দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক একটি মহলের হস্তক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আট শতাধিক শিক্ষক। এতে ‘সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপের আহ্বান’কে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরির অপতৎপরতা বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
বিবৃতিতে মোট ৮২৫ জন শিক্ষক স্বাক্ষর করেছেন। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে স্বাক্ষর করেছেন ফার্মেসী অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের ২৯ তারিখের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার প্রাক্কালে একটি দেশের রাষ্ট্রদূত সকল ধরনের শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে সেদেশের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের তিনটি রাজনৈতিক দলকে নিঃশর্ত সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি বিতরণ করেছে বলে জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখ্য, ইতিঃপূর্বে সরকারকে পদত্যাগের একদফা শর্ত জুড়ে দিয়ে বিএনপি-জামায়াতই শর্তহীন সংলাপের দাবিকে নাকচ করেছে। রাষ্ট্রদূতের পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তকারীদের ওপর ‘ভিসানীতি’ প্রয়োগের পুরনো হুমকি ব্যক্ত করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সহিংসতা সৃষ্টিকারী রাজনৈতিক দল ও উগ্র ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সাথে সংলাপের কথা বলে সময়ক্ষেপণ করে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টির অপতৎপরতায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। বিবৃতিতে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতি সম্মান জানিয়ে অবাধ-সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন আকাঙক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ১৯৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের পক্ষাবলম্বন করে অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে গণহত্যায় সহযোগিতা করেছিল। একই ধারাবাহিকতায় তাদের নীতি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তিকে রসদ যুগিয়ে চলেছে। বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনে জনসমর্থন না পেলেও দেশটির রাষ্ট্রদূতের পক্ষপাতমূলক আচরণে উৎসাহিত হয়ে তারা আন্দোলনের নামে সহিংসতা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়াস পাচ্ছে বলেও এতে অভিযোগ করা হয়।
বিবৃতিতে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির নামে যানবাহনে অগ্নি- সংযোগ, শিল্প-কলকারখানা ভাঙচুর, পুলিশ ও সাধারণ পথচারী-হত্যা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুর প্রভৃতি বিষয়ে কথা না বলায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করা হয়। এতে বলা হয়, এ রাষ্ট্রটি কথায় কথায় মানবাধিকারের কথা বললেও বিশ্বজনমতকে উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনিদের বিপক্ষে নারী-শিশুসহ গণহত্যার নগ্নভাবে ইজরাইলিদের পক্ষাবলম্বন করেছে।
বিবৃতিতে গত ৩১ অক্টোবর জাতিসংঘে মানবধিকার হাইকমিশন প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রতিবাদ’ শিরোনামের প্রেসব্রিফিংয়ের প্রতিবাদ জানানো হয় এবং এ বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। এ ধরনের পদক্ষেপ মানুষ-হত্যা, ভাঙচুর, সহিংসতার মাধ্যমে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে যারা তৎপর রয়েছে তাদেরকে উৎসাহিত করবে বলেও এতে মন্তব্য করা হয়।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল