ইফতার, প্রতিটি রোজার সফল সমাপ্তির অনুসঙ্গ। মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ নিয়ামত। এটি পালন শুধু কর্তব্য নয়, আনন্দও বটে। এতে আল্লাহর প্রতি উনার বান্দাদের আনুগত্যের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়। রমজান মাসেই রয়েছে সংযম শিক্ষার সুবর্ণ সুযোগ। তাই এ মাসের পবিত্রতা রক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব। সারাদিন রোজা রেখে যে ব্যক্তি সবার সাথে ইফতারে অংশ নেয়, মহান আল্লাহ তা'য়ালা নিজ হাতে তাদের পুরস্কৃত করেন। আর সেই সওয়াবের আশায় মানুষ সব কিছু ভুলে গিয়ে একত্রিত হয় পবিত্র মক্কা আল মুক্কারামার মসজিদুল হারাম ও এর খোলা চত্বরে। এ যেন ধনী-গরীবের এক মিলনমেলা!
পবিত্র এ নগরীর রোজাদারগণ একে অপরের জন্য ইফতার পরিবেশন করেই যেন বড় তৃপ্তি লাভ করেন। পুরো রমজান মাসজুড়েই সব ভেদাভেদ ভুলে মক্কার পথে প্রান্তরে এবং ইসলামের শীর্ষ ধর্মীয় পবিত্র স্থান মসজিদুল হারামে ইফতার সরবরাহ সকল মুসলমানের জন্যই অন্যতম শ্রেষ্ঠ সওয়াবের কাজ। মসজিদুল হারামে ইফতার গ্রহণও অন্যতম পূণ্য ও সওয়াব। মহান আল্লাহ রাব্বুলকে খুশি করার বাসনাকে সামনে নিয়েই মক্কা নগরীর হাজার হাজার মানুষ ছাড়াও পবিত্র ওমরাহ করতে আসা গোটা বিশ্বের অগণিত মুসলমানও যার যার সামর্থ অনুযায়ী ইফতার সামগ্রী নিয়ে ছোটেন মসজিদুল হারামে। ইফতার সামগ্রীতে রয়েছে সৌদি আরবের ঐতিহ্যবাহী খেজুর আর খোরমার পাশাপাশি রুটি, প্যাকেটজাত বিভিন্ন ফলের জুস, দুধ, মাঠা, ঐতিহ্যবাহী গাওয়া, কলা, মাল্টা, আপেল ও আঙ্গুরসহ নানা ধরনের পুষ্টিকর ফলমূল। তবে সব কিছুর আগে অপরিহার্য পবিত্র জমজম কূপের পানি।
আসরের নামাজের পরেই মসজিদুল হারামের ভেতরে ও বাইরে ইফতার আয়োজন শুরু হয়ে যায়। এ সময় থেকেই জমজমের সুস্বাদু ঠাণ্ডা পানির কন্টেইনার ও গ্লাস মসজিদের বিভিন্ন অংশে স্থাপনসহ দস্তরখান বিছিয়ে একের পর এক লাইন করে ইফতারী সাজানো শুরু হয়। ছোট-বড় ধনী-গরীবের ভেদাভেদ ভুলে সবাই একাকার হয়ে যান পবিত্র কাবা ঘরের খোলা চত্বর ও মসজিদুল হারামের ভেতর বাইরের ইফতারের মজলিসে। অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান মসজিদুল হারামের বিভিন্নস্থানে রোজাদারদের খোঁজে ছোটাছুটি করতে থাকেন ইফতারীর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত। যার মধ্যে সৌদি প্রবাসী অনেক বাংলাদেশি মসজিদুল হারামে রোজাদারদের ইফতার পরিবেশনে অংশ নিচ্ছেন। কাউকে দেখলে ছুটে আসছেন “ভাই আসুন আমরা একসাথে ইফতার করি” এ ধরনের সম্বোধন নিজ দেশের ছাড়াও ভিন দেশী রোজাদারকেও নিয়ে যান ইফতারীর আয়োজনে।
ইসলামের অন্যতম মূলমন্ত্র সাম্য ও মৈত্রীর আদর্শে মসজিদুল হারামের ভেতরে-বাইরে ও পবিত্র কাবার ঘরের খোলা চত্বরে ইফতার করছেন। কিন্তু এ অগণিত মানুষের ইফতার সামগ্রী নিয়ে নেই কোন কাড়াকাড়ি। নেই কোন বিশৃঙ্খলাও। বিশ্বের বৃহত্তম এ ইফতার মাহফিলের ইফতার সামগ্রী কোথা থেকে আসছে, তার সঠিক কোন হিসেব নেই কারো কাছে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের নির্দেশে রোজা রেখে, উনারই নির্দেশে ইফতারীর মাধ্যমে এক কাতারে বসে খাবার গ্রহণ করার এ নিদর্শন বিশ্বের অন্য কোন ধর্মে বিরল হলেও, ইসলাম এ ভ্রাতৃত্ববোধ ও সৌহার্দেরই শিক্ষা দিয়েছে। আর সেই কারণে ইসলামের পবিত্র স্থান মক্কার মসজিদুল হারাম এবং কাবার চত্বর এখন গোটা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা ও বর্ণের মুসলমানদের অপূর্ব মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে। পবিত্র কাবাঘর সত্যিই সব ভেদাভেদ ভুলে সকলকে এক করে দিয়েছে। এ যেন এক মহা মিলন মেলা!
বিডি-প্রতিদিন/২৮ জুন, ২০১৫/মাহবুব