বিশ্বকাপ ফুটবল আসরে মেতেছে মরুভূমির দেশ কাতার। জগদ্বিখ্যাত ফুটবলারদের পদভারে মুখরিত হয়েছে পারস্য সাগর ঘেঁষে নির্মিত নান্দনিক সব স্টেডিয়াম। এদিকে আরব সাগর পেরিয়ে সেই ঢেউ এসে লেগেছে বঙ্গোপসাগরের কিনারে। মুহূর্তেই উন্মাদনার প্রবল হাওয়া হাজার মাইল দূর থেকে ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের আকাশে-বাতাসে। ফলে গোটা দেশের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও হয়েছে উত্তাল। তাই বিশ্বকাপের আমেজে মেতে উঠেছে মতিহারের সবুজ চত্বর।
কাতারে আয়োজিত সবচেয়ে বড় এ আসরে অনেক দেশই খেলছে। তবে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের অধিকাংশই আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলে বিভক্ত। দেশে যুগ যুগ ধরে এই দুই ফুটবল পরাশক্তিকে নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ইদানিং অন্য দলেই সমর্থক সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ক্যাম্পাসে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকদের উন্মাদনা বরাবরই চোখে পড়ার মতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলরুম, ক্লাসরুম কিংবা চায়ের আড্ডাসহ সর্বত্রই চলছে বিশ্বকাপের আলাপচারিতা। প্রিয় দলের জার্সি কেনা, পাল্লা দিয়ে বড় বড় পতাকা তৈরি, আনন্দ মিছিল, শোভাযাত্রা, প্রিয়জনকে পছন্দের দলের জার্সি উপহার এবং পছন্দের দলের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে একে-অপরের মধ্যে চলছে তর্ক-বিতর্ক। এসব নিয়েই দিনাতিপাত করছেন ক্যাম্পাসের অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
এই উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীদের ভার্চুয়াল জগতেও। নিজেদের ফেইসবুক, টুইটার কিংবা ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যমে প্রিয়দলের বন্দনা করে পোস্ট করছেন তারা। বিভিন্ন দলের সমর্থকেরা মিলে ইতোমধ্যে গড়েও তুলেছেন সমর্থনগোষ্ঠী। তাদের নিয়ে আবার কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে সভাপতি-সম্পাদক পদ ছাড়াও সৃষ্টি হয়েছে অবাক করা সব পদ-পদবি। কেউ হয়েছেন 'গুজব নিরসন বিষয়ক সম্পাদক', কেউ 'রেফারির সিদ্ধান্ত বিশ্লেষণ বিষয়ক সম্পাদক' কিংবা 'প্রতিপক্ষকে খোঁচামারা বিষয়ক সম্পাদক' ইত্যাদি। তবে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, একই উন্মাদনার মুগ্ধতা ছড়িয়েছে প্রত্যেকটা হলে হলে ও ব্লকে ব্লকে। বলা যায়, ক্যাম্পাসে এখন ফুটবলজ্বরে আক্রান্ত শিক্ষার্থীরা। এ যেন মরুর উত্তাপ ছড়িয়েছে মতিহারের সবুজ চত্বরে।
এদিকে বিশ্বকাপের উন্মাদনায় ক্যাম্পাসে বিশাল মিছিল ও আনন্দ শোভাযাত্রা বের করেন আর্জেন্টাইন ও ব্রাজিলের সমর্থকেরা। মেসি ও নেইমারসহ বিভিন্ন স্লোগানে উত্তাল হয় পুরো ক্যাম্পাস। বিশাল পতাকা, ব্যানার, ফেষ্টুন ও রং ছুড়াছুড়ি করে পছন্দের দলের প্রতি শুভকামনা জানান তারা। এবার বিশ্বকাপে বিজয়ের মুকুট নিজেদের দখলে রাখতে আশাবাদী উভয় দলের সমর্থকেরা।
ক্যাম্পাসের আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা বলছেন, ক্যাম্পাসের অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী আর্জেন্টাইন সমর্থক। মেসির চমকে এবার বিশ্বকাপ ঘরে তুলবে তারা। এই প্রত্যাশা যেন সফল হয়, সেজন্যই ক্যাম্পাসে আমাদের এই কর্মকাণ্ড। আমরা প্রিয় আর্জেনটাইন দল ও মেসিকে শুভেচ্ছা জানাই এবং ব্রাজিলকে ক্যাম্পাসে আমাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানান দিতেই এই কর্মসূচি করছি।
অন্যদিকে ব্রাজিল সমর্থকেরা বলছেন, বিশ্বে এখন পর্যন্ত ব্রাজিল শিরোপা অর্জনে সর্বোচ্চতম দেশ। বর্তমান র্যাংকিং-এ সবার উপরে। এদিকে অপ্রতিরোধ্য নেইমার। সব মিলিয়ে এবারেও বিজয়ের মুকুট ব্রাজিলের ঘরে যাবে, সেটাই প্রত্যাশা। তাই প্রিয় দলকে শুভকামনা জানিয়ে আমরা এই উচ্ছ্বাসে মেতেছি।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন