গাজায় যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় অবশিষ্ট মানুষগুলোকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষার জন্য খাদ্য-সহায়তা চালুর উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে গণমাধ্যমের সামনে প্রদত্ত বক্তব্যে মহাসচিব এ আহ্বান জানান। গুতেরেস বলেন, গাজা উপত্যকায় মার্চের ২ তারিখে খাদ্য-ওষুধবাহী যানবাহনের প্রবেশাধিকার হরণ করেছে ইসরায়েল। এরপর থেকেই কোনো ধরনের খাদ্য-সহায়তা পাচ্ছে না গাজাবাসী। মহাসচিব উল্লেখ করেন, জিম্মি হিসেবে আটক সবার মুক্তির বিকল্প নেই। আশা করছি অবিলম্বে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি আবারও বহাল হবে।
মহাসচিব আরও বলেন, ত্রাণ-সহায়তার জিনিসপত্র ট্রাকে শুকিয়ে যাওয়ায় গাজাকে আবারও ভয়ংকর বিপদ গ্রাস করছে। গাজা বর্তমানে একটি মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। সেখানকার নিরস্ত্র মানুষেরা মৃত্যুর সঙ্গে কোলাকুলি করছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসি তৎপরতা শুরু হওয়ায় মানবিকতা ডুকরে কাঁদছে। ইসরায়েলে জিম্মিদের মতো গাজায় ফিলিস্তিনিদের পুনরায় বেঁচে থাকার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। ৭ এপ্রিল আমি যখন জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি তখন এমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখেছি। মহাসচিব উল্লেখ করেন, গাজায় ওষুধ ও খাদ্যবাহী যানবাহনের প্রবেশের বাধা অপসারণে আমাদের সঠিক পন্থা অবলম্বন করতে হবে। আটকে পড়া ফিলিস্তিনিরা যাতে অবাধে খাদ্য ওষুধ পেতে পারেন- তেমন একটি পরিবেশের বিকল্প নেই। গাজায় প্রত্যেকের খাবারের জন্য পর্যাপ্ত মজুত থাকার যে দাবি ইসরায়েলিরা করেছে, তা আদৌ সত্য নয়। আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী ইসরায়েলকেও অমানবিক পরিস্থিতির মোকাবিলায় সদয় হতে হবে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব রয়েছে- যা ইসরায়েল এড়াতে পারে না।
এদিকে ইসরায়েলি কোম্পানি মেকোরোট গাজা উপত্যকায় পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে অবরুদ্ধ উপাত্যকাটির মোট পানি সরবরাহের ৭০ শতাংশ বন্ধ হয়ে গেছে। গাজা পৌরসভার মুখপাত্র হোসনি মেহান্নার জানিয়েছেন, সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে পূর্ব গাজা শহরের শুজাইয়া পাড়ায় অবস্থিত প্রধান পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেখানে গত বৃহস্পতিবার থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে। মেহান্না তুর্কি গণমাধ্যম আনাদোলুকে বলেন, এ বিঘ্নের কারণগুলো এখনো স্পষ্ট নয়। তবে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করছি, যাতে এলাকায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের কারণে পাইপলাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা যায়।
তিনি আরও বলেন, এ বিঘ্ন সরাসরি সামরিক কার্যকলাপের কারণে হতে পারে অথবা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের ইচ্ছাকৃত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে হতে পারে। মেহান্না সতর্ক করে বলেছেন, কারণ যাই হোক না কেন এর পরিণতি ভয়াবহ। যদি মেকোরোট থেকে পানি প্রবাহ শিগগিরই চালু করা না হয়, তাহলে গাজা ভয়ংকর পানি সংকটের মুখোমুখি হবে। বছরের পর বছর ধরে অবরোধ, অবকাঠামোগত ধস এবং ভূগর্ভস্থ পানির দূষণের কারণে গাজা ইতোমধ্যে বিশুদ্ধ পানির দীর্ঘস্থায়ী সংকটে ভুগছে, মানবিক পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত থাকায় এখন ব্যাপক পানিশূন্যতার ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সামরিক আক্রমণে গাজায় ৫০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের টানা বোমাবর্ষণ ও অবরোধে মৃত্যু আর দুর্ভোগে জর্জরিত গাজা। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ কিছুই প্রবেশ করতে পারছে না। এ অবস্থাকে ‘অন্তহীন মৃত্যুর চক্র’ আখ্যা দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, গাজা এখন একটি হত্যাযজ্ঞের ক্ষেত্র। সাধারণ মানুষ এক ভয়াবহ মৃত্যুর চক্রে আটকে পড়েছে। সাহায্য বন্ধ হওয়ায় আমাদের সরবরাহ ক্ষমতা কার্যত শ্বাসরুদ্ধ হয়ে গেছে। মঙ্গলবার নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গুতেরেস ইসরায়েলের প্রস্তাবিত সহায়তা পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এ ব্যবস্থা মানবিক নীতিমালা যেমন মানবতা, নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতার প্রতি সম্মানহীন। ফলে এতে জাতিসংঘ অংশ নেবে না। জাতিসংঘ প্রধান আরও বলেন, ক্রসিংগুলোতে খাবার, ওষুধ, আশ্রয় সামগ্রী আটকে আছে। দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে খাদ্য, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা দেওয়া উচিত। আজ এর কিছুই হচ্ছে না। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় চলমান আগ্রাসনে ইতোমধ্যে ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে।
৭০ শতাংশ পানি সরবরাহ বন্ধ : ইসরায়েলি কোম্পানি মেকোরোট গাজা উপত্যকায় পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে অবরুদ্ধ উপাত্যকাটির মোট পানি সরবরাহের ৭০ শতাংশ বন্ধ হয়ে গেছে। গাজা পৌরসভার মুখপাত্র হোসনি মেহান্নার জানিয়েছেন, সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে পূর্ব গাজা শহরের শুজাইয়া পাড়ায় অবস্থিত প্রধান পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেখানে গত বৃহস্পতিবার থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে। মেহান্না তুর্কি গণমাধ্যম আনাদোলুকে বলেন, এ বিঘ্নের কারণগুলো এখনো স্পষ্ট নয়। তবে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করছি, যাতে এলাকায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের কারণে পাইপলাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা যায়। তিনি আরও বলেন, এ বিঘ্ন সরাসরি সামরিক কার্যকলাপের কারণে হতে পারে অথবা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের ইচ্ছাকৃত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে হতে পারে। মেহান্না সতর্ক করে বলেছেন, কারণ যাই হোক না কেন এর পরিণতি ভয়াবহ। যদি মেকোরোট থেকে পানি প্রবাহ শিগগিরই চালু করা না হয়, তাহলে গাজা ভয়ংকর পানি সংকটের মুখোমুখি হবে। বছরের পর বছর ধরে অবরোধ, অবকাঠামোগত ধস এবং ভূগর্ভস্থ পানির দূষণের কারণে গাজা ইতোমধ্যে বিশুদ্ধ পানির দীর্ঘস্থায়ী সংকটে ভুগছে, মানবিক পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত থাকায় এখন ব্যাপক পানিশূন্যতার ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সামরিক আক্রমণে গাজায় ৫০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।-আলজাজিরা
প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর মার্চ মাসে সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু হয়।