শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ১২ এপ্রিলের ‘মার্চ ফর গাজা’ সমাবেশ ফিলিস্তিনিদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের একাত্মতার যে চিত্র ফুটে উঠেছে তার তুলনা নেই। দুনিয়ার বহু দেশের সংবাদমাধ্যমে এই মহাসমাবেশ বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। এমনকি ইসরায়েলের পত্রপত্রিকায় ঢাকায় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে লাখ লাখ মানুষের সংহতির খবর সবিস্তারে প্রকাশ পেয়েছে। সমাবেশে গাজায় ইসরায়েলি নির্যাতনের প্রতিবাদে নেতানিয়াহু, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির কুশপুতুলে স্লোগানের তালে তালে জুতা মারার খবরকেও তারা প্রাধান্য দিয়েছে বিশেষভাবে।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে দুনিয়ার অর্ধশতাধিক দেশে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়েছে। রহস্যজনক কারণে আরব দেশগুলো কুম্ভকর্ণের ঘুমে নিমগ্ন থাকলেও খোদ ইসরায়েলে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে ফিলিস্তিনি নিধনযজ্ঞের প্রতিবাদে। ইসরায়েলের কমিউনিস্ট পার্টি ইহুদিবাদী শাসক চক্রের বর্বরতাকে ধিক্কার জানিয়ে বড় ধরনের বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে তেলআবিবে। স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবির প্রতিও তারা সমর্থন জানিয়েছে সোচ্চারভাবে। ইসরায়েলিদের চেয়েও বেশি ইসরায়েল দরদি ট্রাম্প সাহেবের যুক্তরাষ্ট্রের মানুষও বড় বড় বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে। ইউরোপের মানুষও ফুঁসে উঠেছে ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ জন্মলগ্ন থেকেই ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে চেয়েছিল ইসরায়েল। প্রবাসী মুজিবনগর সরকার সে লোভনীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দৃঢ়তার সঙ্গে। প্রবাসী সরকারের অভিমত ছিল, দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তিযুদ্ধ ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধযুদ্ধের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। স্বাধীনতার পরও ১৯৭৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ফিলিস্তিনের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের পাঠানোর ঘোষণা দেন। তারপর এক যুগে কয়েক হাজার বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন ফিলিস্তিনিদের হয়ে। যাদের সিংহভাগ ছিলেন জাসদ ও বিভিন্ন বাম দলের সদস্য। বেশ কয়েকজন হিন্দু ও খ্রিস্টান স্বেচ্ছাসেবীও যোগ দেন ইসরায়েলি দখলদারত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের প্রকাশিত ১৯৮৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়, আশির দশকে প্রায় আট হাজার বাংলাদেশি প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন পিএলওর হয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। যাদের মধ্যে শতাধিক শহীদ হয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন অন্তত ৪৭৬ জন বাংলাদেশি। বাংলাদেশের যুবকরা সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করে ফিলিস্তিনি ভাইদের জন্য লড়াই করতে গেছেন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে। ইহুদিবাদীদের হাত থেকে পবিত্র মসজিদ আল আকসা মুক্ত করাও ছিল তাদের লক্ষ্য।