ইসলাম অর্থ শান্তি। তাই ইসলাম শান্তির ধর্ম। মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি তথা সন্ত্রাস সৃষ্টির কোনো স্থান ইসলামে নেই। মানুষের কাছে মহান আল্লাহর চাহিদা হলো, মানুষ শান্তিপূর্ণ সমাজে বসবাস করে প্রশান্ত চিত্তে আল্লাহর ইবাদত করবে। সুতরাং অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে, এমন সব কাজকর্মই তিনি নিষিদ্ধ করেছেন। সন্ত্রাসের সমার্থক ফেতনা-ফাসাদ ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতেও তিনি কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। কোরআন কারিমে এরশাদ হয়েছে, 'দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর তোমরা তাতে বিপর্যয় ঘটিও না।' (সূরা আ'রাফ : আয়াত ৫৬)
ফিতনা ফাসাদ সৃষ্টিকে মহান আল্লাহ মানব হত্যার চেয়েও কঠোর বলে অভিহিত করেছেন। এরশাদ হয়েছে, 'ফিতনা হত্যা অপেক্ষাও গুরুতর অন্যায়।' (সূরা বাকারা : আয়াত ১৯১, ২১৭)। সমাজে অশান্তি সৃষ্টিকারীদের নিন্দা করে মহান আল্লাহ বলেন, 'যখন সে প্রস্থান করে তখন সে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টির এবং শস্য ক্ষেত্র ও জীবজন্তু ধ্বংসের চেষ্টা করে। আর আল্লাহ অশান্তি পছন্দ করেন না।' (সূরা বাকারা : আয়াত ২০৫)
সন্ত্রাসেরই বাস্তব পরিণতি হলো মানব হত্যা। মানব হত্যা মহাপাপ। কোনো মুমিনের দ্বারা এহেন গর্হিত কাজ সংঘটন করা সম্ভব নয়। আর ভুলবশত যদি তা সংঘটিত হয় তাহলে কিছু আর্থিক দণ্ড দিয়ে তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এরই ঘোষণা দিয়ে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, 'কোনো মুমিনকে হত্যা করা কোনো মুমিনের কাজ নয়। তবে ভুলবশত করলে তা স্বতন্ত্র; আর কেউ কোনো মুমিনকে ভুলবশত হত্যা করলে এক মুমিন দাস মুক্ত করা এবং তার পরিজনবর্গকে রক্তপণ অর্পণ করা উচিত, যদি না তারা ক্ষমা করে।' (সূরা নিসা : আয়াত ৯২)। আর যদি অবৈধভাবে ইচ্ছাকৃত কেউ কাউকে হত্যা করে তাহলে তার শাস্তি হবে স্থায়ী জাহান্নাম এবং আল্লাহর রোষ ও লা'নত। কোরআন কারিমে এরশাদ হয়েছে, 'কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম; সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তাকে লা'নত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখবেন।' (সূরা নিসা : আয়াত ৯৩)
হাদিস শরিফেও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর ঘোষণা এসেছে। হজরত রসুলে পাক কারিম (সা.) এরশাদ করেন, 'যে ব্যক্তি আমাদের ওপর অস্ত্রধারণ করল সে আমাদের দলভুক্ত নয়।' (সহিহ মুসলিম) পরস্পর বিচ্ছেদ ও হানাহানি সৃষ্টি এবং সম্পর্ক বিনষ্ট না করে ভাই ভাই হিসেবে মিলেমিশে থাকার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে রসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, 'তোমরা পরস্পর হিংসা করবে না, একে অন্যের দোষ অনুসন্ধান করবে না, সম্পর্কোচ্ছেদ করবে না, আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে যাও।' (সহিহ মুসলিম)
অতএব, আসুন! আমরা সবাই পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে বিবাদ-বিশৃঙ্খলা ও হানাহানি পরিত্যাগ করি এবং পরস্পর ভাই ভাই হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এ পৃথিবীকে একটি শান্তির নিবাস হিসেবে গড়ে তুলি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, আমিন।