আমজাদ হোসেন
সাহিত্যকর্ম আর নাটক নির্মাণের মধ্য দিয়ে সময় কাটছে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের। ১৯৬৭ সালে 'জুলেখা' নির্মাণের মাধ্যমে পরিচালনায় আসেন। দুই ডজনেরও বেশি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তিনি। পেয়েছেন জাতীয় ও বাচসাসসহ নানা পুরস্কার। টিভিনাটকেও ষাটের দশক থেকে সমান জনপ্রিয়তায় নির্মাণ ও অভিনয় করছেন তিনি। তার নির্মিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হচ্ছে_ নয়নমণি, গোলাপী এখন ট্রেনে, সুন্দরী, কসাই, সখিনার যুদ্ধ, ভাত দে, দুই পয়সার আলতা, জন্ম থেকে জ্বলছি, আদরের সন্তান ইত্যাদি। ২০১০ সালে তার সর্বশেষ নির্মিত চলচ্চিত্র 'গোলাপী এখন বিলেতে' মুক্তি পায়। ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট জামালপুরে জন্মগ্রহণকারী এই ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব একাধারে অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, কাহিনীকার, সংলাপকার, গীতিকার, নাট্যকার, গল্পকার ও ঔপন্যাসিক।
আজিজুর রহমান
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আজিজুর রহমান অনেকটা নীরবে-নিভৃতে দিন কাটাচ্ছেন গ্রিনরোডের বাসায়। সর্বশেষ ২০০৮ সালে তার নির্মিত 'ডাক্তার বাড়ী' মুক্তি পায়। একাধিকবার জাতীয় ও বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ১৯৩৯ সালে শান্তাহারে জন্মগ্রহণকারী এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব একাধারে পরিচালক, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার ও অঙ্কনশিল্পী। তার নির্মিত কালজয়ী চলচ্চিত্র হচ্ছে- অশিক্ষিত, ছুটির ঘণ্টা, কুয়াশা, জনতা এঙ্প্রেস, সমাধান, অগি্নশিখা, মাটির ঘর, রঙিন রূপবান ইত্যাদি। অর্ধশতেরও বেশি সফল চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণ করার ইচ্ছা রয়েছে আজিজুর রহমানের। এই নির্মাতার কথায় এ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ কোনো চলচ্চিত্র
নির্মাণ হয়নি। কারণ নির্মিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলোতে শুধু পাকিস্তানের বর্বরতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, ভারতের সহযোগিতার দিকটি দেখানো হয়নি।
চাষী নজরুল ইসলাম
বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র 'ওরা ১১ জন'-এর নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম এখনো নির্মাণে সক্রিয় রয়েছেন। ঢালিউডে তিনিই একমাত্র নির্মাতা যিনি সবচেয়ে বেশি মুক্তিযুদ্ধ এবং সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। ২০০৪ সালে একুশে পদক, ২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক কালাকার, সর্বোচ্চ সংখ্যক জাতীয় ও বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন। তার নির্মিত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হচ্ছে সংগ্রাম, দেবদাস, শুভদা [এই চলচ্চিত্রটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৪টি পুরস্কার পায়], চন্দ্রনাথ, ভালো মানুষ, বিরহ ব্যথা, শুভা, শাস্তি, হাছন রাজা, হাঙর নদী গ্রেনেড, শিল্পী ইত্যাদি। বর্তমানে 'ভুল যদি হয়' এবং 'অন্তরঙ্গ' শিরোনামে দুটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন তিনি। প্রখ্যাত এই নির্মাতা ১৯৪১ সালের ২৩ অক্টোবর বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছা ছিল বলিউডের নায়ক হওয়ার। এ জন্য বোম্বে গিয়ে মিনা কুমারীর সঙ্গে দেখা করেন।
ছটকু আহমেদ
১৯৭২ সালে হৃতি্বক ঘটকের 'তিতাস একটি নদীর নাম' চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে নির্মাণ শুরু ছটকু আহমেদের। এ পর্যন্ত প্রায় দেড় ডজন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন তিনি। লাভ করেছেন জাতীয় ও বাচসাসসহ নানা পুরস্কার। ১৯৮২ সালে প্রথম নির্মাণ করেন 'নাত বৌ'। তার নির্মিত সফল চলচ্চিত্র হচ্ছে- চেতনা, সত্যের মৃত্যু নেই, বুকের ভেতর আগুন, গৃহ বিবাদ, অত্যাচার, বুক ভরা ভালোবাসা, প্রতিবাদী মাস্টার ইত্যাদি। তিনি একাধারে কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার, সংলাপকার, প্রযোজক এবং পরিবেশক। বাংলার বধূ, মিন্টু আমার নাম, সত্য মিথ্যাসহ বহু জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের কাহিনীকার। ১৯৪৬ সালের ৬ অক্টোবর পুরান ঢাকার নারিন্দায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বর্তমানে 'বিপজ্জনক ভালোবাসা' শিরোনামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ ও কয়েকটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রচনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ছটকু আহমেদ।
সিবি জামান
প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অভিনেতা সিবি জামান বর্তমানে মগবাজারের মীরবাগের বাসায় অবসর সময় কাটাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে অভিনয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেও নির্মাণ থেকে বিরত রয়েছেন তিনি। ১৯৬৮ সালে খান আতাউর রহমানের ইউনিটে যুক্ত হন। ১৯৭৩ সালে দর্শকপ্রিয় 'ঝড়ের পাখি' নির্মাণের মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু তার।
১৯৮৩ সালে তার নির্মিত 'পুরস্কার' চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ ছবিসহ ৬টি জাতীয় পুরস্কার লাভ করে। এ ছাড়া একাধিকবার বাচসাসসহ নানা পুরস্কার পান। তার নির্মিত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হচ্ছে- উজান ভাটি, শুভরাত্রি, হাসি, লাল গোলাপ, রাজা বাদশাহ, কুসুম কলি ইত্যাদি। অসংখ্য চলচ্চিত্র এবং টিভিনাটকে অভিনয় করেছেন এবং এখনো করছেন।
১৯৪৩ সালের ১৪ আগস্ট আসামের গৌরীপুরে জন্মগ্রহণকারী সিবি জামান বর্তমানে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির আজীবন এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য।