লিষ্ট সূত্র সোমবার জানায়, গত সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্টের প্রথম কোভিড-১৯ সামিটে জানানো হয়েছে যে, নিম্ন এবং মাঝারি আয়ের দেশসমূহে করোনা টিকা প্রদানের চলমান কর্মসূচি ২০২২ সালেও অব্যাহত রাখতে আরো কমপক্ষে ৭ বিলিয়ন ডলার দরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সূত্র থেকেই ইউএসএইডের নিকট তহবিলের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। যেসব দেশে চিকিৎসা-সেবার সুনির্দিষ্ট কোন কার্যক্রম নেই বা তেমন কাজের প্রয়োজনীয় অর্থ নেই, সে সব দেশ পুরোপুরি যুক্তরাষ্ট্রের টিকার ওপর ভরসা করে রয়েছে। সে সব দেশের অসহায় জনগোষ্ঠির জন্যে দ্রুত কী করা যায় তা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ইউএসএইড এবং স্বাস্থ্য দফতরে বাইডেন প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠকে মিলিত হয়েছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু তহবিল সংগ্রহের কোন উপায় সামনে আসেনি। এহেন অবস্থায় যদি গরিব বিশ্বে টিকা সরবরাহের পরিকল্পনা থমকে দাঁড়ায় এবং এরইমধ্যে আরো ত্যাজী ধরনের ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে তাহলে ভয়ংকর আরেকটি মহামারি কোনভাবেই ঠেকানো সম্ভব হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা আশংকা প্রকাশ করেছেন। ইউএসএইড কোনভাবেই হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করা হলেও তহবিল নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হয়নি।
উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে হোয়াইট হাউজের প্রেস ব্রিফিংকালে সেক্রেটারি জেন সাকি জানান, সর্বদাই মানবিকতার কল্যাণে বিকল্প একটি পন্থা অবলম্বন করার সুযোগ তৈরী হয়। ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের সাথে হোয়াইট হাউজের আলোচনা শুরু হয়েছে। আমরা সর্বান্তকরণে আশা করছি যে, টিকা সরবরাহের মহতি পরিকল্পনাটিও থেমে থাকবে না। অর্থের ব্যবস্থা হবেই।
জানা গেছে, অর্থ সংকটের এই পরিস্থিতি সামনে এসেছে হোয়াইট হাউজ কর্তৃক ফাইজারের এক বিলিয়ন ডোজ টিকার অর্ডার দেয়া হয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিতরণের জন্য। নতুন বছরের প্রথমার্ধেই স্বল্প ও মাঝারি আয়ের দেশসমূহে লাখ লাখ ডোজ টিকা প্রদানের লক্ষ্য স্থির করেছে হোয়াইট হাউজ। এই লক্ষ্য পূরণের অভিপ্রায়ে ইউএসএইডের কর্মকর্তারা হোয়াইট হাউজের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন তহবিল সংকট কাটিয়ে উঠতে।
কর্মকর্তারা আশা করছেন, বিশ্ব মানবতার স্বার্থে বাইডেন প্রশাসনের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হলেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব পুনরায় আস্থায় ফিরবে এবং বিষয়টি কংগ্রেসের উভয় কক্ষ অনুধাবনেও সক্ষম হবে। আর তখোনই অর্থ সংকটের ব্যাপারটি কেটে যাবে। তেমন আশায় থেকেই কোভ্যাক্সের সাথে বাইডেনের লোকজন যোগাযোগ বজায় রাখছেন ফাইজারের টিকাগুলো সবার আগে কোন কোন দেশে পাঠাতে হবে। একইসাথে ইউএসএইড কাজ করছে ইউনিসেফের সাথে দেশগুলোর তালিকা স্থির হবার পরই সে সব গন্তব্যে টিকা রিসিভ এবং তা যথাযথভাবে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে। এমনকি টিকা প্রদানের সরঞ্জামও সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে সর্বশেষ প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, ডিসেম্বরের শুরুতে ইউএসএইডের প্রশাসক সামন্থ পাওয়ার ঘোষণা করেছেন, আরও ৩১৫ মিলিয়ন ডলার দেয়া হবে ‘আমেরিকা রেসকিউ প্ল্যান’ থেকে। ২১ ডিসেম্বর স্টেট ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করেছে যে, তারা ৫৮০ মিলিয়ন ডলার প্রদান করতে চায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাকে। এর সাথে থাকবে ইউনিসেফও। এ অর্থে ভ্যাকসিন তৈরী, সরবরাহ এবং প্রদানের কাজ করতে হবে। এই অর্থ (৩১৫ মিলিয়ন এবং ৫৮০ মিলিয়ন ডলার) কোথা থেকে আসবে সেটি ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেউ জানতে পারেননি। অর্থাৎ ঘোড়ার আগে গাড়ি চলার মত অবস্থা। ইউএসএইড কর্মকর্তারা সোমবার বলেছেন, আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী কিছুই করতে সক্ষম হচ্ছি না অর্থ সংকট তীব্র আকার ধারণ করায়।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন