মদ এমনই একটি পদার্থ, যা উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি করে। আনন্দপূর্ণ সাময়িক অনুভূতির বদলে এতে ক্ষতির পরিমাণ এতটাই বেশি যে, অন্য কোনো বস্তুর মধ্যে সচরাচর তা দেখা যায় না। মদের প্রতিক্রিয়ায় ধীরে ধীরে মানুষের হজমশক্তি বিনষ্ট হয়। খাদ্যস্পৃহা কমে যায়। চেহারা বিকৃত হয়ে পড়ে এবং স্নায়ু দুর্বল হয়ে যায়। সামগ্রিকভাবে শারীরিক সক্ষমতার ওপর মারাত্দক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। যারা মদপানে অভ্যস্ত তারা ৪০ বছর বয়সে ৬০ বছরের বৃদ্ধের মতো অকর্মণ্য হয়ে পড়ে। শারীরিক শক্তি ও সামর্থ্যের দিক দিয়ে অল্প বয়সে বৃদ্ধের মতো বেকার হয়ে পড়ে। তা ছাড়া মদ লিভার ও কিডনিকে বিনষ্ট করে। অধিক মাত্রায় মদ্যপান মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মানুষ যতক্ষণ নেশাগ্রস্ত থাকে ততক্ষণ তার জ্ঞান-বুদ্ধি কোনো কাজে লাগে না। অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, মদ কখনো শরীরের অংশ হতে পারে না। এতে শরীরে রক্ত সৃষ্টি হয় না বরং রক্তের মধ্যে একটা সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় মাত্র। ফলে সাময়িকভাবে শক্তির অনুভূত হয়। কিন্তু হঠাৎ রক্তের উত্তেজনা অনেক সময় পাগলামি ও মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবার যেসব শিরা ও ধমনীর মাধ্যমে সারা দেহে রক্ত প্রবাহিত থাকে মদপানের দরুন সেগুলো শক্ত ও কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে দ্রুতগতিতে বার্ধক্য এগিয়ে আসতে থাকে। মদের দ্বারা মানুষের গলদেশ এবং শ্বাসনালির যথেষ্ট ক্ষতিসাধিত হয়। ইসলাম পবিত্র পরিচ্ছন্ন ধর্ম। এতে অপবিত্রতা ও অশ্লীলতার কোনো স্থান নেই। ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় মদপান নিষিদ্ধ ছিল না। নবী (সা.) মদপানের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করেই পরম করুণাময় ও মহাশক্তিশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! মদ সম্পর্কে আমাদের সঠিক নির্দেশনা প্রদান কর। তখন আল্লাহতায়ালা সূরা বাকারার ২১৯ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে জানান যে, তারা তোমাকে মদ, জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, বলে দাও উভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্য উপকারিতাও রয়েছে, এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড় আর তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে, তারা কী ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাঁচে তা-ই খরচ করবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য সুস্পষ্টরূপে নির্দেশ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করতে পার।
[ঢাকা দেবীদাস ঘাট লেন, ডালপট্টি, চকবাজারে গত ২৭ ফেব্রুয়ারির বার্ষিক তাফচ্ছিরুল কোরআন ওয়াজ মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যের অংশবিশেষ।]