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ফিলিস্তিন মুক্তির লক্ষ্যে মুসলিম দেশগুলোর ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। গত ৫৪ বছরে বাংলাদেশে যখন যে সরকার এসেছে তারা ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকার ক্ষেত্রে অভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। ১২ এপ্রিলের ‘মার্চ ফর গাজা’ সমাবেশে হাজার হাজার মাদ্রাসাছাত্রের অংশগ্রহণ অনেকেরই নজর কেড়েছে। যাদের হাতে ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা। গলায় ছিল ফিলিস্তিনিদের স্কার্ফ। যে স্কার্ফ দুনিয়াজুড়ে ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী বাম রাজনৈতিক দল সিপিএমের সদ্যসমাপ্ত কংগ্রেসে কাউন্সিলররা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন গলায় স্কার্ফ বেঁধে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি গণহত্যা দুনিয়াজুড়ে শান্তিকামী মানুষের অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। যা স্বাধীন ফিলিস্তিন দাবির প্রতি ইউরোপকে কাছে টানতে সক্ষম হয়েছে। তবে এ সমর্থন শেষ পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে কি না, তা বড় মাপের প্রশ্ন। কারণ ইসরায়েলের চক্রান্তে ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলন পরস্পরবিরোধী শিবিরে দ্বিধাবিভক্ত। অনেকেরই জানা, ১৯৫৮-৬০ সালে ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ফিলিস্তিনের মুক্তির লক্ষ্যে ফাতাহ নামের দল। অচিরেই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ফাতাহ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এ দলের সমান্তরালে গড়ে ওঠে আরও কিছু সংগঠন। পরবর্তী সময়ে আরাফাতের নেতৃত্বে ওই সব সংগঠনের জোট হিসেবে গড়ে ওঠে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পিএলও।
ষাটের দশকে বিশ্ব ছিল দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে আমেরিকার নেতৃত্বে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি ইত্যাদি দেশগুলোর জোট। অন্যদিকে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো। মতাদর্শগতভাবে চীনও ছিল আমেরিকাসহ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর বিরুদ্ধে। ফিলিস্তিন মুক্তি আন্দোলনের প্রতি সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর সমর্থন ছিল জোরালো। দুই জোটের বাইরে ছিল ভারত, মিসর, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশগুলোর নেতৃত্বাধীন জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন। যাদের সমর্থনও ছিল ফিলিস্তিনিদের দিকে। ’৬০ ও ’৭০ দশকে ফিলিস্তিনিদের মুক্তিসংগ্রাম অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হয় জাতিধর্মনির্বিশেষে ফিলিস্তিনিরা। ১৯৬৯ সালের ২৯ আগস্ট ইতালির রোম বিমানবন্দর থেকে ওড়ার ১০ মিনিটের মধ্যে হাইজ্যাক হয় ইসরায়েলি যাত্রীবাহী বিমান। বিমানটি হাইজ্যাকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বামপন্থি ফিলিস্তিনি সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের চে গুয়েভারা কমান্ডো গ্রুপের দুই সদস্য। বিমান হাইজ্যাকের নেতৃত্ব দেন লায়লা খালেদ নামের এক ফিলিস্তিনি তরুণী। তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন সেলিম ইসাভি নামের এক তরুণ।
‘শুট দ্য উইমেন ফার্স্ট’-এর লেখিকা আইলিন ম্যাকডোনাল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লায়লা খালেদ বলেছেন, ‘ফ্লাইট ক্রুরা খাবার পরিবেশন করা শুরু করতেই সেলিম ইসাভি লাফিয়ে উঠে ককপিটে পৌঁছে যান। আমিও আমার কোলে থাকা হ্যান্ড গ্রেনেড হাতে নিয়ে তার পেছনে দৌড়ে যাই।’
