পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গত দুই দিনেও স্বাভাবিক হয়নি। গত শনিবার শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় চালু থাকলেও শিক্ষার্থী শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে কার্যত অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি দিলেও সোমবার থেকে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে তারা কাজে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অপরদিকে শিক্ষক সমিতি সোমবার দুপুরে এক বৈঠকে ৭ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের একাংশের ক্লাস বর্জন অব্যাহত রয়েছে।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতির সভাপতি শামসাদ ফখরুল বলেন, যে কর্মচারী শিক্ষককে লাঞ্চিত করেছেন তার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট বিচার দাবি করেছি। পাশাপাশি আমাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে যোগদান করেছি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রাসনের নিকট আমরা কিছু দাবি দাওয়া দিয়েছি। তার মধ্যে আমাদের কর্মকর্তাদের মোটরসাইকেল ভাঙচুরসহ যে সমস্ত ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণের দাবি করেছি। যে শিক্ষককে নিয়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রশাসনিক কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে সকল দাবি আদায় না হলে পুনরায় কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের ডাকা ছাত্র ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ১০ জনের একটি দল ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন। তারা অধিকাংশই বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী বলেও তারা জানান। তাদের মধ্যে লিংকন হোসেন ও তারেক মামুন জানান, বাংলা বিভাগের সাবেক সভাপতি এবং কলা ও সামাজিক অনুষদের ডিন ড. এম আবদুল আলীমের উপর হামলাকারীদের সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধরনের কাজ কর্ম করতে দেওয়া হবে না বলেও জানান তারা।
তাদের এই কর্মকাণ্ডকে লাঞ্চিত শিক্ষকের নিজস্ব বাহিনী বলে দাবি করেছেন কর্মকর্তা কর্মচারী সমিতির নেতারা। তারা বলেন, ওই শিক্ষকের নিজ এলাকা থেকে ৫০ জনের একটি বহিরাগত দল গত শনিবারের ঘটনায় ক্যাম্পাসে এসে এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে তাদের বিরুদ্ধে উস্কে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান শামসাদ ফকরুল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আওয়াল কবির জয় বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ইতিমধ্যেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে যোগ দিয়েছেন। তাদের মঙ্গলবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস পরীক্ষাসহ স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করবে বলেও দাবি করেন তিনি। কতিপয় শিক্ষার্থীরা এই ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন, এটি ঠিক হয়ে যাবে বলেও দাবি করেন তিনি।
অন্যদিকে, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি দুপুরে সাধারণ সভা করে ৭ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছন। কর্মসূচিগুলোর মধ্যে এই ঘটনার নিন্দা জ্ঞাপন, মঙ্গল ও বুধবার কালো ব্যাচ ধারণ, শিক্ষকের উপর হামলার বিচারের দাবিতে প্রশাসনের নিকট স্মারকলিপি প্রদান, আগামী ৪ ও ৫ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কিসলু নোমান বলেন, আমাদের শিক্ষকের উপর হামলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবির পাশাপাশি আমরা কর্মসূচি দিয়েছি। এই আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে শিক্ষক সমিতি পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় এক কর্মচারীর সাথে বাংলা বিভাগের সাবেক সভাপতি ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ড. এম আবদুল আলীম খারাপ আচরণ করলে তাকে লাঞ্চিত করেন এক কর্মচারী। এরই প্রতিবাদে শনিবার ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
বিডি প্রতিদিন/৩০ অক্টোবর ২০১৭/আরাফাত