গতকালের সকালটা ছিল বিবর্ণ। পশ্চিমাকাশে রক্তিম সূর্য হেসে ওঠার আগেই সবাইকে অঝোরে কাঁদিয়ে চলে গেলেন চলচ্চিত্রের মহামানব পর্দা কারিগর চাষী নজরুল ইসলাম। জন্ম মানেই প্রস্থান। কিন্তু সব বিদায় মেনে নেওয়া যায় না। এমন হাসিখুশি একজন প্রাণবন্ত মানুষ কীভাবে অসাড় হয়ে শুয়ে আছেন অতটুকু একটি কাঠের কফিনে। তিনি কি সত্যিই চিরনিদ্রায় শায়িত। আর কখনো কি জেগে উঠবেন না। ক্যামেরার পেছনে দাঁড়িয়ে আর কি কখনো অ্যাকশন, কার্ট বলে জীবনের ছবি তুলবেন না। হ্যাঁ অবশ্যই তুলবেন। কারণ তার মতো এমন একজন সৃষ্টিশীল মহামানবের মৃত্যু নেই। সবার হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন তিনি চিরদিন-চিরকাল...
রাজ্জাক
চাষী ছিল আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমি, চাষী এবং আজাচৌ (আহমাদ জামান চৌধুরী) খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলাম। চলচ্চিত্র জীবনের শুরু থেকে এই দুজন মানুষকে আমি খুব কাছে পেয়েছি। দুজন মানুষই আমাকে একা করে চলে গেলেন। এটা যে কত কষ্টের তা বলে বুঝাতে পারব না।
সুচন্দা
চাষী ভাই বন্ধুসুলভ মানুষ ছিলেন। সত্যিকার অর্থে একজন ভালো মনের মানুষ ছিলেন। গুণী নির্মাতা ছিলেন। তিনি এতটাই স্পষ্টবাদী ছিলেন যে, কোনো সত্যি কথা বলতে দ্বিধাবোধ করতেন না।
খসরু
আমার চলচ্চিত্রের গুরু আর নেই এ কথা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। তিনি কতটা উঁচু মাপের নির্মাতা ছিলেন তা শুধু তার সানি্নধ্যে যারা আসতে পেরেছেন তারাই বুঝেছেন। তার এমন বিদায় অনাকাঙ্ক্ষিত।
আনোয়ারা
তিনি ছিলেন জীবন গল্পের কারিগর। তার ছোঁয়ায় সেলুলয়েডের ফিতায় জীবন আরও জীবন্ত হয়ে উঠত। যে মানুষটি নিথর পর্দায় জীবনের সঞ্চার করতেন তার জীবন কেন এভাবে থেমে যাবে। এ কথা মেনে নেব কীভাবে।
শবনম
এমন একটি দরাজ কণ্ঠের হাসিখুশি মানুষ এভাবে আমাদের কাঁদিয়ে চলে যাবেন, ভাবাই যায় না। এমন গুণী মানুষ আর আসবে না। সত্যিই আমরা শূন্য হয়ে পড়ছি, মেধাবী মানুষেরা একের পর এক চলে যাচ্ছেন।
সোহেল রানা
খুব কাছের এক বন্ধুকে হারালাম। খুব মনে পড়ছে, যখন ওরা ১১ জন-এর শুটিং হচ্ছিল তখন নানা কারণে এর নির্মাণ কাজ থেকে পিছিয়ে পড়তাম মানসিকভাবে। চাষী আমাকে উৎসাহ দিতেন। তার দরাজ কণ্ঠের সেই উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে যেতাম। এভাবেই নির্মিত হলো 'ওরা ১১ জন'।
কবরী
চাষী ভাই অসুস্থ থাকার পরও এতটা হাসিখুশি ছিলেন যে মনেই হতো না তার এত বড় একটা অসুখ হয়েছে। আমরা চলচ্চিত্রের একজন মধ্যমণিকে হারালাম। যিনি সত্যি আমাদের অভিভাবক ছিলেন।
ববিতা
চলচ্চিত্রাঙ্গনে চাষী ভাইয়ের যে অবদান তা তাকে হাজার বছর বাঁচিয়ে রাখবে। আমাদের তিন বোনের সঙ্গে চাষী ভাইয়ের সম্পর্কটা ছিল নিবিড়। আমাদের চলচ্চিত্রাঙ্গনকে তিনি সমৃদ্ধ করে গেছেন। তার আত্দার শান্তি কামনা করছি।
