তওবা আরবি শব্দ, যার অর্থ ফিরে আসা বা গুনা ত্যাগ করা। বান্দার ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত গুনা ত্যাগ করে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আল্লাহ তওবা-ইস্তেগফারের সুযোগ দান করেছেন।
তওবা অর্থ এই নয় যে, বান্দা গুনা করে মুখে বলবে আমি তওবা করলাম। অথবা শুধু মনে মনে বলবে যে, কাজটি ঠিক নয় বা কাজটি করা অন্যায়, অপরাধ হয়েছে। বরং তওবা হচ্ছে কোনো গুনার কাজ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে লজ্জিত অনুতপ্ত হওয়া, কাজটি ও কাজটির আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো সম্পূর্ণ ত্যাগ করা এবং সামনে আর এ কাজটি বা এ-জাতীয় কোনো কাজ কোনোক্রমেই করব না বলে সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা।
আল্লাহতায়ালা বলেন, 'হে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে খালেস তওবা কর' (সুরা তাহরিম : ৮)। নেক মানুষ তারাই যারা কবিরা বা সগিরা কোনো গুনাই করে না। গুনার চিন্তাও যেন অন্তরে না আসে সেজন্য নেক আমলের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখে। শয়তানের কুমন্ত্রণা, প্রবৃত্তির অসৎ চাহিদা এবং পরিবেশ ও সমাজের মন্দ প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য আত্মশুদ্ধির সাধনা-মুরাকাবা-মুহাসাবা (ধ্যান ও আত্মবিশ্লেষণ) অব্যাহত রাখে।
মহানবী (সা.) ছিলেন মাসুম পাপমুক্ত। তা সত্ত্বেও তিনি আল্লাহর শোকরগুজার ও সন্তোষজনক হওয়ার আশায় দিনে শত শত বার ইস্তেগফার করতেন। তিনি বলেছেন, 'হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর, কারণ আমি দিনে একশতবার তাঁর কাছে তওবা করি' (নাসায়ি)।
গুনা বিভিন্ন প্রকার। সাধারণত পবিত্র কোরআন-সুন্নাহ যেসব কাজ অপরিহার্য (ফরজ) করেছে তা ত্যাগ করা কবিরা গুনা। তেমনি ইসলামী শরিয়ত যেসব কাজ হারাম বা নিষিদ্ধ করেছে তাতে লিপ্ত হওয়াও কবিরা গুনা। কবিরা গুনা সংঘটিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে খালেস দিলে তওবা করতে হবে। গুনার সঙ্গে অন্যের হক জড়িত থাকলে তা পরিশোধ না করলে তওবা কবুল হবে না।
কবিরা গুনা হলো নামাজ, রোজা, জাকাত, হজ, হালাল উপার্জন, পর্দার বিধান, সততা-আমানতদারি ইত্যাদি ত্যাগ করা। বান্দার হকসংশ্লিষ্ট কবিরা গুনা হলো মানুষ হত্যা, ব্যভিচার, চুরি-ডাকাতি, আত্মসাৎ, দুর্নীতি, জুলুম, সুদ, ঘুষ, জবরদখল, মিথ্যাচার, অন্যের হক নষ্ট, ওয়াদা ভঙ্গ করা ইত্যাদি।
আল্লাহর ভয়, ধর্মীয় বিধানের প্রতি শ্রদ্ধা ও পরকালের বিচারে বিশ্বাস যথাযথ না থাকলে মানুষ এই পাপগুলোয় লিপ্ত হয়। এসব পাপ থেকে ফিরে আসার একমাত্র পথ অনুতাপ ও তওবা। আইন-কানুন ও শক্তি প্রয়োগ দ্বারা অপরাধের পরিমাণ কিছু হ্রাস করা যায় কিন্তু অপরাধ দমন বা অপরাধপ্রবণতা দূর করা যায় না। মানুষ গাফিলতি করে আল্লাহর হক আদায়ে বিরত থাকে। আর লোভ-লালসা ও শক্তি-ক্ষমতার বশবর্তী হয়ে বান্দার হকসংশ্লিষ্ট অপরাধগুলোয় লিপ্ত হয়।
তওবার ভিত্তি হলো পরকালে বিশ্বাস এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিধানে অনুরাগ। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র এর শিক্ষা ও চর্চা ব্যাপকভাবে করা হলেই অপরাধমুক্ত হওয়া সম্ভব হবে। সবার মধ্যে ভালো কাজকে ভালো মনে করা এবং মন্দ কাজকে মন্দ মনে করার গুণ সৃষ্টি করা জরুরি। যেন ভালো কাজ করতে পারলে মনের গভীরে আনন্দ ও পরিতৃপ্তি আসে আর মন্দ বা গুনার কাজ হয়ে গেলে মনে যন্ত্রণা হয় এবং ইস্তেগফার তথা ক্ষমা চাওয়ার মনোভাব সৃষ্টি হয়।
আসুন আমরা এ দোয়াটি বেশি বেশি করি- হে আল্লাহ! আমাকে ওই লোকদের অন্তর্ভুক্ত করুন যারা যখন নেক কাজ করে খুশি হয় এবং যখন মন্দ কাজ করে তখন ইস্তেগফার করে, ক্ষমাপ্রার্থনা করে।