পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেন বিভিন্ন দেশে ‘জোরপূর্বক নিখোঁজ’ ব্যক্তিদের তালিকা ক্যাটাগরিকেলী উল্লেখ করে বলেছেন, বাংলাদেশের কিছু প্রবাসীর মদদে মার্কিন রাজনীতিকরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। এমন অবস্থার অবসানে দেশপ্রেমিক প্রতিটি প্রবাসীকে সরব হতে হবে। কারণ, যে অপবাদে স্যাংশন দেয়া হয়েছে, তা ন্যায়-নিষ্ঠ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের দীর্ঘ ৫০ বছরের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের আলোকে আমি বলতে পারি যে, প্রবাসীরা যদি বাংলাদেশের সত্যিকারের তথ্য সবিস্তারে নিজ নিজ অবস্থান থেকে মার্কিন নীতি-নির্ধারকদের কাছে উপস্থাপন করতে পারেন, তাহলে স্যাংশনের ব্যাপারটি তারা উঠিয়ে নেবেন। কারণ, আমেরিকাতেও অনেক মানুষ আছেন যারা বিবেকবান। যারা কঠোর পরিশ্রমী বাংলাদেশীদের মাধ্যমেই বাংলাদেশকে চিনেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন যুক্তরাষ্ট্রে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনকে এ ব্যাপারে সভা-সেমিনার আয়োজনের আহবানও জানিয়েছেন।
‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক নিউইয়র্কে এক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় সংসদের প্রেসিডেন্ট হলেন ড. এ কে এ মোমেন। সেই ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার উদ্যোগেই জ্যাকসন হাইটসে মুনলাইট গ্রিল এ্যান্ড চিকেন রেস্টুরেন্টের সিমলনায়তনে এই আলোচনা সভা হয়। সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া।
এই অনুষ্ঠানে বিশেষ সম্মানীত অতিথি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বাংলাদেশী-আমেরিকান সিটি মেয়র (মিলবোর্ন, পেনসিলভেনিয়া) মাহবুবুল আলম তৈয়ব বলেন, এক সময় বাংলাদেশকে তুচ্ছ্ব-তাচ্ছ্বিল্য করা হয়েছে। এখন আর সে দিন নেই। এখন বাংলাদেশ অনেক ওপরে উঠেছে।
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি মো. আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, কেন্দ্রীয় প্রেসিডেন্ট মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের দিক-নির্দেশনায় আমরা কাজ করছি। চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ কিছু করতে।
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসারের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত এ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারণা চলাচ্ছে তাদেরকে মোকাবেলা করতে হবে বাংলাদেশের সঠিক তথ্য সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রদানের মাধ্যমে। এটা সকলেই জানেন যে, বাংলাদেশের সবকিছুই ওপেন। গোপন কিছু নেই । লোকানোর প্রশ্নই উঠে না।
ড. এ কে মোমেন বলেন, পৃথিবীর ১১০টি দেশের ৪৮ হাজার মানুষ জোরপূর্বক নিখোঁজ হয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী শ্রীলংকা, সেখানকার লোকসংখ্যা হচ্ছে মাত্র ২১ মিলিয়ন অর্থাৎ ২ কোটি ১০ লাখ। এরমধ্যে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার লোক নিখোঁজ হয়েছে। ইরাকের লোকসংখ্যা ৪ কোটি। সেখানেও সাড়ে ১৬ হাজার মানুষ জোরপূর্বক নিখোঁজ হয়েছে। আলজেরিয়ার জনসংখ্যা ৪ কোটি ৩৮ লাখ। সে দেশেও ৩/৪ হাজার লোক নিখোঁজ। এসব তথ্য হচ্ছে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিশনের। ড. মোমেন বলেন, অপরদিকে আমার দেশের লোক সংখ্যা হচ্ছে ১৬৫ মিলিয়ন তথা ১৬ কোটি ৫০ লাখের বেশী। তারমধ্যে জোরপূর্বক নিখোঁজের সংখ্যা হচ্ছে ৭৬ জন। এই ৭৬ জনের মধ্যে পাওয়া গেছে ৭ জনকে অর্থাৎ নিখোঁজের সংখ্যা ৬৯।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঐসব রাষ্ট্রের ওপর কোন স্যাংশন হয় না। স্যাংশন হয় বাংলাদেশের ওপর। কোথায় সাড়ে ১৬ হাজার, কোথায় সাড়ে ৬ হাজার, কোথাও ৪ হাজার নিখোঁজ, অথচ ওদের ওপর স্যাংশন হয় না। স্যাংশন হয় ৬৯ জন নিখোঁজের জন্য বাংলাদেশের ওপর। এটা কী ফেয়ার? এটা কী ন্যায় বিচার? ন্যায়-নিষ্ঠতা? এমন কাজ হয়েছে কিছু লোক ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে মার্কিন প্রশাসনকে বারবার কানপড়া দেয়ায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন দায়িত্ব হচ্ছে আমাদের সঠিক তথ্য বারবার সংশ্লিষ্ট সকলকে জানানোর। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা যদি সঠিক তথ্য জানাতে পারি, তাহলে আমেরিকার জনগণ তা বিবেচনায় নেবেন। কারণ, এদেশের মানুষেরা খুবই ফেয়ার। আশা করছি তারা বাংলাদেশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে কসুর করবেন না।
ড. মোমেন বাংলাদেশ আজকের অবস্থায় উন্নীত হওয়াকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের গুণ বলে অভিহিত করে বলেন, আমরা জিরো থেকে হিরো হয়েছি।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনদের মধ্যে আরো ছিলেন মিলবোর্ন সিটির কাউন্সিলম্যান মোশারফ হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার চুন্নু, বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা বাশার ভ’ইয়া, আমেরিকা-বাংলাদেশ এলায়েন্সের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি এম এ সালাম, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হাজী শফিকুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসিব মামুন, মহিউদ্দিন দেওয়ান এবং আব্দুর রহিম বাদশা, প্রবাসী কল্যাণ সম্পাদক মিসবাহ আহমেদ, কৃষি সম্পাদক আশরাফুজ্জামান, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতা মোর্শেদা জামান, আওয়ামী লীগ নেতা এম এ জলিল, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি সুব্রত তালুকদার, বঙ্গবীর এম এ জি ওসমানী স্মৃতি পরিষদের সভাপতি হাজী নজমুল চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হাজী জাফরউল্লাহ, যুগ্ম সম্পাদক আশরাব আলী খান লিটন, এ টি এম রানা, নাজিমউদ্দিন, আবুল কাশেম প্রমুখ। এ অনুষ্ঠানে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয় নিউইয়র্কে নবাগত কন্সাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলামকে। এছাড়া, মার্কিন মুল্লুকে প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে মাহবুবুল আলম তৈয়ব এবং কাউন্সিলম্যান মোশারফ হোসেনকেও বিপুল করতালির মধ্যে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা জানানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী’র নিউইয়র্ক কনস্যুলেট পরিদর্শন
এদিকে, ২৮ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ.কে. আব্দুল মোমেন বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, নিউইয়র্ক পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন ধরনের কনস্যুলার সেবা কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন। কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম সহ অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ তাঁকে কনস্যুলেটে স্বাগত জানান। এ সময় তিনি কনস্যুলার সেবাপ্রার্থী ও কনস্যুলেটে আগত কমিউনিটির সদস্যদের সাথেও কথা বলেন এবং তাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তিনি প্রবাসীদের প্রত্যেককেই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে অভিহিত করে দেশের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল