আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিউল উম্মি ওয়ালা আলিহি ওয়াসাল্লিম তাসলিমা। জুমার দিন উপরোক্ত দরুদ শরিফখানা পাঠ করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর ৮০ বার এ দরুদ পড়বে, তার ৮০ বছরের গোনাহ্ মাফ হবে এবং ৮০ বছর এবাদতের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে। প্রশ্ন হয় যে, আল্লাহতায়ালা এ ছোট আমলের জন্য এত বেশি সওয়াব কেন দান করেন? এর উত্তর হলো, কোনো আমলে সওয়াব কম দেওয়া বা বেশি দেওয়া এটা আল্লাহতায়ালার নিজস্ব ব্যাপার, এখানে কারও আপত্তি করার কিছু নেই।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সওয়াব
প্রথমে নামাজ পঞ্চাশ ওয়াক্ত ফরজ করা হয়েছিল। তারপর আল্লাহতায়ালা বান্দার ওপর দয়া করে তাদের কষ্ট দূর করার লক্ষ্যে পাঁচ ওয়াক্ত করেছেন। কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো- আল্লাহতায়ালা আমাদের মহব্বত করেন, তাই আমাদের প্রতি দয়া করে নামাজ পঞ্চাশ ওয়াক্ত থেকে কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্তে এনেছেন। প্রশ্ন হতে পারে, এতে সওয়াবও তো পঁয়তাল্লিশ ওয়াক্ত কমে যাবে। যদি সওয়াব কমে যায়, তাহলে তিনি আমাদের প্রতি কেমন দয়া করলেন? মহব্বত ও দয়ার দাবি তো এই যে, আমরা নামাজ যদিও পড়ব পাঁচ ওয়াক্ত, সওয়াব পাব পঞ্চাশ ওয়াক্তেরই। তাই আল্লাহতায়ালা মহব্বত ও দয়াও প্রকাশার্থে ঘোষণা করেন যে, তোমরা নামাজ পড়বে পাঁচ ওয়াক্ত, কিন্তু তোমাদের সওয়াব দেওয়া হবে পঞ্চাশ ওয়াক্তের। নামাজ বেশি পড়লে শারীরিক কষ্ট হয়। তাই তোমরা পঞ্চাশ ওয়াক্তের পরিবর্তে পাঁচ ওয়াক্ত পড়বে। আর সওয়াব কমিয়ে দিলে আখেরাতে কষ্ট হবে, এ জন্য তোমাদের সওয়াব দেব পূর্ণ পঞ্চাশ ওয়াক্তের।
ইসলামে কোনো স্বেচ্ছাচারিতা নেই
আল্লাহ সর্বশক্তিমান, তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন ও করতে পারেন। তবে তার মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতা নেই। অতীতের ইতিহাসে দেখা যায়, স্বেচ্ছাচারীদের তিনি পছন্দ করেননি। স্বেচ্ছাচারী যেই হোক না কেন? চাই মুসলমান হোক বা কাফের। তিনি সর্বদা মজলুমের পাশে দাঁড়ান। এটা হলো আল্লাহর বিধান। আল্লাহ্র বিধানের কোনো পরিবর্তন নেই, নেই বিন্দু পরিমাণ শিথিলতা। দৃষ্টান্ত স্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, কোনো এক রণাঙ্গনে হজরত উসামা বিন যায়েদ এবং খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাযি.) কৌশলগতভাবে জনৈক কাফেরের ওপর প্রবল হয়ে যান এবং তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তলোয়ার উত্তোলন করেন। এ মুহূর্তে সে কাফের লোকটি কালেমা পাঠ করে ইসলামের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে। কিন্তু অন্তর থেকে নয়। আত্মরক্ষার্থে কেবল কৌশলগত কারণে কালেমা পাঠ করেছে মনে করে সাহাবিদ্বয় তাকে হত্যা করেন। এ সংবাদ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৌঁছলে দয়ার নবী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন এবং বললেন, হে উসামা! হে খালেদ! তোমরা সর্বনাশ করেছ, তোমরা একজন মুসলমানকে হত্যা করে ফেলেছ। এখানেই শেষ নয়। তিনি আরও বলেছেন- হে আল্লাহ! উসামা ও খালেদ কালেমা পড়ার পরও লোকটিকে হত্যা করেছে। তাই আমি তাদের ব্যাপারে জানি না, আমি তাদের থেকে মুক্ত। তার মানে নবীজী ওই নির্যাতিত ব্যক্তির পাশে দাঁড়ালেন। যে খালেদ ইসলামের বিরাট শক্তি, যার নাম শুনে পারস্য ও রোম সম্রাটসহ সব কাফের গোষ্ঠী থর থর করে কাঁপে, নবীজী তার পক্ষ সমর্থন করলেন না। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদ্বয়কে জানিয়ে দিলেন- তোমরা কী জান না যে, আল্লাহতায়ালা জালেমকে পছন্দ করেন না। সে লোকটির ওপর তোমরা কেন জুলুম করলে? আল্লাহতায়ালা আমাদের জুলুম থেকে হেফাজত করুন!
লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।