হলিউডের অভিনেত্রী গ্রেটা গার্বো ও মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের মধ্যে একটা মিল রয়েছে। আর তা হলো এই দুই অভিনেত্রীই অভিনয় জগৎ থেকে স্বেচ্ছায় নির্বাসন নিয়ে আড়ালে সরে গিয়েছিলেন। তবে এই মিলটুকু বাদ দিলে দু'জনের মধ্যে অমিলই বেশি চোখে পড়ে।
জন্ম ১৯০৫ সালে জন্মগ্রহণকারী গ্রেটা গার্বো ছিলেন চল্লিশের দশকের অভিনেত্রী। তার মৃত্যু হয় ৮৫ বছর বয়সে ১৯৯০ সালে। ১৯২৪ সালে প্রথম তাকে দেখা যায় 'দ্য সাগা অফ গোস্টা বার্লিং' নামের সুইডিশ ছবিতে। এই ছবির মাধ্যমেই তিনি এমজিএম'র নজর কাড়েন এবং স্থান পান হলিউডে। ১৯২৬ সালে মুক্তি পায় প্রথম নির্বাক ছবি 'টরেন্ট'। এ ছবি দিয়ে হলিউডে গ্রেটা গার্বোর শুরু। সবাক ছবি 'অ্যানা ক্রিস্টি' হল তার প্রথম কথা বলা ছবি। ছবিটির বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল 'গার্বো টকস'।
১৯৪১ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে ২৮টা ছবি করে হঠাৎ করে গ্রেটা সিদ্ধান্ত নেন ছবির জগতকে বিদায় জানানোর। এরপরে তার কাছে বেশকিছু ভালো ছবির অফার এলেও তিনি ফিরিয়ে দেন। নির্বাসন নেওয়ার পর তিনি নিভৃতে জীবন-যাপন করা শুরু করেন। এইখানেই সুচিত্রার সঙ্গে গ্রেটা গার্বোর মিল। কিন্ত্ত শেষ ৩৬ বছর সুচিত্রা সেনকে কেউই দেখতে পায়নি আর গার্বো তার সমস্ত এক্সেন্ট্রিসিটি, অবসাদ এবং বিচিত্র মুড নিয়ে শেষদিন পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। মাঝে মাঝেই তিনি বলতেন, আমি এই মুহূর্তে হয়তো খুব সুখে আছি, আবার পরের মুহূর্তেই মনে হয় জীবনে আর কিছু নেই।
গার্বোর অন্যতম শখ ছিল ছবি সংগ্রহ করা। একজন সফল আর্ট কালেক্টার হিসেবে তিনি পরিচিতিও পেয়েছিলেন। কখনও কখনও রাস্তায় ঘোরাঘুরি করতেন। রোদ চশমা আর কাপড়ে নিজেকে ঢেকেও পাপারাজ্জির চোখ এড়িয়ে যেতে তিনি পারেননি। 'গার্বো ওয়াচিং' ছিল তাকে ঘিরে ফটোগ্রাফারদের একটা লুকোচুরি খেলার অঙ্গ। গ্রেটা গার্বো সারাজীবন বিয়ে করেননি, একাই জীবন কাটিয়েছেন। তবে আচমকা তার সফল অভিনেত্রী জীবন থেকে নির্বাসনে চলে যাওয়ার কারণটি আজতক অজানা রয়ে গেছে।
সুচিত্রা সেনকে ঘিরে অবশ্য পাপারাজ্জিদের লুকোচুরি খেলার কোনও সুযোগই ছিল না। তার স্বেচ্ছা নির্বাসনের কারণটাও ঠিকঠাক কারও জানা নেই। ভারত মহারাজের সান্নিধ্যে তার মধ্যে আধ্যাত্মিকতার বোধ প্রবেশ করলেও সেটাই নির্বাসনের কারণ বলে ভাবা যায় না। কেউ কেউ বলেন, 'প্রণয়পাশা' ছবির শুটিং ফ্লোরে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, কেয়া চক্রবর্তী এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার মনোমালিন্যের কারণেই তিনি অভিনয় জগৎ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন।