আজ ছাড়ছে সর্বশেষ হজ ফ্লাইট। হজ অফিসের আশঙ্কা, শেষ পর্যন্ত প্রায় চার হাজার যাত্রীর হজযাত্রা অনিশ্চিত হতে পারে। বহু হজযাত্রীর কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে হজ এজেন্ট ও মধ্যস্বত্বভোগীরা। ভিসার কথা বলে অন্তত এক থেকে দেড় হাজার হজ গমনেচ্ছুর কাছ থেকে কোটি টাকা নিয়ে ভিসার জন্য তারা আবেদনই করেনি। ভিসাপ্রাপ্ত হজযাত্রীদের সৌদি পাঠাতে এজেন্সি মালিকরা শুরু করেছেন টালবাহানা।
মধ্যস্বত্বভোগী দালাল চক্র প্রায় দেড় হাজার হজযাত্রীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে এজেন্সিকে দেয়নি। ফলে এজেন্সি টিকিট কাটছে না। প্রতারণা করে মধ্যস্বত্বভোগী ও অনেক এজেন্সি মালিক লাপাত্তা হয়ে গেছেন। এ অবস্থায় প্রতারিত হজযাত্রীরা জড়ো হচ্ছেন আশকোনার হজক্যাম্পে। সেখানে প্রতারিত হজযাত্রীদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ। অভিযোগের পাহাড় জমছে হজ অফিস ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ে।
কিন্তু দ্রুত কোনো প্রতিকার করতে পারছেন না কেউ-ই। প্রতি বছরই হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে উঠছে হজযাত্রীদের জন্য নিম্নমানের লাগেজ ক্রয়, ভিসা-টিকিট নিয়ে টালবাহানা, মক্কা-মদিনায় বিলম্বে বাড়ি ভাড়া করা, নির্ধারিত দূরত্ব থেকে দূরে এবং নিম্নমানের বাড়ি ভাড়া করা, ঠিকমতো খাবার না দেওয়া, চুক্তিহীন বাড়িতে গাদাগাদি করে হজযাত্রীদের রাখা, দেরিতে মুয়াল্লিম নেওয়া, হজযাত্রীদের খোঁজখবর না নেওয়াসহ অগণিত অভিযোগ। কিন্তু কোনোই প্রতিকার হয় না। হজ মৌসুম চলে গেলে সবাই বেমালুম সবকিছু ভুলে যান।
জানা গেছে, শেষ মুহূর্তে রাজধানীর আশকোনার হজক্যাম্পে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হজযাত্রীরা জড়ো হচ্ছেন। তাদের অনেকে আসছেন বিভিন্ন এজেন্সির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে। অনেকের অভিযোগ, হজ এজেন্সিকে টাকা দিয়েও ভিসা ও টিকিট পাননি। কারও অভিযোগ, এজেন্সি যোগাযোগ করছে না। গতকাল একজন মুয়াল্লিমও আসেন এজেন্সির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে। হজ অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, অসংখ্য অভিযোগ। গতকালই প্রায় ৬০০টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকা নিয়েছে ভিসা হয়নি। ভিসা হয়েছে টিকিট হয়নি। ভিসা টিকিটের কথা বলে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। এখন তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এজেন্সি অফিস বন্ধ। ফোন বন্ধ।
এমন নানা অভিযোগ। নিবিড় হজ-ওমরাহ অ্যান্ড ট্যুরিজম, ইকো এভিয়েশন, ইউরো এশিয়া ট্রাভেলসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর বলে জানান হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তাসলিম। তিনি বলেন, পাঁচ শতাধিক সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছি। গতকাল হজ অফিসে এসে প্রতারিত কয়েকজন হজযাত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের অভিযোগ, নিবিড় নামে একটি এজেন্সি সুস্থ হজযাত্রীকে অসুস্থ দেখিয়ে অন্য ব্যক্তিকে রিপ্লেসমেন্ট করে হজে পাঠিয়েছে। এ রকম প্রায় ৪০ জনকে ওই এজেন্সি হজে পাঠিয়েছে।
হাজী সংগ্রহকারী আজিজুল হাকিম মতিন জানান, তিনি এবার ৮৭ জন হজযাত্রী সংগ্রহ করেছেন। ঢাকার হজ এজেন্সির নিবিড় হজ ওমরাহ অ্যান্ড ট্যুরিজম এবং ক্লাব ট্রাভেলসের মাধ্যমে তাদের নিবন্ধন করেছেন। এই দুই এজেন্সিকে প্রায় দুই কোটি টাকা পরিশোধও করেছেন তিনি। কিন্তু ধোঁকা দিয়েছে এজেন্সি। মাত্র ৩৩ জন হজযাত্রীকে সৌদি পাঠিয়ে উধাও হয়েছে ওই এজেন্সির লোকজন। সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছে তারা।
শুধু মতিন নয়, তার মতো আরও কয়েকজন মুয়াল্লিমকে একই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে দেখা গেছে হজক্যাম্পে। সংশ্লিষ্ট এজেন্সির লোকজন তাদের টাকা আত্মসাৎ করে কেটে পড়েছে বলে তাদের অভিযোগ। গতকাল বেলা ১১টায় হজ পরিচালকের অফিসের সামনে রাজশাহীর বানেশ্বরের মো. আতাউর রহমান কান্নাকাটি করেন। তিনি নিজেকে ইকো এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের একজন দলনেতা (গ্রুপ লিডার) দাবি করে বলেন, ২০১৫ সালে ২১ জনকে হজে নেওয়ার জন্য জনপ্রতি ২ লাখ ১০ হাজার টাকা তিনি ইকো এভিয়েশনকে দিয়েছিলেন। এজেন্সি ওই বছর পাঠাতে পারেনি। গত বছরও ঘুরিয়েছে। এবার জনপ্রতি আরও ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার পর ২১ জনের ভিসা করেছে। কিন্তু এখন টিকিট না দিয়ে জনপ্রতি আরও ৪০ হাজার টাকা দাবি করছে। যারা সরাসরি এজেন্সিকে টাকা দিয়েছেন তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
ময়মনসিংহের তারাকান্দার নাজিমউদ্দিনসহ আটজনের একটি দল হজক্যাম্পে আছেন। তারা জানান, ২০১৪ সালে ইউরো এশিয়া ট্রাভেলসকে জনপ্রতি ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়েছেন। ২০১৫ সালে নেয়নি। এবারও দুই দিন আগে এজেন্সির মালিক সৌদি আরবে চলে গেছেন।
যাত্রী ভোগান্তি এবং অনিশ্চয়তার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং হজ এজেন্সিগুলো পরস্পরকে দোষারোপ করে চলেছে। আর এর মাঝে পড়ে পিষ্ট হচ্ছেন হজযাত্রীরা। ৩১ আগস্ট পবিত্র হজ উদযাপিত হবে। আজ বাংলাদেশ বিমানের শেষ ফ্লাইট ঢাকা ছাড়বে।
বিডি প্রতিদিন/২৬ আগস্ট, ২০১৭/ফারজানা