পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বি্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) সহকারী প্রক্টরের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অসত্য দাবি করে সহকারী প্রক্টরের পক্ষে একই স্থানে পাল্টা বিক্ষোভ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অপর একটি অংশ।
শনিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মোস্তফা কামাল খান ও প্রক্টর কামাল হোসেনের মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষকে সরিয়ে দেয়া হয়।
পাবিপ্রবি সূত্র জানায়, শনিবার দুপুর ৩টার দিকে পাবিপ্রবির সমাজকর্ম বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে প্রশাসন ভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ইয়াহিয়া ব্যাপারী আকাশের অপসারণ দাবি করে স্লোগান দিতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সেখানে এসে সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অসত্য দাবি উল্লেখ করে তার পক্ষে স্লোগান দিতে শুরু করে। উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি স্লোগানে সেখানে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে, উপ-উপাচার্য মোস্তফা কামাল খান, প্রক্টর কামাল হোসেনসহ জেষ্ঠ্য শিক্ষকরা বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়ে উভয়পক্ষকে নিবৃত করেন।
প্রক্টরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারী সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী প্রান্ত বলেন, দুপুরে সহকারী প্রক্টর কোন প্রটোকল না মেনে, প্রক্টরের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে প্রবেশ করে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গালিগালাজ করে চর থাপ্পড় মারতে শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ জানালে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। সহকারী প্রক্টর শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলার অধিকার কোথায় পেলেন? আমরা তার অপসারণ চাই।
তবে, এ অভিযোগ অসত্য দাবি করে, শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী হামলা থেকে বাঁচাতেই সহকারী প্রক্টর হলে গিয়েছিলেন দাবি শিক্ষক ইয়হিয়া ব্যাপারীর পক্ষে অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীদের।
অর্থনীতি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ও পাবিপ্রবি সনাতন বিদ্যাপীঠ সংসদের সাধারণ সম্পাদক সুইট মন্ডল বলেন, শনিবার সকালে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী শানুর নেতৃত্বে কয়েকজন বঙ্গবন্ধু হলে ৫২১ নম্বর কক্ষে এসে আমার কাছে চাঁদা দাবি করেন। আমি প্রতিবাদ জানালে তারা আমাকে মারপিট শুরু করে। আমি নিরাপত্তার জন্য সাহায্য চেয়ে সহকারী প্রক্টর আকাশ ব্যাপারী স্যারকে ফোন করি। স্যার দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে তাদের হামলা থেকে আমাকে রক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা স্যারের সাথেও দুর্ব্যবহার করে তাকে লাঞ্ছিত করে। এখন ঘটনা অন্যদিকে নিতে স্যারের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগ করছে। আমরা তাদের মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানাতে অবস্থান নিয়েছি। একই সাথে আমরা এই সব চাঁদাবাজ ছাত্রের বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর ইয়াহিয়া ব্যাপারী আকাশ বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও আবাসিক শিক্ষক। হলে ঝামেলার খবর পেয়ে শনিবার সকালে দ্রুত সেখানে যাই। এসময় সুইট মন্ডলকে উদ্ধার করে বিবাদমান দু'পক্ষকে প্রক্টর অফিসে এসে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করি। কিন্তু সমাজকর্ম বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী উগ্র আচরণ শুরু করে, আমি কেন হলে গিয়েছি বলে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে দেখি প্রশাসন ভবনের সামনে তারা আমার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। পরে, আমার বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী ও মারধরের শিকার আবাসিক শিক্ষার্থীরা তাদের বিপক্ষে বিক্ষোভ করেছে বলে শুনেছি। তবে, এর সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। বর্তমান উপাচার্য আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ বিরাজ করছে। একটি মহল পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে ছাত্রদের উস্কানি দিচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখলেই সব জানা যাবে।
পাবিপ্রবির প্রক্টর কামাল হোসেন বলেন, হলে ঝামেলার সময় উপাচার্য স্যারের সঙ্গে সেমিনারে থাকায় আমি সেখানে যেতে পারিনি। সহকারী প্রক্টর হিসেবে দায়িত্বের অংশ হিসেবেই আকাশ ব্যাপারী সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করেছেন। আমরা বিক্ষোভরত উভয়পক্ষকেই বুঝিয়ে সমঝোতা করে দিয়েছি। চাঁদাবাজি বা মারপিটের লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত