নতুন কি কাজ করছেন?
আমি বর্তমানে বেশ কিছু কাজে হাত দিয়েছি। প্রাথমিকভাবে তিনটি ভিন্ন ঘরানার অ্যালবাম করছি। তার মধ্যে রয়েছে, দশটি ছায়াছবির গান নিয়ে একটি অ্যালবাম। আমি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ১৫টি গান লিখেছি। আর রবীন্দ্রনাথের ১৫টি গান নিয়ে একটি অ্যালবাম প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। এ ছাড়া নজরুলকে নিয়ে ঠিক একই ধরনের একটি অ্যালবাম করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
আরও একটি ভিন্ন ধারার অ্যালবাম করার চিন্তা ছিল আপনার।
এক হাজার কবির এক হাজার গান দিয়ে একটি অ্যালবাম করার প্ল্যান আছে আমার। আমি মনে করি এটি একটি বড় আর্কাইভ হয়ে থাকবে আমাদের দেশে। কিন্তু এই অ্যালবামটি আমার একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এটি করতে পাঁচ-ছয় বছর সময় লাগবে। আমি যদি ভালো কোনো স্পন্সর না পাই কাজটি করতে পারব না। কিন্তু আমার কাছে এই অ্যালবামটি করার জন্য যা যা দরকার সব আছে।
আবার দেশের বাহিরে যাচ্ছেন কবে?
আমি মে মাসে জাপানে যাব। এর আগেই আমি আমার তিনটি অ্যালবামের কাজ শেষ করে যেতে চাই। এ ছাড়া আরও কিছু অসমাপ্ত কাজ আছে, এই দুটি মাসে আমি করে ফেলব।
যুদ্ধের গল্প শুনতে চাই আপনার কাছে।
পাকবাহিনীদের বিপক্ষে ওই সময় আমার বেশ কিছু গান ছিল। আর খুব জনপ্রিয়ও ছিল গানগুলো। আমার মা জানত পাকবাহিনীরা আমাকে পেলে মেরে ফেলবে। তাই মা আমাকে বলেছিলেন, 'মরবি যখন তাদের মাইরা মরবি'। তাই এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই মা-বাবার উদ্দেশে পড়ার টেবিলে একটি চিঠি লিখে রেখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
আপনি তো পাকবাহিনীদের হাতে ধরা পড়েছিলেন?
হ্যাঁ, কসবা সীমান্ত দিয়ে আগরতলা যাওয়ার পথে নরসিংদী মিতালী সিনেমা হলের মোড়ে আমি আর আমার কিছু বন্ধু ধরা পড়লাম পাকবাহিনীর হাতে। আমার ব্যাগে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একটি ছবি থাকায় আমি ঘাবড়িয়ে ছিলাম। একপর্যায়ে স্তূপ করা ব্যাগগুলো ওরা ট্রাকে তুলে সরিয়ে নিয়ে গেলে আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। উর্দু ভাষায় কথা বলতে পারার কারণে পাকসেনাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে সক্ষম হলাম। কিন্তু বিপত্তি ঘটল এই যে, ওরা আমাকে দোভাষী হিসেবে ব্যবহার করার জন্য আমাদের দলের সবাইকে ছেড়ে দিলেও আমাকে ছাড়ল না। বাধ্য হয়েই ওদের নির্দেশ মেনে থেকে যেতে হলো আমাকে। ফলে ওদের অত্যাচারের মাত্রাটাও দেখার সুযোগ হলো। যেমন, কাউকে সন্দেহ হলে কোনো কিছু বলার আগেই তাকে গুলি করে মেরে ফেলত। আর পছন্দমতো যুবতীদের জোর করে একটি কক্ষে আটকে রেখে ওরা যখন যার খুশি মতো ধর্ষণ করত। আমার জীবনে এর চেয়ে কষ্টকর স্মৃতি আর নেই। ভয়াবহ সেই দিনগুলো। সবই দেখছি, কিন্তু কিছুই বলতে বা করতে পারছি না। এ যে কতটা কষ্টের, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আমি পাঁচ দিন পর পাকবাহিনীর হাত থেকে ছাড়া পাই। এমন অনেক স্মৃতি আছে যুদ্ধকে ঘিরে।
আলী আফতাব