চালের দামে অস্বস্তি

কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করুন

প্রিন্ট ভার্সন

চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ গুণ বেশি চাল আমদানির পরও বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। বেড়েই চলেছে চালের দাম। বিদেশ থেকে চাল আমদানিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ২৮ কোটি ৬১ লাখ ডলার অর্থাৎ প্রায় ৩৪৪ কোটি টাকা ব্যয় করার পরও সুফল পাচ্ছে না ভোক্তারা। অথচ আগের বছর একই সময়ে ১ কোটি ৩০ লাখ ডলারের চাল আমদানি হয়েছে। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, তিন দফা ভয়াবহ বন্যায় দেশের কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় সরকার বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানি বাড়িয়েছে। খুচরা বাজারে সরবরাহের সম্ভাব্য ধাক্কা বা মূল্যবৃদ্ধি রোধে সরকার বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ চাল আমদানি করে খাদ্য মজুত সমৃদ্ধ করেছে। স্মর্তব্য, ২০২৪ সালের আগস্টে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লাসহ পূর্বাঞ্চলের ১১টি জেলা প্লাবিত হয়। আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ বৃদ্ধি সত্ত্বেও ঢাকায় চালের খুচরামূল্য জানুয়ারির পর থেকে প্রতি কেজি ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায়ীরা উচ্চমূল্যের জন্য সরবরাহ শৃঙ্খলা ব্যাহত হওয়া এবং সরকারি গুদাম থেকে বাজারে সরবরাহের ধীরগতিকে দায়ী করেছেন। সংগ্রহ অভিযান সফল করতে সরকার আসন্ন বোরো মৌসুমে সংগ্রহের জন্য ধান চালের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। আমন মৌসুমে চাল সংগ্রহ সাধারণত কম হয়। কারণ কৃষকরা তাদের খাদ্য চাহিদা পূরণে চাল সংরক্ষণ করেন। ফলে বোরো মৌসুমে ধান চাল সংগ্রহের ওপর খাদ্য মজুত কতটা সমৃদ্ধ হবে, তা অনেকাংশে নির্ভরশীল। স্বাধীনতার পর দেশের জনসংখ্যা আড়াই গুণ বেড়েছে। রাস্তাঘাট, স্থাপনা কলকারখানা ইত্যাদি নির্মাণে কৃষিজমি বিপুলভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। তারপরও আধুনিক চাষাবাদপদ্ধতির বদৌলতে খাদ্য উৎপাদন প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। স্বাধীনতার পর জনপ্রতি খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ বেশ বৃদ্ধি পাওয়ার পর আমদানিনির্ভরতা নিয়ন্ত্রণে থাকছে কৃষকদের কঠিন পরিশ্রমের কারণে। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই খাদ্য উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে। কৃষকদের ন্যায্যমূল্যও নিশ্চিত করতে হবে। কৃষিজমি যাতে অন্য খাতে ব্যবহৃত না হয়, সে বিষয়ে সতর্কতার বিকল্প নেই।