মাদক মামলার আসামি রাজিয়া বেগম (ছদ্মনাম)। এক বছর আগে তিনি গ্রেফতার হয়ে আসেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। গ্রেফতার হওয়ার সময় গর্ভবতী হওয়ায় বন্দি অবস্থায় জন্ম দেন একটি পুত্রসন্তান। কারাগারে জন্ম নেওয়া ওই শিশুর বর্তমান বয়স প্রায় ৬ মাস। কিন্তু মায়ের বিরুদ্ধে যে অপরাধে বিচার চলছে তার ‘দায়’ নিষ্পাপ শিশু ঘাড়ে নিয়ে আক্ষরিক ভাবে চার দেয়ালে বন্দি জীবন কাটছে শিশুটির। শুধু রাজিয়ার সন্তান নয়, অভিন্নভাবে মায়ের দায় ঘাড়ে নিয়ে ‘চৌদ্দ শিকে’ বন্দি জীবন কাটছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ৭৫ শিশুর শৈশব।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার দেওয়ান মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘কারাগারে মায়ের সাথে বন্দি শিশুদের প্রতি আলাদা নজর রাখা হয়। তাদের পুষ্টিকর খাবার ও দুধ সরবারহ করা হয়। এছাড়া তাদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন-চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার সভাপতি জিয়া হাবিব আহসান বলেন, ‘যখন শিশুদের মাঠে ময়দানে খেলাধুলা করে সময় কাটানোর কথা, তখন মায়ের সাথে চার দেয়ালে বন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছে এটা অবশ্যই অমানবিক। শৈশবে বন্দি জীবন কাটানোর ফলে শিশুর আস্থা, সম্পর্ক এবং দক্ষতার ওপর প্রভাব পড়বে।’
জানা যায়, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন পুরুষ ও নারী বন্দি রয়েছেন ৭ হাজার ৮৫১ জন। তাদের মধ্যে নারী বন্দির সংখ্যা ৩৬০ জন। যাদের সিংহভাগই মাদক মামলার আসামি। নারী বন্দিদের মধ্যে ৭৫ জন সন্তানকে রেখেছেন নিজের সাথে। মায়ের সাথে বন্দি শিশুদের মধ্যে ৪১ জন হচ্ছে ছেলে এবং ৩৪ জন মেয়ে। এসব শিশু বয়স এক মাস থেকে সাড়ে পাঁচ বছর। তাদের কেউ কেউ আবার কারাগারেই জন্মগ্রহণ করেছেন। বন্দি শিশুদের মধ্যে ১২ জন হচ্ছেন আবার রোহিঙ্গা নাগরিক। তাদের মা মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দি রয়েছেন।
কারাবিধি অনুসারী একজন মা চাইলে শূন্য থেকে ছয় বছরের কম বয়সী শিশু সন্তানদের কারাগারে নিজের সাথে রাখতে পারেন। শিশুদের বয়স ছয় বছরের অধিক হলে কারাগার থেকে পিতার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। যদি পিতাও কারাগারে থাকেন তাহলে মায়ের সম্মতিতে স্বজনদের কাছে দেয়া হয় বন্দি শিশুকে। ক্ষেত্র বিশেষে স্বজন না থাকলে 'সুবিধাবঞ্চিত শিশু’ হিসেবে সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত কোন সংস্থায় রাখা হয় শিশুকে।
বিডি প্রতিদিন/এএম