তা দেখে বিমানবালার হাত থেকে ট্রে পড়ে যায় এবং তিনি জোরে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় তার কোমরে আটকে থাকা পিস্তলটা প্যান্টের ভিতর দিয়ে গলে বিমানের মেঝেতে পড়ে যায়। এরপর লায়লা এবং ইসাভি চিৎকার করে বলেন, ‘প্রথম শ্রেণির সব যাত্রী এবং ক্রুদের বিমানের পেছনে ইকোনমি ক্লাসে যেতে হবে।’ লায়লা বিমানটিকে ইসরায়েলের লোদ বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
বিমানটি ইসরায়েলে গেলে তিনটি মিরাজ বিমান এটিকে ঘিরে ধরে। লায়লা সে অবস্থায় পাইলটকে নির্দেশ দেন বিমানটি দামেস্কে নিয়ে যাওয়ার জন্য। পাইলট অস্বীকার করলে তাকে গ্রেনেড দেখানো হয়। ফলে তিনি সুবোধ বালকের মতো লায়লার নির্দেশ পালন করেন। দামেস্কে বিমানটি ল্যান্ড করলে সেটি বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়। বিশ্বের প্রথম নারী বিমান হাইজ্যাককারী হিসেবে লায়লা খালেদের নাম প্রচারিত হয় দুনিয়াজুড়ে। তাকে হত্যা করার জন্য ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ উঠেপড়ে লাগে। এ অবস্থায় প্লাস্টিক সার্জারি করে লায়লা তার চেহারা পাল্টে ফেলেন। সিদ্ধান্ত নেন আবারও বিমান হাইজ্যাকের।
১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বরে, লায়লা খালেদ লেবানন থেকে ইউরোপে চলে যান। ৪ সেপ্টেম্বর, জার্মানির স্টাটগার্টে তিনি প্যাট্রিক আর্গুয়েলোর সঙ্গে দেখা করেন। বামপন্থি প্যাট্রিক ইসরায়েলি বিমান হাইজ্যাকিংয়ে লায়লাকে সাহায্য করেন। ৬ সেপ্টেম্বর দুজন নিউইয়র্কের টিকিট নিয়ে স্টাটগার্ট থেকে আমস্টারডাম যান। প্যাট্রিক আমেরিকায় জন্ম নেওয়া নিকারাগুয়ার নাগরিক। আমস্টারডামে তারা দুজন নিউইয়র্কের উদ্দেশে ইসরায়েলি এয়ারলাইনসের বোয়িং ৭০৭ বিমানে চড়েন। সারা আরভিং তার বই ‘লায়লা খালেদ : আইকন অব প্যালেস্টিনিয়ান লিবারেশন’-এ লিখেছেন, ‘তারা দুজন যখন বিমানে ওঠেন, তখন তারা জানতেন না, তাদের দুই সহকর্মী যাদের এই ছিনতাইয়ে সাহায্য করার কথা ছিল তাদের বিমানে সিট দিতে অস্বীকার করেছিল ইসরায়েলি এয়ারলাইনসের কর্মকর্তারা।’
‘ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করার সময়, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বিমান হাইজ্যাকের জন্য দুইজনের বেশি মানুষের প্রয়োজন হবে। কারণ ওই বিমানে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী ছিল এবং বিমানের আরোহীদের তিনবার তল্লাশি করা হয়।
ডেভিড রাব তার বই ‘টেরর ইন ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর’-এ লিখেছেন, ‘লায়লা খালেদ তার বিশেষভাবে তৈরি ব্রা থেকে দুটি হ্যান্ড গ্রেনেড বের করেন, কিন্তু তখনই বিমানে থাকা সশস্ত্র রক্ষীরা গুলি চালাতে শুরু করেন। পাইলট ককপিটের দরজা বন্ধ করে দেন। লায়লা খালেদের সহযোগী প্যাট্রিক পাল্টা গুলি চালাতে শুরু করলে এতে শ্লোমো ওয়েডার নামে এক নিরাপত্তারক্ষীর পায়ে গুলি লাগে। অন্যদিকে প্যাট্রিকও গুলিবিদ্ধ হন।
