ওরা তিন জন। এক সময় তারা ছিল নেহায়েত নিম্ন আয়ের মানুষ। বছর কয়েক আগে তোফাজ্জল হোসেনের মাথায় আসে টাকা কমানোর অভিনব এক পন্থা। অল্প সময়ের মধ্যে কোটি হওয়ার জন্য একেকজন বনে যান সরকারি ‘উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা’। সাধারণ লোকজনকে লোভনীয় চাকরির সুযোগ দেয়ার কথা বলে ভঙ্গ করতে থাকে শত শত যুবকের স্বপ্ন। হাতিয়ে নিতে থাকেন কোটি কোটি টাকা। এভাবে তাদের হাতে সর্বশান্ত হয়েছে শত শত যুবক। অবশেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’র হাতে ধরা পড়েছে এ প্রতারক চক্র। তারা হলেন তোফাজ্জল হোসেন, আনোয়ারুল হোসেন প্রকাশ আতিক এবং রিপন সিকদার। গত চার দিন ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো।
অভিযানের নেতৃত্বে থাকার পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো পরিদর্শক সন্তোষ চাকমা বলেন, এ প্রতারক চক্র গত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, চট্টগ্রাম বন্দর, সেনাবাহিনী এবং এনবিআর এ চাকরির কথা বলে শত শত যুবকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছে। দীর্ঘ তদন্ত করে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ভুয়া নিয়োগপত্র, প্রবেশপত্র, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র, পেনড্রাইভসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
জানা যায়, এ প্রতারক চক্র ২০১৫ সাল থেকে চাকরি দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণা শুরু করে। তারা চাকরি প্রত্যাশী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে প্রতারণার ফাঁদ বুনেন। অতঃপর নিজেরাই বিভিন্ন পদের জন্য প্রবেশপত্র, প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্র, পুলিশ ভেরিফিকেশন, নিয়োগপত্র তৈরি করে নিয়োগ প্রার্থীদের হোটেলে এনে কথিত পরীক্ষা নেন। পরীক্ষার পর পরিচয় করিয়ে দেন প্রতারক চক্রের অন্য সদস্য কথিত উচ্চপদস্থ প্রভাবশালী কর্মকর্তার সাথে। অতপর একেকজন নিয়োগপ্রার্থীর কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ধরিয়ে দেন ভুয়া নিয়োগপত্র। টাকা পাওয়ার পরই মোবাইল বন্ধ রেখে আত্মগোপনে চলে যায় প্রতারক এ চক্রটি। এরই মধ্যে কয়েকশ' ব্যক্তির কাছ থেকে অভিন্ন কায়দায় প্রতারণা করছে। তবে পিবিআই’র জিজ্ঞাসাবাদে ২৩ জনকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিয়োগপত্র, ২০ জনকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, ২১ জনকে নিয়োগপত্র, চট্টগ্রাম বন্দরে ১ জনের নামে নিয়োগপত্র ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ৪ জনের নামে নিয়োগপত্র ও এনবিআরে ২৭ জনের নামে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব/সেলিম