ইসলাম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, যা পৃথিবীর বুকে প্রতিটি মানুষের হক বা অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। বিশেষ করে আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখার ক্ষেত্রে ইসলাম যে অবদান রেখেছে তা অতুলীয়। যা মানব জাতির অস্তিত্বের স্তম্ভ 'কোরআন' এবং আমাদের প্রিয়তম নবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)-এর অসংখ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। জন্মসূত্রেই মূলত মানুষ পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আত্মীয়স্বজনের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিকে ইসলামী পরিভাষায় সেলায়ে রেহমি বলা হয়। আর এতে কোনো রকম ব্যত্যয় সৃষ্টি হলে তাকে বলা হয়, 'কেত্বয়ে-রেহমি'।
কোরআনে আত্মীয়তার সম্পর্কের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা কোরআনে বলেছেন : এবং আত্মীয়দের (অধিকার খর্ব করা) কে ভয় কর। নিশ্চিত জানিও আল্লাহ তোমাদের প্রতি লক্ষ্য রেখেছেন। (সূরা নিসা-আয়াত-১)
হাদিস শরিফেও আত্মীয়তার সম্পর্কের ওপর অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেন : যে ব্যক্তি রিজিকে প্রাচুর্য এবং দীর্ঘ জীবনের প্রত্যাশা করে, তার উচিত আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। (মেশকাত শরিফ, পৃঃ ৪১৯)
এ হাদিসে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার দুটি উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথমত আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখলে পরকালে তো কল্যাণ লাভ হবেই, ইহকালেও সম্পদের প্রাচুর্য এবং আল্লাহর রাসূলের (সা.) পক্ষ থেকে দীর্ঘজীবন লাভের আশ্বাস সম্পর্কিত সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও দুনিয়ার জীবনে মানুষের জন্য পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে সুখময় করতে হলে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা অতীব আবশ্যক। আর কেউ যদি আত্মীয়তার এ সম্পর্ককে ছিন্ন করে তাহলে পারিবারিক জীবন তার জন্য যেমন বিষাক্ত হয়ে ওঠে; তার চেয়েও ভয়ঙ্কর দুঃসংবাদ হলো সে কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। কেননা রসুল (সা.)-এর স্পষ্ট হাদিস : 'আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।' (তিরমিজি শরিফ)
আল্লাহ ভীতি এবং পরকালের ভয় ছাড়াও এই বন্ধনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হচ্ছে পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহমর্মিতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একে অন্যের অধিকারের প্রতি পুরোপুরি সম্মান প্রদর্শন করে উঁচু-নিচু, ইতর-ভদ্রের ব্যবধান ভুলে গিয়ে সবাই একই মানদণ্ডে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করে নেওয়া। কেননা এর মধ্যেই আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবন সুখময় হয়ে উঠবে।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা ঢাকা।