শীতকালে সকাল-সন্ধ্যায় নামাজ আদায় কষ্টকর। কনকনে শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে অজু করতে আলসেমি লাগে। এ সুযোগে শয়তান মানুষকে নামাজ থেকে দূরে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করে। ঠান্ডার কষ্টকর মুহূর্তগুলো চোখের সামনে ভাসিয়ে আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার পাঁয়তারা করে। কিন্তু প্রকৃত মুমিন কখনই তার ফাঁদে পা দেয় না। তার ধোঁকায় নিজে পড়ে না। অলসতাকে প্রশ্রয় দেয় না। কারণ অন্যান্য নামাজের চেয়ে ফজরের নামাজের ফজিলত ও সওয়াব এমনিতেই বেশি। তা ছাড়া শীতের ভোরের নামাজের সওয়াব-মর্যাদা অন্যান্য নামাজ থেকে বেড়ে যায় শত গুণ। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুই ঠান্ডার সময়ের নামাজ আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ বুখারি। দুই ঠান্ডার সময়ের ব্যাখ্যায় হাদিসবিশারদরা বলেছেন, দুই ঠান্ডার নামাজ মানে এশা ও ফজরের নামাজ। শুধু ঠান্ডার কারণেই এ নামাজের সওয়াব ও ফজিলত বহুগুণ বেড়ে যায়। প্রচ- ঠান্ডার সময় অজু ও নামাজ আদায়কারীর জন্য বিশেষ সুসংবাদ ও পুরস্কার ঘোষণা করেছেন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যাতে শীতের সময় কেউ অজু করতে অবহেলা না করে। নামাজ আদায় করতে গাফিলতি না করে। তিনি বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন বিষয়ের সংবাদ দেব না যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেবেন (তোমাদের ক্ষমা করে দেবেন) আর (আল্লাহর কাছে) তোমাদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি করে দেবেন? সাহাবায়ে কিরাম বললেন অবশ্যই, হে আল্লাহর রসুল! নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, (শীত বা অন্য যে কোনো ঠান্ডায়) কষ্টকর মুহূর্তে ভালোভাবে অজু করা।’ মুসলিম। অন্যান্য সময়ের চেয়ে শীতের সময়ে নামাজ পড়ারও ফজিলত রয়েছে বহুগুণ। এমনকি এ বিষয় সম্পর্কে রয়েছে বিশেষ সুসংবাদ। হজরত আবু বকর ইবনু আবু মুসা (রা.) তাঁর বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুই শীতের (ফজর ও আসরের) নামাজ আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ বুখারি।
এ ছাড়া শীতকালে নফল রোজা রাখার বিশেষ সুযোগ রয়েছে। এতে দিন ছোট হওয়ার কারণে কষ্টও কম হয়। কারও কাজা রোজা বাকি থাকলে তা আদায় করার জন্যও শীতের দিন অতি উপযোগী। হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মুমিন রাতের নফল নামাজ আদায় করতে পারে এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে পারে।’ বায়হাকি।
অন্য হাদিসে এসেছে, শীতকাল এলে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, ‘হে শীতকাল! তোমাকে স্বাগত! শীতকালে বরকত নাজিল হয়; শীতকালে রাত দীর্ঘ হওয়ায় নামাজ আদায় করা যায় এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখা যায়।’ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল।’ মুসনাদে আহমাদ।
লেখক : মুহাদ্দিস, খাদিমুল ইসলাম মাদরাসা, কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