গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের শ্লোগানের আড়ালে সাম্রাজ্যবাদ চালানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) অধ্যাপক ড. এজিএম শফিউল আলম ভূঁইয়া। মঙ্গলবার (০৭ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে '৭১ ফাউন্ডেশন' আয়োজিত 'সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আলোকচিত্র প্রদর্শনী' অনুষ্ঠানের সংহতি জানিয়ে দেয়া বক্তব্য তিনি এ মন্তব্য করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ফিল্ম এন্ড ফটোগ্রাফি ডিপার্টমেন্টে অধ্যাপক ড. এজেএম শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, আমাদের প্রথমে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কারা তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। বিশ্বায়নের যুগে যেখানেই যা ঘটুক যুদ্ধ, সংঘাত, কোনোটাই সাম্রাজ্যবাদের ইশারা ব্যাতিত ঘটে না। সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থ যেখানে ক্ষুন্ন হয়,সেখানেই সাম্রাজ্যবাদীরা যুদ্ধের দামাম বাজিয়ে তোলে। তারা সেখানে দুটি শ্লোগানকে সামনে নিয়ে আসে, তারা বলে তারা সারাবিশ্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারা বলে তারা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যেহেতু তারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বলে, তাই সাম্রাজ্যবাদের চেহারা সাধারণ মানুষের কাছে তেমন একটা আসে না।
তিনি আরও বলেন, তারা গণতন্ত্র মানবাধিকারের কথা বলে আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বর্তমানে ফিলিস্তিন যখন শিশু হত্যা করা হয়, হাসপাতালে বোমা ফেলা হয়, তখন আমরা মানবাধিকারের কথা শুনতে পাই না। আমরা তখন শুনি ইসরায়েল আত্মরক্ষার অধিকার আছে। কিন্তু দখলকারী শক্তির কোনো আত্মরক্ষার অধিকার থাকতে পারে না।
তিনি বলেন, বাঙালির ইতিহাস সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিজয়ের ইতিহাস। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে পরাভূত করবে ও বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখবে।
সংহতি প্রকাশ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, আমরা অনেক সাম্রাজ্যবাদের কথা জানি। এসকল সাম্রাজ্যবাদের মূল লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিকভাবে নিজেদের সাবলম্বী করা,অন্যদেশের অর্থনৈতিক সুবিধা হাতিয়ে নিয়ে নিজেদের উন্নয়ন করা। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বাংলাদেশ নিয়ে এতো মাথা ব্যাথা কেনো? কারণ ইতিমধ্যেই সারা বিশ্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে একটি বড় শক্তিশালী দেশ। সেজন্য মার্কিনরা চাচ্ছে বাংলাদেশ যেনো চিন কিংবা রাশিয়ার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সুবিধা নিতেই তারা ভিসা নীতিসহ বিভিন্ন নীতি আরোপ করছে।
৭১ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খালেদ শওকত আলী বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি বাক্যে সাম্রাজ্যবাদকে চিহ্নিত করে গেছেন। তিনি বলেছিলে,পৃথিবী আজ দুভাগে বিভক্ত। একদিকে শোষক আর শোষিত, আমি শোষিতের পক্ষে। আমরা সেই বঙ্গবন্ধুর সেই দেখানো পথে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এই ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশন স্পষ্ট করে বলতে চায়,বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী জিয়াউর রহমান, সাহায্যকারী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ।
এসময় সংহতি জানিয়ে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুর রহিম, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা মাজেদা শওকত আলী। এছাড়াও এতে সংহতি প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী যুব লীগসহ আরো অনেকে। এছাড়াও উপস্থিত দর্শকরা মোমবাতি প্রোজ্জ্বলন করে অনুষ্ঠানের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন।
সকাল নয়টা থেকে শুরু হয় এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এরপর এই অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বিকাল পাঁচটায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব ও আলোচনা অনুষ্ঠান।সাংস্কৃতিক পর্বের সঞ্চালনা করেন মো. আলমগীর। এই পর্বে প্রথমে গান পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমির কণ্ঠশিল্পী দল, শিল্পকলা একাডেমির শিশুনৃত্য শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করে,এরপর একক গান পরিবেশন করেন ফাহমিদা রহমান, কণ্ঠশিল্পী হিমাদ্রি, এরপর 'মানুষ হ' গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পী দল,এরপর একক সংগীত পরিবেশন করেন কন্ঠশিল্পী সুচিত্রা, কন্ঠশিল্পী রাফি তালুকদার। অনুষ্ঠানেরনুষ্ঠানের সর্বশেষ মোমবাতি প্রোজ্জ্বলনের মাধ্যমে সবাই সংহতি প্রকাশ করে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