জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনি আচরণবিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যে আচরণবিধির খসড়া তৈরি করেছে সংশ্লিষ্ট কমিটি। নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে এই খসড়া অনুমোদন করলে সেই অনুযায়ী হবে আগামী সংসদ নির্বাচন। এক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়টি স্পষ্ট করে নতুন দফা যুক্ত করা হচ্ছে। ডিজিটাল প্রচারের সুযোগ রাখা হচ্ছে। পলিথিনের লিফলেট, প্লাস্টিক ব্যানার (পিভিসি ব্যানার) নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা থাকছে উপদেষ্টাদেরও জন্য।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন-পূর্ব সময় হিসেবে বর্তমানে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের সময়কে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে বিদ্যমান বিধিতে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আচরণবিধি প্রতিপালনে তিনটি সময় প্রস্তাব করা হচ্ছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে তিন ভাগে। সংসদের মেয়াদ শেষ থেকে তফসিল ঘোষণা সময়কে ‘নির্বাচন পূর্ব সময়; তফসিল ঘোষণা থেকে ফলাফল গেজেটে প্রকাশ পর্যন্ত ‘নির্বাচনকালীন সময়’ এবং গেজেট প্রকাশ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত ‘নির্বাচন পরবর্তী সময়’ উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া মনোনয়নপত্র জমায় প্রার্থীর সঙ্গে পাঁচজনের বেশি থাকতে পারবেন না-যুক্ত করা হচ্ছে বিধিতে। পলিথিনের লিফলেট, প্লাস্টিক ব্যানার (পিভিসি ব্যানার) নিষিদ্ধ করা হচ্ছে, প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা থাকছে উপদেষ্টাদেরও জন্য। ডিজিটাল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের সুযোগ থাকছে; এক্ষেত্রে আইডি দিতে হবে রিটার্নিং অফিসারের কাছেও। আর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারণা ব্যয় নির্বাচনি ব্যয়ে দেখাতে হবে। জানা গেছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় উসকানিমূলক ও মানহানিকর বক্তব্য হলে অর্থদণ্ডের পাশাপাশি ডিজিটাল/সাইবার সুরক্ষা আইনের আওতায় শাস্তি। মাইকের প্রচারের ৬০ ডেসিবেলের বেশি শব্দ নয়। আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়টি স্পষ্ট করে নতুন দফা যুক্ত করা হচ্ছে। দলগুলো আচরণবিধি মানবেন-প্রতীক বরাদ্দের আগে ইসিতে প্রত্যয়নপত্র দিতে হবে এবং প্রার্থীও বিধি মানবেন এমন প্রত্যয়নপত্র রিটার্নিং অফিসারের কাছে দিতে হবে। অঙ্গীকার না মানলে বিধিমালার শাস্তি মানতে বাধ্য হবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, পোস্টার, লেমিনেটেড পোস্টার নিয়ে পরিবেশবিদদের সুপারিশ আর সংস্কার কমিশনের সুপারিশ গুরুত্ব সহকারের বিবেচনা করছি আমরা। পোস্টারের বদলে এটা ব্যানারে থাকা যায় কিনা চিন্তা ভাবনা করছি। কমিশনের সিদ্ধান্তের পরে চূড়ান্ত হবে।
২ মার্চ ভোটার দিবসে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায় নিজ দলকেই নিতে হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রত্যেকটা দলের কাছ থেকে দলিলে সই নিতে পারে ঐকমত্য কমিশন। তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা অনেকটা সহজ হবে।
এদিকে নির্বাচনি প্রচারে সব প্রার্থী যাতে সমান সুযোগ পান তা নতুন আচরণবিধিতে নিশ্চিত করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইসি আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। তিনি বলেছেন, নির্বাচনি ব্যয় যথাসম্ভব ন্যূনতম রেখে এবং সুশৃঙ্খলভাবে প্রচারণা করার সুযোগ রাখা হচ্ছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড-সব প্রার্থী সমানভাবে প্রচার-প্রচারণা করতে পারবে- সে ধরনের এটিচিউড নিয়ে আমরা আচরণবিধি করতে চাচ্ছি। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, খসড়াটি প্রায় চূড়ান্ত। এখন নির্বাচন কমিশনে উপস্থাপনের প্রক্রিয়া নেওয়া হবে। ইসি অনুমোদন দিলে ফাইনালি পাবলিশড হবে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অধিকাংশ সুপারিশ প্রস্তাবিত আচরণবিধিতে যুক্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। ইসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভোটের প্রচার যাতে ‘নিয়ন্ত্রণের মধ্যে’ থাকে, সেই বিধানও খসড়ায় রাখা হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ কঠোরতা নিশ্চিতে শাস্তির বিধান খসড়ায় থাকছে।