সম্প্রিত নেদারল্যান্ডসের এক দল বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, তারা একটি 'কম্পিউটার-ব্রেন' তৈরি করেছেন। যেসব মানুষ কথা বলতে বা নড়াচড়া করতে পারেন না, তারা এটির মাধ্যমে মনের ভাষা প্রকাশ করতে পারবেন। তাদের উদ্ভাবিত এই প্রক্রিয়াটি প্রয়োগ করা হয়েছে ৫৮ বছর বয়সী এক নারীর উপর। তিনি অ্যামাইয়োট্রোপিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিসের আক্রান্ত। তিনি তার পেশিগুলোকে নাড়াতে পারেন না। কথাও বলতে অক্ষম। ওই কম্পিউটার মস্তিস্কের মাধ্যমে তিনি অনুভব করে ডান হাত নাড়িয় কথা বলছেন। এর আর আগে তিনি শুধু চোখের ভঙ্গি ও পাতা ফেলার মাধ্যমেই ভাষা প্রকাশ করতেন।
আমরা এমন এক পদ্ধতি তৈরি করেছি যার উপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখা যায়। এই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মতো কোনো ব্যবস্থা আর নেই বলে জানান, প্রধান গবেষক ইউনিভার্সিটি অব মেডিক্যাল সেন্টার আটরিচটের ব্রেন সেন্টারের রুডোফ ম্যাগনাস।
আর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর বিকাশ গিলজা জানান, এই সিস্টেমের মাধ্যমে রোগীকে দারুণ কোনো অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে না। কিন্তু এটা দিয়ে বেশ ভালো কাজ হচ্ছে।মস্তিষ্কের মেশিন ইন্টারফেসের ক্ষেত্রে এটা একটা বড় আবিষ্কার। প্রতিস্থাপনযোগ্য ব্রেন মেশিন ইন্টারফেস গবেষণার ক্ষেত্র অনেক দূর নিয়ে যাবে গবেষণাটি।
গবেষকরা আরো জানান, মানুষের মস্তিষ্কের সংকেত শনাক্ত করা খুব কঠিন বিষয়। কারণ মস্তিষ্কে অসংখ্য সংকেত সৃষ্টি হয়। নতুন পদ্ধতিতে চারটি সেন্সর স্ট্রিপ বসানো হয় মস্তিষ্কের বাম মোটর কর্টেক্সে। খুলিতে ড্রিলের মাধ্যমে চারটি ফুটো করে এই সার্জারি সম্পন্ন হয়। চারটি স্ট্রিপের প্রত্যেকটিতে রয়েছে চারটি ইলেকট্রোড। সেখান থেকে যে সংযোগগুলো এসেছে, তা স্থাপন করা হয়েছে ওই নারীর বুকে। এ পদ্ধতি পরিচালিত হয় কম্পিউটারের মাধ্যমে। সার্জারি করতে সময় লেগেছে ৮ ঘণ্টা। টানা ২৮ সপ্তাহ ধরে তার উপর গবেষণা চলে। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ওই নারী ভিডিও স্ক্রিনের কোনো অংশ স্পর্শের চেষ্টা করেন চিন্তার মাধ্যমে ডান হাতটি নাড়িয়ে। তিনি শব্দ বলার ক্ষেত্রে পর্দায় থাকা শব্দগুলো বাছাই করতে একই পদ্ধতিতে ক্লিক করার চেষ্টা করেন। প্রথমবার নির্দিষ্ট শব্দ বাছাই করতে ৫২ সেকেন্ড লেগে যায় ওই নারীর। একবার শব্দ বাছাইয়ে অভ্যস্ত হওয়ার পর এ সময় ৩৩ সেকেন্ডে নেমে এসেছে।
বিজ্ঞানীরা তাদের এই পদ্ধতি এ রকম আরো কয়েকজন রোগীর উপর প্রয়োগ করবেন বলে জানান।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার