রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) করা পৃথক দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। অবৈধ সুবিধা নিয়ে রাজধানীর গুলশানে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেছে দুদক। গতকাল সংস্থাটির ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদক উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম মামলাটি করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- রাজউকের সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা শাহ মো. খসরুজ্জামান এবং সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা-১ সরদার মোশারফ হোসেন। গতকাল বেলা ৩টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সংস্থার মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন একথা জানান। তিনি জানান, টিউলিপ ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোনো টাকা পরিশোধ না করেই অবৈধ পারিতোষিক হিসেবে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে ৫এ ও ৫বি নম্বর বাড়ির বি/২০১ নম্বর ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি নেন। গুলশান-২-এর ৭১ নম্বর রোডের ওই বাড়ির ফ্ল্যাটগুলোর বর্তমান নম্বর ১১এ ও ১১বি। এতে টিউলিপ সিদ্দিকসহ আসামিরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোনো টাকা পরিশোধ না করেই ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে ফ্ল্যাটগুলো দখল নিয়ে ও পরে রেজিস্ট্রি মূলে খতিয়ান গ্রহণ বা প্রদান করেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদকের ভাষ্য, সরকার থেকে ইজারা নেওয়া জমিতে জালজালিয়াতির মাধ্যমে এই ভবন তৈরি করা হয়। সেই ভবন থেকে অবৈধভাবে ফ্ল্যাট দখল করেন টিউলিপ সিদ্দিক।
এর আগে গত ১০ মার্চ পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার পরিবারে সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক আটটি চার্জশিট দিয়েছে দুদক, যা আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।
দুদক সূত্র জানায়, বিষয়টি অনুসন্ধানে দুদকের উপপরিচালক মনিরুল ইসলামের নেতৃত্ব সাত সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছিল। টিমের অপর সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এস এম রাশেদুল হাসান, এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর তার শাসনামলের নানা দুর্নীতির অভিযোগ বড় পরিসরে তদন্ত শুরু করে দুদক। এর অংশ হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত করছে সংস্থাটি।
যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়ার পর আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সিটি মিনিস্টার’-এর পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি।
আদালত সূত্র জানায়, গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের দেওয়া দুই মামলার চার্জশিট আমলে নেন। এর মধ্যে এক মামলায় ১২ জন ও অন্য মামলায় ১৭ জন আসামি। আসামিরা পলাতক থাকায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। একই সঙ্গে আসামিদের গ্রেপ্তার সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৯ এপ্রিল দিন ধার্য করেন আদালত। এনিয়ে দুদকের করা ছয় মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলো।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন- গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন ও সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপপরিচালক নায়েব আলী শরীফ, সাবেক সদস্য শফি উল হক, পরিচালক কামরুল ইসলাম, পরিচালক নুরুল ইসলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
এর মধ্যে শেখ হাসিনা, পূরবী গোলদার, আনিছুর রহমান, নাসির উদ্দীন, সামসুদ্দীন, নায়েব আলী, খুরশীদ আলম, শরীফ আহমেদ, শহীদ উল্লা, ওয়াছি উদ্দিন ও সাইফুল ইসলাম দুই মামলাতেই অভিযুক্ত। সেই হিসেবে দুই মামলায় মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলো।