পৃথিবীর সেরা মানুষ নবীজী। সবার জন্য তিনি অনুপম আদর্শ। তার জীবন-দর্শন আমাদের চেতনা, প্রেরণা ও পাথেয়। আজকের শিশু-কিশোরদের কাছেও মহানবীই (সা.) আদর্শ। শিশু-কিশোরদের জীবন-চরিত্রেও নবীজীই উপমা। নবীজীর জীবন অধ্যায়জুড়ে ছিল শিশু-কিশোরদের ভালোবাসা। শিশুদের জন্য আদর-সোহাগ। মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে বলেছেন : রসুলের জীবনে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। শিশু-কিশোরদের জন্য নবীজীর বাণী- যারা ছোটদের আদর করে না এবং বড়দের সম্মান করে না তারা আমাদের আদর্শের অনুসারী নয়। নবী-জীবনের গল্পে আছে, একদিন মহানবী (সা.) তার নাতি হাসান (রা.)-কে আদর করে চুমু খাচ্ছিলেন। তা দেখে হজরত আকবা ইবনে হারিস নবীজীকে বললেন, ওগো নবী (সা.) আপনি কি এমনিভাবে শিশুদের আনন্দদান ও আনন্দ উপভোগ করেন? আমি তো আমার ছোট শিশু-সন্তানদের এত আদর করি না। নবীজী তার জবাবে বললেন, তোমার অন্তর থেকে আল্লাহ যদি মমতা তুলে নিয়ে থাকেন, তার জন্য তো আমি দায়ী নই। নবীজী আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি শিশু-কিশোরদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করে না সে আমার উম্মত নয়। মুসলিম শরিফে আছে- একদিন আমাদের মহানবী (সা.) একদল শিশুর সঙ্গে আনন্দ করছেন। শিশুরাও নবীজীকে ঘিরে খুশিতে মেতে ওঠে। এমন সময় সেখানে এক বেদুঈন এসে উপস্থিত হয়। সে মহানবী (সা.)-কে উপলক্ষ করে বলল, শিশুদের নিয়ে এমন আমোদ-আহ্লাদ করা আমার পছন্দ নয়। এ কথা শুনে রসুল (সা.)-এর হাসি-খুশি মুখখানি মলিন হয়ে গেল। তিনি বললেন, যে ব্যক্তির হৃদয়ে মায়া নেই, আল্লাহ যেন তাকে দয়া করেন। (মুসলিম)। রসুল (সা.) কখনো শিশুদের ওপর রাগ করতেন না। চোখ রাঙাতেন না। কর্কশ ভাষায় তাদের সঙ্গে কথা বলতেন না। তিনি ছোটদের আদর করে কাছে বসাতেন। তাদের সঙ্গে মজার মজার কথা বলতেন। ছোটদের দেখলে আনন্দে নবীজীর বুক ভরে যেত। তিনি তাদের বুকে জড়িয়ে ধরতেন। একদিন একটি সুন্দর শিশুকে দেখে তিনি জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, এই শিশুরাই তো আল্লাহর বাগানের ফুল। তিনি কখনো কোনো শিশুকে বিকৃত নামে ডাকতেন না। তিনি তাদের অর্থবোধক নাম রাখতেন এবং মিষ্টি সুরে সুন্দর নাম ধরে ডাকতেন। প্রিয় নবী শিশুদের যেমন আদর করতেন, তেমনি তাদের সঙ্গে রসিকতাও করতেন। একবার হজরত আনাস (রা.)-এর ছোট এক ভাইয়ের একটি পাখি মারা যায়। এতে তার মন খারাপ হয়। নবীজী তখন তাকে আদর করে কাছে ডেকে নিলেন। বললেন, ইয়া আবা উমায়েরু/মা কা-আলান নুগায়রু? অর্থাৎ হে আবু উমায়ের, তোমার পাখির ছানাটির কি হলো? তখন নবীজীর মুখে ছন্দ ও সুর শুনে হেসে ফেলল। (বুখারি ও মুসলিম)। বর্তমানে জাতিসংঘসহ যারাই শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন, তাদের কাছে আবেদন থাকবে মহানবী (সা.) এর শিশু-কিশোর ভাবনা নিয়ে অগ্রসর হওয়ার।
সম্প্রতি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন শিশু-কিশোর নির্যাতন ও হত্যার হার বেড়েছে। পাকিস্তানের পেশোয়ারে সেনাবাহিনী পরিচালিত স্কুলের ১৩২ জন শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তালেবান। আবার প্রতিশোধ নিতে সেনাবাহিনী তালেবানের শিশু-কিশোরদের হত্যা করেছে। আমার নবীর ভাষায়- শিশুরা জান্নাতি বাগানের ফুল। ওরা জান্নাতের ফুল। মানববাগানেও শিশুরা ফুল। পৃথিবীর যে প্রান্তেই শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে ইসলামের দৃষ্টিতে তারা চরম অপরাধী। আমরা মনে করি, মানববাগানের শিশুরা ফুল। তারা সবাই সমান। তাদের বংশ দেশ ও ধর্ম পরিচয় থেকে বড় পরিচয় ওরা মানবফুল। নবীজীর ভালোবাসার প্রতীক। নতুন বছরের প্রথম প্রত্যাশা আগামীর পৃথিবী সুন্দর হোক, নিরাপদ হোক শিশুদের জন্য।
[১২ ধলপুর হজ এজেন্সি এম সেতারা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক আয়োজিত শিশুহত্যা প্রতিরোধ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির দেওয়া বক্তব্যের অংশবিশেষ।]