চট্টগ্রামে বসলো দেশি-বিদেশি চিকিৎসা বিষয়ক গবেষকদের মিলনমেলা। ‘ইনস্টিটিউশনাল রিসার্চ সিম্পোজিয়াম’ (আইআরএস) শীর্ষক সেমিনারে দেশ বিদেশের ৩৪ জন বিখ্যাত গবেষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। একই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ অবদানের জন্য বরেণ্য দুই চিকিৎসককে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে ‘গবেষণার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠন’ শীর্ষক স্মারক বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খান।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু হলে চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ (সিআইএমসি), চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজ (সিআইডিসি) এবং সিআইএমসিএইচ নার্সিং কলেজের যৌথ উদ্যোগে দিনব্যাপী আয়োজিত সিম্পোজিয়ামে তুরস্ক, মালয়েশিয়া, কানাডা ও নিউজিল্যান্ড এবং দেশের বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি), বিএসএমএমইউ, বিসিপিএস, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর এবং সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশন এর প্রধান গবেষকগণও তাঁদের গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন ডেভেলপমেন্ট ফর এডুকেশন সোসাইটি এন্ড হেলথ এর এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী দ্বীন মুহাম্মদ। সিআইএমসি’র অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আমির হোসেন এবং চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মুসলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং ডিভিশন অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স এন্ড রিসার্চ (ডায়ার) এর প্রধান ডা. মেহেরুন্নিছা খানমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সিম্পোজিয়ামে ৮টি সেশনে প্যানেল এক্সপার্ট হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রকাশ করেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ও গবেষক অধ্যাপক ডা. এম.এ. ফয়েজ, অধ্যাপক ডা. রিদুয়ানোর রহমান (বিসিপিএস প্রতিনিধি), অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিনিধি), অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবির তালুকদার (বিএমএন্ডডিসি প্রতিনিধি), অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার দত্ত, অধ্যাপক ডা. এম.এ. হাসান চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. রাশেদা সামাদ, অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার, অধ্যাপক ডা. শামীম হাসান, অধ্যাপক ডা. মনোয়ারুল হক শামীমসহ ১৪ জন গবেষক। অনুষ্ঠানে দেশের মেডিকেল গবেষণায় অনন্য অবদানের জন্য চট্টগ্রামের দুইজন প্রধান গবেষক ও কৃতি চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এম.এ. ফয়েজ ও অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খানকে ‘আজীবন সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. এম.এ. ফয়েজ মেডিকেল গবেষণাকে ব্যক্তি পর্যায় থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্প্রসারিত করেছেন। তাঁর গবেষণার দিক নিদের্শনার আলোকে ম্যালেরিয়া, সর্প ধ্বংশন ও জলাতংকসহ গুরুত্বপূর্ণ রোগের চিকিৎসা সেবার ‘ন্যাশনাল গাইডলাইন’ প্রণীত হয়েছে। অপরদিকে চট্টলার আরেক কৃতিসন্তান অধ্যাপক ডা. ইসমাইল খান চট্টগ্রামে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর হতে চিকিৎসা এবং শিক্ষার পাশাপাশি মেডিকেল গবেষণার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে তাঁর উদ্যোগে ৮৫টি গবেষণা কাজে অসংখ্য গবেষক চিকিৎসক গবেষণা কাজে সম্পৃক্ত হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে ‘গবেষণার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠন’ শীর্ষক স্মারক বক্তব্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খান বলেন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও নতুন জ্ঞান সৃজন করতে গবেষণার বিকল্প নেই। গবেষণার মাধ্যমেই নতুন জ্ঞান সৃজন করা জরুরি। কারণ মেডিকেল শিক্ষায় গবেষণালব্ধ জ্ঞান বাস্তবিক চিকিৎসা সেবায় কাজে লাগে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণার প্রতি বিশেষ জোর দেন। বঙ্গবন্ধু মনে করতেন, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি না হলে আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা যাবে না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর একটি বিশেষ দক্ষতা ছিল। তিনি সহজে সমস্যা খুঁজে বের করতে পারতেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতেন। তৎকালীন সময়ে তাঁর নেওয়া প্রতিটি উদ্যোগ এখনও বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাস্তবিক।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