এ সময় লায়লা খালেদের ওপর দুই প্রহরী ও যাত্রীরা হামলা চালান। লোকজন তাকে মারধর করতে থাকলে তার পাঁজরের কয়েকটি হাড় ভেঙে যায়। এর মধ্যেই বিমানটির চৌকশ পাইলট বিমানটিকে হঠাৎ নিচের দিকে ওড়াতে শুরু করেন। আকস্মিক ওই ড্রাইভ দেওয়ার ফলে লায়লা খালেদ ভারসাম্যহীন হয়ে বিমানের মেঝেতে পড়ে যান। তবে বিমানের ওই হঠাৎ ঝাঁকুনিতে যাত্রীদের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়েনি, কারণ তাদের সিটবেল্ট বাঁধা ছিল। বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে লায়লা খালেদ বলেছেন, ‘আধা ঘণ্টা পর তারা উঠে দাঁড়ান এবং তিনি দাঁত দিয়ে হ্যান্ড গ্রেনেডের পিন সরানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তার আগেই কেউ একজন তার মাথার পেছনে আঘাত করলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। বিমানটি লন্ডনে নামলে সেখানে গ্রেপ্তার করা হয় লায়লা খালেদকে। বিমানের মধ্যেই নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে মারা যান প্যাট্রিক আর্গুয়েল। লায়লা বলেছেন, প্যাট্রিকের মৃত্যু তাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। কারণ যুদ্ধটা আমাদের। আমার মৃত্যু হলে সেটি হতো যথার্থ। প্যাট্রিক ছিল ভিনদেশি। ফিলিস্তিনের বন্ধু হিসেবে সে আমাদের সাহায্য করেছে।
১৯৮৫ সালের ২৩ নভেম্বর গ্রিসের এথেন্স থেকে কায়রো অভিমুখে রওনা হওয়ার ১০ মিনিট পর মিসরের যাত্রীবাহী বিমান হাইজ্যাক করে ফিলিস্তিনি চরমপন্থি দল আবু নিদাল। বিমানটিকে লিবিয়ায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কায়রোতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মিসরীয় সেনাবাহিনী বোয়িং ৭৩৭ বিমানটিতে অভিযান চালায়। সেই অভিযানে ৮৬ জন যাত্রীর ৫৬ জন, ছয়জন ক্রুর মধ্যে দুইজন, তিন ছিনতাইকারীর দুইজন প্রাণ হারান।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের মুক্তিযুদ্ধ চলছে ৭৭ বছর ধরে। অপ্রিয় হলেও সত্য, এটি এমন এক যুদ্ধ, যার সমাধান অস্ত্র দিয়ে সম্ভব নয়। সব আরব দেশ একসঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করলে তারা কত দিন টিকে থাকবে তা নিশ্চিত নয়। আর ফিলিস্তিনিরা যত ক্ষুদ্র জাতি হোক তাদের নিধন করা যাবে, এমনটি ভাবলেও তা হবে মস্ত বড় ভুল। দুনিয়ার কোনো দেশের মানুষের মুক্তির স্পৃহাকে শক্তি বলে দমানো যায় না। একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সে সত্যিই প্রমাণ করেছে। স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠায় প্রধান বাধা ফিলিস্তিনিদের অনৈক্য। যেকোনো দেশের জাতীয় মুক্তির লড়াইয়ে সে দেশের সব মানুষের ঐক্যের বিকল্প নেই। একাত্তরে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সব ধর্মের মানুষ জড়ো হয়েছিলেন এক কাতারে। পাহাড় ও সমতলের মানুষের দুর্জয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল দেশমুক্তির লড়াইয়ে। এ কারণে পাকিস্তানিরা হার মানতে বাধ্য হয়েছিল। ফিলিস্তিনিদের দুর্জয় ঐক্য ছিল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের প্রধান ভরসা। সেই ঐক্যে ফাটল ধরাতে সক্রিয় হয় ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা। হামাসসহ ফিলিস্তিনের বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক সংগঠন গড়ে তোলার পেছনে ইসরায়েল সরকারের যে হাত ছিল, তা এখন তারা নিজেরাও অস্বীকার করে না। এসব সংগঠনের নেতা-কর্মীর দেশপ্রেম ও ধর্মীয় অনুগত্য নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু এসব সংগঠনের কারণে ফিলিস্তিনের ঐক্য যে পথহারা হয়েছে তা এক নিষ্ঠুর সত্যি। ফিলিস্তিনের মুক্তি চাইলে আগে হামাস ও পিএলওকে এক কাতারে দাঁড়াতে হবে।
লেখক : সিনিয়র সহকারী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন
ইমেইল : [email protected]