একাত্তরের জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবিতে জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবরে স্মারকলিপি দিলো ‘সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১’র যুক্তরাষ্ট্র শাখা। ৯ ডিসেম্বর ‘জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক জেনোসাইড স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস’-এ নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে মানববন্ধন থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে মুখর পরিবেশে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন মহাসচিবের রাজনৈতিক সম্পর্কিত কর্মকর্তা আদিত্য অধিকারী।
স্মারকলিপি গ্রহণের সময় আদিত্য বলেন, ‘মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের পক্ষে এটি গ্রহণ করলাম এবং তার কাছে পেশ করবো প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ’।
উল্লেখ্য, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবিবের স্বাক্ষরিত স্মারকলিপির কপি যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার এবং সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বারীসহ সকল কর্মকর্তা সম্মিলিতভাবে প্রদান করেন মহাসচিবের প্রেরিত কর্মকর্তা আদিত্যর কাছে।
এর আগে সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার স্বাগত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হায়েনাদের ভয়ংকর বর্বরতা-নৃশংসতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ৫১ বছর পরও মেলেনি। তবে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে এ নিয়ে একটি বিল পাশ হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃতি মিলেছে। মার্কিন কংগ্রেসেও একটি বিল উত্থাপিত হয়েছে। এখন আমরা রাজপথ ও কূটনৈতিক পর্যায়ে আন্দোলনে রয়েছি জাতিসংঘের স্বীকৃতির জন্যে। দেড় দশকের অধিক সময় যাবত নিউইয়র্কে কর্মরত ‘জেনোসাইড’৭১ ফাউন্ডেশন’র প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ড. প্রদীপ রঞ্জন কর এ সময় বলেন, বাংলাদেশের জেনোসাইডের স্বীকৃতির অভিপ্রায়ে মার্কিন কংগ্রেসে একটি বিল উঠেছে। এটিও আন্দোলনের ফলেই হয়েছে। তবে সকলকে সরব থাকতে হবে রাজপথের পাশাপাশি দাপ্তরিক দেন-দরবারে।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সেক্রেটারি বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বারির সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত আলোচনায় আরও অংশ নেন বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং ফোরামের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মেজর (অব:) মঞ্জুর আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র জাসদের সেক্রেটারি নূরে আলম জিকো, ফোরামের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার চুন্নু, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার ভূইয়া, দপ্তর সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক, নির্বাহী সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইমদাদুল হক, কম্যুনিটি লিডার নাজিমউদ্দিন প্রমুখ। বক্তারা উল্লেখ করেন, একাত্তরে বর্বরতা-নৃশংসতার বিচারের পাশাপাশি ওই ধরনের বর্বরতার জন্যে রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানকে বাঙালিদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনারও প্রয়োজন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, একাত্তরের জেনোসাইড বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ফিনল্যান্ড এবং বাংলাদেশে ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে জেনোসাইডের সাথে পরিচিত করতে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের পক্ষ থেকেও সভা-সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় এ কর্মসূচি থেকে।
একইদিন সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসনর হাইটসে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ‘জেনোসাইড’৭১ ফাউন্ডেশন’র সভাপতি ড. প্রদীপ রঞ্জন কর লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মিডিয়ার বিভিন্ন মতামতসহ একাত্তরের জেনোসাইডের যথেষ্ঠ দলিল, তথ্যচিত্রসহ বিভিন্ন সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারও চলছে। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় জেনোসাইডের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। একাত্তরের ৯ মাসে বাংলাদেশে যে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তা যেভাবেই সংজ্ঞায়িত করা হোক-জেনোসাইড হিসেবেই চিহ্নিত হবে-এ নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে পাক হানাদার বাহিনী জেনোসাইড চালিয়েছিল তার নির্মম সাক্ষীও অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মিডিয়া প্রকাশ করেছে, যেখানে বিশদ বিবরণ ছিল।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এখন সময় হচ্ছে সেই জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের অভিপ্রায়ে মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষের ৫৩৫ সদস্যের সকলকেই স্মারকলিপি প্রদান করা।
ড. প্রদীপ কর এ সময় উল্লেখ করেন যে, সপ্তাহ দুয়েক আগে তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে গিয়ে হোয়াইট হাউজ ও স্টেট ডিপার্টমেন্টে স্মারকলিপি দিয়েছেন। বাইডেন প্রশাসনেরন বেশ ক’জন কর্মকর্তার সাথে কথাও বলেছেন।