পঞ্চগড়ের তরুণ মেধাবী সঙ্গীত শিল্পী রইসউদ্দিন। পঞ্চগড়ের এক প্রত্যন্ত গ্রামে বাস করলেও গানের মাধ্যমে তার নাম ছড়িয়েছে দেশ জুড়ে। জেলার পাশাপাশি তিনি গান করেছেন দেশের বিভিন্ন এলাকায়। শুধু তাই নয় ২০১৬ সালে একটি রাষ্ট্রীয় অনূদান প্রাপ্ত সিনেমাতেও প্লেব্যাক করেন এই শিল্পী।
পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার লাঠুয়াপাড়া গ্রামে বাস করেন লোকশিল্পী রইসুদ্দিন। বাবা আবু বকর ছিদ্দিকের স্বপ্ন ছিলো গান গাওয়া। নানা কারণে তা হয়ে না ওঠায় বিয়ের পর স্ত্রীকে গান শেখান তিনি। জমি বন্ধক রেখে একটা পুরোনো হারমোনিয়াম কেনেন রইসুদ্দিনের মা রেহানা বেগম। তাই দিয়েই গান শুরু করেন তিনি। এরপর মাত্র আট বছর বয়সে রইসুদ্দিন মায়ের কাছে গান শেখা শুরু করেন । গ্রামের এক বৃদ্ধ তার হাতে তুলে দেন স্বরাজ। তাই দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। অভাব অনটনের সংসারে গানই একমাত্র উপার্জনের রাস্তা হয়ে দাঁড়ায় তার।
মা রেহানা বেগম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ৮০’র দশকে সংসারে খুব টানাপোড়েন ছিল। দু'বেলা খাবার জুটত না ভালো করে। স্বামীর আগ্রহে কষ্ট করে গান শিখলাম। দুই বছরে গান গাইতে লাগলাম। রইসুদ্দিন একটু বড় হলে তাকেও গান শেখাতে শুরু করলাম।
এরপর তিনজন মিলে হাটে বাজারে গান গেয়ে উপার্জন করে সংসার চালাতেন তারা। একসময় পঞ্চগড় শিল্পকলা একাডেমীসহ দিনাজপুর ঠাকুরগাওয়ের বিভিন্ন ওস্তাদের কাছে তালিম নেন রইসুদ্দিন।
রইসুদ্দিন জানান, ২০০৯ সালে ভূমিজ নামের একটি নাট্যদলে যোগ দেন তিনি। তারপর বিভিন্ন নাট্যকার, নির্দেশক এবং গীতিকারদের সাথে কাজ শুরু করেন তিনি। মঞ্চ নাটকের আবহ সঙ্গীত নির্মাণ শুরু করেন। এরপর স্থানীয় গীতিকার ও সুরকারদের গানে কণ্ঠ দেন তিনি। ধীরে ধীরে গান সুর করাও শুরু করেন তিনি। মঞ্চ নাটকের সূত্র ধরে দেশের নানা যায়গা থেকে গান পরিবেশনের ডাক আসতে থাকে। পরিচিতিও আসে। তবে অভাব অনটনের সংসারে খুব বেশি অর্থের যোগান দিতে পারেননি তিনি। শুধু পঞ্চগড়ে নয় ঢাকার কয়েকটি নাট্যদলের মঞ্চনাটকের গানও করেন তিনি।
২০১৫ সালে নাট্যদল ভূমিজর সূত্র ধরেই পরিচয় হয় চলচ্চিত্র পরিচালক সাজেদুল আওয়ালের সাথে। রাষ্ট্রীয় অনূদান প্রাপ্ত সিনেমা ছিটকিনি’র এই পরিচালক রইসুদ্দিনকে সিটকিনি সিনেমায় গান গাওয়ার সুযোগ করে দেন। এই সিনেমায় রঈসুদ্দিন ২ টি গান করেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি টিভি নাটকে গান করেছেন এই শিল্পী। প্রায় ১২ বছর আগে মাত্র ৩ হাজার টাকা দামের অনেক পুরোনো একটি দোতারা দিয়েই গান গেয়ে বেড়ান রইসুদ্দিন। তার গানের উপরই নির্ভর করে বাবা মা স্ত্রী সন্তানসহ ৬ জনের পুরো সংসার। রইসুদ্দিন বলেন, মফস্বলে থাকি বলে আমাদের সুযোগ কম। নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ থাকলে নিজেকেও মূল্যায়ন করা যায়।
রইসুদ্দিন মূলত লোক গান করেন। বাউল, ভাওয়াইয়া এবং পঞ্চগড়ের স্থানীয়লোক গানের সংমিশ্রণে নতুন নতুন সুর তৈরী করতে ভালোবাসেন। তার জনপ্রীয় গানের মধ্যে রয়েছে, ফাগুনো এলো আগুন লাগিলো, মোর মনটা কি চাহেনা, জনক ও জননী প্রভৃতি।
পঞ্চগড় জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আবু তোয়াবুর রহমান বলেন, রইসুদ্দিন শুধু পঞ্চগড়ের নয় বাংলাদেশের সম্পদ বলে আমি মনে করি। মফস্বলে থাকে বলেই হয়তো প্রচন্ড মেধাবী এই শিল্পীকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না । গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে থাকা এসব মেধাবী শিল্পীদের জন্য সরকারের উদ্যোগ দরকার বলে মনে করেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল