শয়তান ভুল করেছিল এবং হজরত আদমও (আ.) ভুল করেছিলেন। শয়তানের ভুল তাকে নিপাত করেছে, জাহান্নামের অতলতলে ডুবিয়েছে, আর কোটি কোটি মানুষের ধ্বংসের কারণ হয়েছে। হজরত আদমও (আ.) ভুল করেছিলেন, কিন্তু তাঁর ভুল যেমন তাঁকে সম্মানের উচ্চ আসনে সমাসীন করেছে, তেমনি আদম-সন্তানের জন্য তা হয়েছে উন্নতির পাথেয় এবং উত্তম আদর্শ।
শয়তান অহংকার করেছিল, ক্ষমাপ্রার্থী হয়নি আর হজরত আদম (আ.) দীনতা-হীনতার সঙ্গে ক্ষমাপ্রার্থনা করে আল্লাহর প্রিয় পাত্রে পরিণত হন। আল্লাহ শয়তানকে সিজদা করতে বলেছেন, কিন্তু শয়তান আল্লাহর আদেশ অমান্য করে বিরূপ উক্তি করে বলল, আপনি আমাকে আগুনের দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আগুনের স্বভাব শির নত করা নয়; বরং উঁচু করা। আর আদমকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, মাটির স্বভাব হচ্ছে নতশির হওয়া, তাই আদম আমাকে সিজদা করতে পারে, আমি আদমকে সিজদা করতে পারি না। শয়তানের অহমিকা তাকে এরূপ উক্তি করতে উদ্বুদ্ধ করে।
অহংকারে বিবেক শক্তির বিকৃতি সাধিত হয়, শয়তানের তা-ই ঘটেছিল। তাই সে বিবেচনা করার যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সঠিক বিবেচনা করতে সক্ষম হয়নি। শয়তান নিজেই স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, তুমি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছ। তার মনে শয়তান আল্লাহর সৃষ্টি আর আল্লাহ শয়তানের স্রষ্টা। সৃষ্টির দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে স্রষ্টার আনুগত্য করা, তার গোলামি করা, তার বিরোধিতা করা নয়, প্রতিবাদ করা নয়। কিন্তু শয়তান অহংকারী ও বিবেকহারা হয়ে আল্লাহর সঙ্গে বিতর্কের অবতারণা করে এবং এর ফলে চিরতরে জাহান্নামি হয়।
হজরত আদম (আ.)কে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন। হজরত আদমের মধ্যে অহংকার না থাকায় তাঁর সঠিক ও জাগ্রত বিবেচনায় আল্লাহর অধিকার ও ক্ষমতা অনুধাবিত হয়, তাই তিনি কোনো প্রকার বিতর্কের অবতারণা না করে অতি দীনতা-হীনতার সঙ্গে আল্লাহর দরবারে ক্ষমাপ্রার্থী হন।
আল্লাহ হজরত আদমকে ক্ষমা করে দেন এবং মানব জাতির পিতার সম্মানে ভূষিত করে নবুয়তের তাজ মাথায় পরিয়ে বিশাল পৃথিবীতে স্বীয় খলিফা নিযুক্ত করেন; খিলাফত ও নবুয়তের এ ধারাবাহিকতাকে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বিশ্বনবী পর্যন্ত অব্যাহত রেখে বেলায়েতের ধারাবাহিকতা কিয়ামত পর্যন্ত বহাল রাখেন। ক্ষমার আদর্শ স্থাপন করে আদমসন্তানের জন্য মুক্তির পথ প্রদর্শন করেন।
আমরা মানুষ, আর মানুষের ভুল হওয়াই স্বাভাবিক। তবে ভুল করে অহংকারী হওয়া শয়তানি স্বভাব, আর ভুল করে তা স্বীকার করা, অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়া এবং ক্ষমাপ্রার্থনা করা সুষ্ঠু বিবেক-বুদ্ধির পরিচায়ক। আমাদের শয়তানের পথ বর্জন করে হজরত আদম আলাইহিস সালামের আদর্শের অনুকরণ ও অনুসরণ করতে হবে। আমাদের সার্বিক কল্যাণ এবং সফলতার পথ এটাই; অন্য কোনো পথ নয়।
লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ আল সিফাত