নায়করাজ রাজ্জাক দেশীয় চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি, দিকপাল। আজীবন সম্মাননাসহ একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তার অর্জনের ঝুলিকে সমৃদ্ধ করেছে। এবার এই অর্জনে যোগ হলো সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান 'স্বাধীনতা পদক'। এই প্রাপ্তির অনুভূতি কতটা উদ্বুদ্ধ করেছে তাকে। সে কথাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি। নায়করাজের ইন্টারভিউ নিয়েছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
স্বাধীনতা পদক- সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান। এই প্রাপ্তির অনুভূতির রং কেমন?
অনুভূতি তো রংধনুর মতো সাতরঙা। একেক সময় একেক রকম। আমি গর্বিত, কৃতজ্ঞ। দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদকে আমাকে ভূষিত করা হলো। এ জন্য সরকার, সংশ্লিষ্ট সবাই, দর্শক-ভক্ত ও দেশের মানুষকে জানাচ্ছি আন্তরিক ধন্যবাদ। পদক ঘোষণার পর থেকে এত বেশি পরিমাণে ফোনকল ও শুভেচ্ছা পাচ্ছি যে, মনে হচ্ছে আমার চেয়েও দেশের মানুষ ও দর্শক-ভক্তরা অনেক বেশি খুশি। তাদের ভালোবাসায় সত্যিই আমি অভিভূত। আমি সারাজীবন আপনাদের জন্য অভিনয় করে গেছি। যতটা না আপনাদের দিতে পেরেছি, তার থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসা আপনারা আমাকে দিয়েছেন।
পদক লাভের পর চলচ্চিত্র জগৎ নিয়ে নতুন করে কিছু ভাবছেন?
অবশ্যই। স্বাধীনতা পদক লাভের পর মনে হচ্ছে দেশ ও মানুষের জন্য আমার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। আমি যেহেতু চলচ্চিত্রকার তাই আরও উন্নত চলচ্চিত্র নির্মাণ ও অভিনয়ের মাধ্যমে দেশ ও সমাজের কল্যাণ করতে চাই। সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম চলচ্চিত্র জগৎ থেকে অবসর নেব। কিন্তু এখন সেই চিন্তা পাল্টে ফেলেছি। ঠিক করেছি বছরে কমপক্ষে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ ও ভালোমানের চলচ্চিত্রে অভিনয় করব। চলচ্চিত্র জগৎকে আরও পূর্ণতা দেব। কারণ চলচ্চিত্রের জন্যই আজ আমি চলচ্চিত্রকার রাজ্জাক।
রাষ্ট্রীয় সম্মান ও মানুষের ভালোবাসা পেলেন, সবার উদ্দেশ্যে কী বলবেন?
একটি কথাই বলব, সবাইকে আন্তরিকভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন এবং দেশকে ভালোবাসতে হবে। তাহলেই মানুষ তার নিজের কাজের স্বীকৃতি পাবে। আমি অক্লান্ত পরিশ্রম করে এবং নিজের পেশাকে ভালোবেসে আজকের এই অবস্থানে আসতে পেরেছি। তাহলে অন্যরা কেন পারবে না। আমার কাছে কাজ হলো প্রার্থনার মতো। আমার অনুরোধ কাজকে সবাই প্রার্থনা হিসেবে গ্রহণ করুন, তাহলে সাফল্য আসবেই। আরেকটি কথা, সবার ওপর দেশ। এই দুটি বিষয়কে সবসময় গুরুত্ব দিয়েছি বলে আজ আমি এর পুরস্কারও পেয়েছি। অন্য যারা আজ এই পদক পেলেন তারা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে একেক জন দিকপাল। তাদের সামনে আমি কিছুই না। অত্যন্ত নগণ্য একজন মানুষ। তারপরও দেশ ও পেশাকে ভালোবেসে এগিয়েছি বলে সাধারণ মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসা পেয়েছি এবং দেশ আমাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে। এভাবে এগিয়ে গেলে এর সুফল অবশ্যই পাওয়া যায়।
চলচ্চিত্র জগতের প্রাপ্তিকে কীভাবে উপভোগ করছেন?
চলচ্চিত্র জগৎ আমাকে শতভাগ পূর্ণতা দিয়েছে। চলচ্চিত্রের কারণে আজ আমার যশ, খ্যাতি, অর্থবিত্ত এবং সুন্দর একটি পরিবার হয়েছে। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে। চলচ্চিত্রকার বলেই জাতিসংঘ আমাকে শুভেচ্ছাদূত নিযুক্ত করে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পেয়েছি। একাধিকবার জাতীয় ও বাচসাসসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছি। সবচেয়ে বড়কথা হলো দেশ ও জনগণের অফুরন্ত ভালোবাসা পেয়েছি। এরপর আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই। এখন দেশ ও জনগণের কল্যাণে আরও কাজ করে যেতে চাই। এক্ষেত্রে একটি কথাই বলব, ভালো কাজ করতে গেলে বাধা আসবে, ঘাত-প্রতিঘাত থাকবে, তাই বলে থেমে গেলে চলবে না। আত্দবিশ্বাস, সততা, দেশপ্রেম ও আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে জীবনে সাফল্য অবশ্যই আসবে।
আজ বাপ্পারাজ পরিচালিত প্রথম ছবি 'কার্তুজ' মুক্তি পাচ্ছে। অন্যদিকে আপনি স্বাধীনতার পদক পেলেন। দুটি সুখবর একসঙ্গে।
হ্যাঁ। এই ভালো লাগার কথা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল বাপ্পা পরিচালনায় আসবে। সেই স্বপ্ন আজ পূরণ হলো। ওর 'কার্তুজ' মুক্তির লগ্নে আমি স্বাধীনতা পদক পেলাম। মনে হচ্ছে পরিচালক হিসেবে বাপ্পার শুভযাত্রার ইঙ্গিত এটি। বাপ্পা, সম্রাটসহ আমার পরিবারের সবার জন্য রইল শুভকামনা। সেই সঙ্গে প্রিয় দর্শক-ভক্তদের বলব আপনারা সিনেমা হলে গিয়ে 'কার্তুজ' দেখুন এবং বাপ্পাকে উৎসাহ দিন। সে যেন সুনির্মাণ নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে।
বাপ্পারাজ পরিচালক হিসেবে এগিয়ে যেতে পারবে?
পারবে। ওর মধ্যে মেধা আছে। ও জানে সবকিছু। কার্তুজ দেখলে দর্শকও টের পাবে- একজন ভালো নির্মাতা এসেছে ইন্ডাস্ট্রিতে।