আল্লাহপাক নবী (সা.)-কে সম্বোধন করে নির্দেশ করেন, 'বলুন : আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই।' তাই মুমিন যা কিছু করবে তা হতে হবে আল্লাহর জন্য। কারও সঙ্গে ঝগড়া করা বা বন্ধুত্ব রাখা সবই হবে আল্লাহকে খুশি করার জন্য। বিপদ-আপদ, বালা-মসিবত ও হাসি-খুশি, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য সব কিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। এ ক্ষেত্রেও মুমিনের মানসিকতা বানাতে হবে, আল্লাহপাক যা ভালো মনে করেছেন, তাই আমাকে দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহপাকের চাহিদাই আমার চাহিদা। এমন মানসিকতা একবার তৈরি করতে পারলে কোনো বিপদ আর বিপদ মনে হবে না। জীবনে আসবে না কোনো হতাশার ছাপ আর নিরাশার আভা। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত হয়ে উঠবে চরম সুখকর ও আনন্দময়।
নমরুদ যখন হজরত ইবরাহীম (আ.) কে আগুনে নিক্ষেপ করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করল, তখন হজরত জিবরাঈল (আ.) এসে ইবরাহীম (আ.)-এর পাশে দাঁড়ালেন এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। কেউ বিপদে পড়লে সাহায্যের হাত বাড়ানো তার মানবিক দায়িত্ব। আর যিনি বিপদে পড়বেন তিনি সাহায্যের ফরিয়াদ করবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু হজরত ইবরাহীম (আ.) সাহায্যের ফরিয়াদ তো দূরের কথা, জিবরাঈল (আ.)-এর সাহায্যের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন এবং সাফ জানিয়ে দিলেন যে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন তিনি কি আমার এ অবস্থা দেখছেন না? আমাকে আগুনে পুড়িয়ে যদি তিনি খুশি থাকেন, তাহলে এতেই আমার শান্তি। সুতরাং তিনি জিবরাঈলের সাহায্য গ্রহণ করলেন না। হজরত ইবরাহীম (আ.)-এর এ মানসিকতা দেখে আল্লাহপাক আগুনকে নির্দেশ দিলেন, তুমি ইবরাহীমের জন্য ঠাণ্ডা ও শান্তিময় হয়ে যাও। ফলে দেখা গেল আগুনে ঝাঁপ দিয়েও তিনি ফুলের বাগানে বসে ঠাণ্ডা বাতাস উপভোগ করছেন। হজরত ইবরাহীম (আ.)-এর এ ঘটনায় আমাদের জন্য রয়েছে চরম শিক্ষা। হায়-হুতাশ করে দূর করা যায় না বিপদ। তার চেয়ে ভালো হবে আল্লাহর ওপর সঁপে দেওয়া। তিনি ভালো মনে করলে আমাকে বিপদ থেকে মুক্তি দেবেন, চাইলে বিপদেই ফেলে রাখবেন। এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। এটাই হওয়া উচিত মুমিনের মানসিকতা। আল্লাহপাক আমাদের সবার মানসিকতা তার মর্জি মোতাবেক করে দিন। আমীন।
লেখক : খতিব বাইতুল মারুফ জামে মসজিদ, টিভি রোড, রামপুরা, ঢাকা।