বিজেপিকে পর্যদুস্ত করে ভারতের ঝাড়খন্ডে সরকার গঠন করতে চলেছে কংগ্রেস-ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা-রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) জোট। রাজ্যের ৮১ টি আসনের মধ্যে ম্যাজিক ফিগার ৪১ টি। সেখানে এখনো পর্যন্ত জোট এগিয়ে রয়েছে ৪৬ আসনে (ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা ৩০, কংগ্রেস-১৫, আরজেডি-১)। আর বিরোধী দল বিজেপি ২৬ টি আসনে এগিয়ে রয়েছে।
এর পাশাপাশি অল ঝাড়খন্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (এজেএসইউ) এগিয়ে রয়েছে ২ আসনে। রাজ্যটির আরেক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বাবুলাল মারান্ডির দল ঝাড়খন্ড বিকাশ মোর্চা (জেভিএম) এগিয়ে রয়েছে ৩ আসনে।
বিরোধী জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) নেতা এবং রাজ্যটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন রাজ্যের দুইটি বিধানসভা কেন্দ্রে থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন-এগুলি হল দুমকা ও বারহাইত। উভয় কেন্দ্রেই তিনি জয়ী হয়েছেন।
পরে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, 'ঝাড়খন্ডে নতুন যুগের সুচনা হল। এই জয়ের ফলে রাজ্যের মানুষকে আমার ধন্যবাদ। আজ থেকেই রাজ্যের মানুষের মঙ্গলে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।'
গত ৩০ শে নভেম্বর থেকে পাঁচ দফায় ভোটগ্রহণ হয় ঝাড়খন্ডে, তা শেষ হয় ২০ ডিসেম্বর। বুথ ফেরত জরিপেও এরাজ্যে বিজেপির ভরাডুবির ইঙ্গিত মিলেছিল। ফলাফলেও সেই চিত্রই উঠে এসেছে।
নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করে রাজ্যের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির রঘুবর দাস জানান, এটা তার পরাজয়, দলের পরাজয় নয়। বিকালেই তিনি রাজভবনে গিয়ে রাজ্যটির রাজ্যপাল দ্রৌপদী মুর্মর কাছে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন সোরেন। রাজ্যপালও রঘুবরের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। এমনকি জামশেদপুর পূর্ব আসনটিতেও তিনি তার বিপক্ষ প্রার্থীর চেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন।
জনগণেনের রায়কে মাথা পেতে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহও। মোদি ট্যুইট করে লেখেন, ‘হেমন্ত সোরেন ও জেএমএম—এর নেতৃত্বে জোট সরকারকে অভিনন্দন। রাজ্যকে সেবা দেওয়ার জন্য তাদের আগাম শুভেচ্ছা।’
তিনি আরও লেখেন ‘অনেক বছর ধরে বিজেপিকে রাজ্যেও মঙ্গল করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ঝাড়খন্ডের মানুষকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিজেপির কার্যকর্তাদের প্রচেষ্টার জন্য তাদেরও প্রশংসা জানাই।’
এদিকে বিজেপির পরাজয়ের পরই ঝাড়খন্ডের সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও ট্যুইট করে লেখেন, ‘এই জয়ে ঝাড়খন্ডের জোট সরকারকে অভিনন্দন। সিএএ ও এনআরসি নিয়ে বিক্ষোভের মধ্যেই ঝাড়খন্ডে বিধানসভার নির্বাচন হয়েছে। এই রায় জনগণের পক্ষের রায়। ঝাড়খন্ডের সকল ভাই-বোনেদের আমার শুভেচ্ছা।’ বিরোধী দলের জোটের জয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব, কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা কপিল সিব্বল, পি চিদাম্বরম প্রমুখ।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি) নিয়ে দেশজুড়ে মোদি বিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত। শুধু বিরোধী নয়, বিজেপির শাসকদল গুলিও এই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর পাশে নেই। এরই মধ্যে শরিক দলের সাথে মনকষাকষির কারণে মহারাষ্ট্রের সরকার গঠন হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির। হরিয়ানাতেও বিজেপি একক ক্ষমতায় সরকার গড়তে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে ঝাড়খন্ড হাতছাড়া হওয়ার ফলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দিল্লি ও বিহার বিধানসভা ভোটে গেরুয়া শিবির বড় বিপদের মুখে পড়তে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল