শব ফার্সি শব্দ। এর অর্থ রাত্রি। বরাত আরবি শব্দ। এর অর্থ মুক্তি। তাই শবেবরাত অর্থ মুক্তির রজনী। আরবি শাবান মাসের ১৫তম রজনীকে শবেবরাত বলে। এই পুণ্যময় রজনীর ফজিলত ও তাৎপর্য বহু হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্য থেকে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো। প্রিয় নবীজির প্রিয় সাহাবি হজরত আলী (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, যখন শাবান মাসের ১৫তম রজনী আসে তোমরা রাত্রিতে নামাজ পড় এবং দিনে রোজা রাখ। কারণ আল্লাহতায়ালা সেদিন সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়ার আসমানে আসেন এবং বলতে থাকেন, কেউ আছে কি গুনাহ মাফ চাইবে? আমি তার গুনাহ মাফ করে দেব। কেউ আছে কি রিজিক চাইবে? আমি তাকে রিজিক দান করব। কেউ আছে কি অসুস্থ? আমি তাকে সুস্থ করে দেব। আল্লাহপাক এভাবে ডাকতে থাকেন ভোর পর্যন্ত। ইবনে মাজাহ। অপর হাদিসে এরশাদ হচ্ছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, একদিন রসুল (সা.) বললেন, আজকের রজনীতে (শবেবরাত) কী কী হয় তোমরা কি জান? আয়েশা (রা.) বললেন, আপনি বলুন এই রজনীতে কী কী হয়? রসুল (সা.) বললেন, আজকের রজনীতে আগামী এক বছরে পৃথিবীতে আগমনকারী আদম সন্তানদের নাম লেখা হয়। আগামী এক বছরে পৃথিবী থেকে কে কে বিদায় নেবে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। এই রজনীতে মানুষের আমলনামা আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। মানুষের রিজিক আল্লাহর কাছ থেকে বরাদ্দ হয়। বায়হাকি। পবিত্র শবেবরাতে আমাদের উচিত সারা রাত বিভিন্ন নেক আমল করে কাটিয়ে দেওয়া। জিকির করা। কোরআন তেলাওয়াত করা। নফল নামাজ পড়া। সম্ভব হলে সালাতুস তাসবিহ নামাজ পড়া। যেসব আত্দীয়স্বজন ও প্রিয়জন পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে তাদের কবর জিয়ারত করা। নিজের কৃত গুনাহগুলোর কথা স্মরণ করে মহান পরওয়ারদেগারের দরবারে কান্নাকাটি করা। ভোর রাতে সেহেরি খেয়ে পর দিন রোজা রাখা। একটি বিষয় সবার জানা উচিত, তা হলো, পুণ্যময়ী শবেবরাতে সবার গুনাহ মাফ হলেও দুই ব্যক্তির গুনাহ মাফ হয় না। এক. হিংসুক। দুই. আল্লাহর সঙ্গে শরিককারী। অর্থাৎ এ দুই ব্যক্তির অপরাধ এতটাই জঘন্য যে, শবেবরাতের মতো পবিত্র রাতেও তা মাফ হয় না। এ প্রসঙ্গে হাদিসে পাকে এরশাদ হচ্ছে, হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) বলেন, রসুল (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহপাক শাবান মাসের ১৫তম রজনীতে সমগ্র সৃষ্টিকুলের প্রতি মনোযোগ দেন। অতঃপর সবাইকে ক্ষমা করে দেন দুই ব্যক্তি ছাড়া। তারা হলো, (১) আল্লাহর সঙ্গে শরিককারী, (২) হিংসুক। ইবনে মাজাহ। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে শবেবরাতের তাৎপর্য অনুধাবন করে এই রাতে বেশি বেশি ইবাদত করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : খতিব, বাইতুর রহমত জামে মসজিদ, গাজীপুরা, টঙ্গী।