চীনের ডিপসিক প্রযুক্তির অগ্রগতির পেছনে লুকিয়ে আছে জাপানেরই পুরনো একটি কৌশল—‘কাইজেন’। এর অর্থ হলো ধারাবাহিক ছোট উন্নতি, যা সময়ের সঙ্গে বিশাল সাফল্য বয়ে আনে। কিন্তু এবার, চীন এই কৌশলকে এমনভাবে কাজে লাগাচ্ছে, যা পশ্চিমাদের জন্য নতুন এক দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লোকমুখে প্রচলিত, ১৯৬০-এর দশকে আমেরিকানরা কোটি কোটি ডলার খরচ করে এমন একটি বলপেন তৈরি করেছিল, যা মহাকাশে কাজ করবে। আর রাশিয়ানরা সরাসরি পেনসিল ব্যবহার করেছিল! যদিও গল্পটি সত্য নয়, তবে এটি দেখিয়ে দেয় যে সহজ ও কার্যকর সমাধানই বেশি কাজে দেয়। আর ঠিক এভাবেই, চীনও জটিল নতুন উদ্ভাবনের পরিবর্তে ধারাবাহিক ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে—আর সেটি ‘কাইজেন’-এর মাধ্যমেই!
জাপানের এই কৌশল ১৯৮০-এর দশকে দেশটির অর্থনীতিকে বিশ্বমঞ্চে উঁচুতে নিয়ে গিয়েছিল। গাড়ি, ইলেকট্রনিকস ও সেমিকন্ডাক্টরের বাজারে তারা আমেরিকা ও ইউরোপকে পেছনে ফেলেছিল। কিন্তু জাপানের অর্থনৈতিক মন্দার পর কাইজেন হয়ে ওঠে শুধু উন্নতির পথ নয়, বরং টিকে থাকার অস্ত্র। দাম বাড়ানোর ক্ষমতা হারানো জাপানি কোম্পানিগুলো খরচ কমাতে ও উৎপাদনের মান ধরে রাখতে কাইজেনের ওপর নির্ভর করে।
চীন বহুদিন ধরেই উৎপাদন খাত ও প্রযুক্তিতে ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করতে চেয়েছে। এবার তারা জাপানের পথ অনুসরণ করে নিজেদের মতো কাইজেন প্রয়োগ করছে—আর এর ফলও আসছে দ্রুত! কম খরচে উন্নতমানের ইলেকট্রিক গাড়ি, ইলেকট্রনিকস, শিল্প যন্ত্রপাতি, উচ্চগতির ট্রেন ও রোবট তৈরি করছে চীন।
কেন চীনের কাইজেন আরও কার্যকর হচ্ছে?
- চীনের বিশাল শ্রমশক্তি ও প্রতিভাবান কর্মীরা একসঙ্গে ছোট পরিবর্তনগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারছে।
- বর্তমান যুগে গ্রাহকরা দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে পারছে, যা প্রযুক্তির উন্নতির গতি বাড়াচ্ছে।
- চীন নতুন প্রযুক্তিতে প্রচুর বিনিয়োগ করছে, এমনকি তারা জাপানের অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদেরও উচ্চ বেতনে নিয়োগ দিচ্ছে।
জাপানি কোম্পানিগুলো অর্থনৈতিক চাপে অনেক প্রতিভাবান কর্মীকে আগেভাগেই অবসরে পাঠিয়েছে। চীন সেই অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের কাজে লাগিয়ে তাদের ব্যর্থ পরীক্ষাগুলোর বিশ্লেষণ করছে, যা নতুন উদ্ভাবনের পথ সহজ করে দিচ্ছে।
পশ্চিমারা উদ্বিগ্ন কারণ, চীন খুব দ্রুত প্রযুক্তিতে আধিপত্য বিস্তার করছে। জাপানের পরীক্ষিত কৌশলকে কাজে লাগিয়ে কম খরচে উন্নতমানের পণ্য উৎপাদন করছে, যা তাদের গ্লোবাল মার্কেটে প্রবল প্রতিযোগিতার মুখে ফেলছে।
চীনের এই ‘নতুন’ কৌশল যদি আরও সাফল্য লাভ করে, তবে এটি পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য বড় এক ধাক্কা হতে পারে!
বিডি প্রতিদিন/আশিক