ফারুক
চাষী ভাই খুব মজার একজন মানুষ ছিলেন। সব সময়ই তিনি হাসিমুখে কথা বলতেন। শুটিংয়ের সময় তার মেজাজ খুব খারাপ থাকত যদি মনের মতো কাজ না করতে পারতেন। আমার মনে হয় সৃষ্টিশীল মানুষরা বুঝি এমনই হয়।
শাকিব খান
আমাকে খুব আদর করতেন চাষী স্যার। আমি সম্মান করে তাকে স্যার ডাকতাম। আমার স্যার এত দ্রুত এভাবে চলে যাবেন ভাবিনি।
রিয়াজ
চাষী ভাই এমনই একজন পরিচালক তিনি জানতেন শিল্পীর কাছ থেকে কীভাবে ভালোবাসা দিয়ে কাজ আদায় করে নিতে হয়। যে কজন গুণী পরিচালকের নির্দেশনায় কাজ করেছি চাষী ভাই অন্যতম একজন। তার কাছ থেকে সত্যিকারের অভিনয় কাকে বলে তা শিখতে পেরেছি বলে আজ আমি অভিনেতা রিয়াজ হয়েছি।
ফেরদৌস
স্যারের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ছবি ধ্রুবতারায় কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল। তিনি কতটা উঁচু মাপের নির্মাতা তা বোঝার সুযোগ আমার হয়েছে। যা হয়তো অনেকের ভাগ্যে জোটেনি। তাই নিজেকে ধন্য মনে করছি। স্যার এভাবে আমাদের একা করে চলে যাবেন এটা শুধু আমি নই, অনেকেরই দুঃখবোধ। এই দুঃখ আজ সবার হৃদয়ে।
সম্রাট
আমার সৌভাগ্য তার নির্দেশনায় 'ভুল যদি হয়' চলচ্চিত্রে কাজ করতে পেরেছি। একজন ভাস্কর কাদা মাটি দিয়ে মনের মতো যেমন অবয়ব তৈরি করেন, চাষী আঙ্কেলও আমাকে সেভাবেই তার চলচ্চিত্রে কাজে লাগিয়েছেন।
মৌসুমী
স্যার আমাকে বলেছিলেন, চন্দ্রমুখী চরিত্রটি শুধুই তোমার জন্য। তুমিই পারবে এটি ফুটিয়ে তুলতে। কতটুকু পেরেছি জানি না। তবে যতটুকু পেরেছি তা শুধু স্যারের চেষ্টাতেই সম্ভব হয়েছে। এমন একজন মানুষের সঙ্গে কাজ করা মানে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করা। যা আর আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।
পূর্ণিমা
চাষী স্যারের সঙ্গে সম্পর্কটা বেশ গভীর ছিল। যে কারণে আমি তাকে ডার্লিং বলে ডাকতাম আর তিনি আমাকে সুইটহার্ট বলে ডাকতেন। 'মেঘের পর মেঘ' চলচ্চিত্রে আমার সাদাকালো একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ব্যবহার হয়। মাঝখানে সিঁথি করা সেই ছবিটি তার মানিব্যাগে সব সময় থাকত। সত্যি বলতে তিনি আমাকে অনেক আদরও করতেন, ভালোবাসতেন।
অপু বিশ্বাস
স্যার আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। দেবদাস ছবিতে আমার স্বপ্নের চরিত্র 'পার্বতী' রূপে আমাকে কাস্ট করে আমার অভিনয় জীবনের পূর্ণতা এনে দিয়েছিলেন। ইচ্ছা ছিল স্যারের আরও ছবিতে কাজ করব। কিন্তু তিনি যে এভাবে আমাদের একা ফেলে চলে যাবেন তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। স্যার যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন। আপনার প্রয়াণ নেই। আমাদের পাশেই আছেন চিরদিন।